Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটগল্পে আনোয়ার রশীদ সাগর

maro news
ছোটগল্পে আনোয়ার রশীদ সাগর

মুখোমুখি

রেজা সাহেব পত্রিকা হাতে পেলেই পাত্র চাই বিজ্ঞাপনটা দেখতে থাকে। দেশ-বিদেশের সংবাদ নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না। তার একটা বউ দরকার এবং সাথে কিছু টাকা অথবা কর্ম দরকার। যাতে বউকে নিয়ে পেট ভরে খেতে পারে। বাড়িতে দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বিল দেওয়ার ক্ষমতা তো তার নেই। তাই চায়ের দোকানে অথবা কোনো ঔষধের দোকানে গিয়ে একটু বিনয়ের সাথে বলে, ভাই প্লিজ পেপারটা? দোকানদাররা রেজা সাহেবকে দেখলে বুঝতে পারে, ভদ্রলোক পেপার পড়তে এসেছে, পেপারটা এগিয়ে দেয়। কোনো কোনো দিন, অন্য কোনো মানুষ পেপারটা পড়তে থাকলে, রেজা সাহেব নীরবে বসেই থাকে। তারপর সেই মানুষটার পড়া হলে রেজা সাহেব পেপারটা নিয়ে, একনজর পাত্র চাই এর পাতাটায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে টুকটুক করে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি যায়। বাড়ি বলতে উপজেলা শহরের দক্ষিণ দিকে, রাস্তার ধারে একটা টিনশেড বাড়ি। ছোট উঠানে একটা পেয়ারা গাছ। আর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এই তার বাড়ি। বিয়ের পরপরই ভেবেছিল, স্বামী-স্ত্রী মিলে, উঠানে ছোট করে একটা মূরগীর ফার্ম করবে। বাবা-মা গত হয়েছে বছর দশেক আগে। বিয়েটাও দিয়েছিল শরিফার সাথে। শরিফা বিএ পাশ মেয়ে। অকর্মা স্বামী তার পছন্দ হয়নি, চাকরি-বাকরি করে না। তার ইচ্ছেমত চলতে পারেনি রেজা সাহেব। তাই শরিফা ছোট ভাইয়ের হাত ধরে ঢাকা শহরে গিয়ে একটা কোম্পানীর অফিসে চাকুরি নিয়েছে। সেখানে কলিগ নেহালের সাথে বন্ধুত্ব হলে, একটা তালাক নামা রেজা সাহেবের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। রেজা সাহেব তালাক নামাটা পড়ে রেখে দেয়। এক বছর হয়ে গেলে, রেজা সাহেব পাত্রী খুঁজতে থাকে। একটা চাকুরি অথবা কোনো একটা কাজ তার দরকার। কিন্তু বাড়ি ছাড়তে পারে না। নরম ও মায়ার শরীর তার। ধীরে ধীরে ঘাড় নিচু করে হাঁটে। এলাকার অনেকেই তার এই ভদ্র চলাফেরায় হাসে। তবে মুরুব্বীরা সবাই বলে, ভালো ছেলে। তরুণ ডানপিঠে গুলো বলে, শালা পুরুষ না। সব শুনে-বুঝে রেজা সাহেব নীরবই থাকে। সে শুধু জানে মানুষের ব্যক্তি চরিত্র পরিবর্তন হয় না। সে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেনি। নেহাল চটপটে যুবক। কোম্পানীর অফিসের কাজ ছাড়াও একটা পত্রিকার বিজ্ঞাপন শাখায় কাজ করে। অনেকেই তাকে সাংবাদিক বলেও জানে। শরিফাও সেটাই জানে। শরিফার সাথে বন্ধুত্বের মাত্রা বাড়তে বাড়তে ঘনিষ্টতায় রুপ নেয়। শরিফা অফিস শেষে, ছোট ভাই ও ভাবীর কাছে এক বাসায় থাকে। এদিকে রেজা সাহেব একদিন একটি 'পাত্র চাই' এর বিজ্ঞাপনে যোগাযোগ করে। বিজ্ঞাপনটায় লেখা ছিল ত্রিশের উপরে বয়স হলেও হবে এবং নরম ভদ্র নামাজী ছেলে হতে হবে। নিজ উপজেলায় কাজ করতে আগ্রহী হতে হবে। এই নিজ উপজেলায় কাজের বিষয়টা রেজা সাহেবকে বেশ আগ্রহী করে তোলে। রেজা সাহেব মনে মনে ভেবেছিল নামাজ সময় মত পড়ে নিলেই হবে। এখনও তো মাঝে মাঝে পড়েই। যোগাযোগ করলে, রেজা সাহেবকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। রেজা সাহেব অনিচ্ছা স্বত্বেও বিয়ে এবং কর্মের আশায় ঢাকায় যায়। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছিয়ে আটতলায় উঠে যায়। ৬৩৬ নং রুমে ঝগড়া হচ্ছে, তুমি আমাকে দেখিয়ে আর কত টাকা আয় করবা? আমি আর এই পুরুষ মান্সের সামনে যাতি পাইরবু না। এটাই শেষ, ঠিক তো? নেহাল হোঁহোঁ করে হেসে বলে, আরে বাবা সেটা পরে হবে। আজকে অন্ততঃ কিছু টাকা কামিয়ে নেও তো। এরপর রুমের পর্দা তুলে পিওন নেহালকে ইশারা করে। পিওন বাইরে এসে, রেজা সাহেবকে সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। রেজা সাহেব হাত দিয়ে পর্দা তুলে রুমে প্রবেশ করলে, নেহাল খুবই আগ্রহ দেখিয়ে, উঠে দাঁড়িয়ে হাতে হাত দিয়ে বলে, আরে আসুন-আসুন। রেজা সাহেব রুমে ঢুকেই শরীফার চোখে চোখ পড়ে। শরীফা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। রেজা সাহেব চোখে ঘোর দেখতে পায়, বিয়ের শাড়ি পরে শরীফা ঘাড় নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register