মা। যখন সন্তানের মুখে স্তন গুজার কথা, দোলনায়
দোল তুলে ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনাবার কথা
দাসির হাতে দুধের বোতল দিয়ে মজেছো টিভি নাটকে, সিনেমায়।
বাবা। যখন সন্তান নিয়ে দৌড়-ঝাপ, লুকোচুরি, ফুটবল
এটা ওটা খেলাচ্ছলে কোলে তুলে চুমু বিলাবার কথা
পোষা কুকুরের শিকল ধরে ঘুরছো পার্কে-ময়দানে, ভালোবেসে
পিঠের লোমে বুলাচ্ছো হাত।
শিশুটা কাঁদছে একাকিত্বের যন্ত্রণায়, জানালার গ্রীলে
ঠুকছে কপাল। অথচ তোমরা বন্ধুবান্ধব আর
প্রিয় খুনসুটিতে কাটাচ্ছো দিন-রাত, ছেলেকে রেখে অবহেলায়।
তোমাদের সন্তান ঘরের দেয়ালে একটি দুটি অক্ষর
নচেৎ ফুল-পাতা-চিত্র এঁকে দাড়িয়েছে কুড়াতে প্রশংসা।
ভ্রুয়ের পাশে যন্ত্রণা এনে ভেবেছো- ধুর ছাই...
কেন এই জঞ্জাল পোষা! ঢের ভালো
নিঃসন্তান জীবনটা উপভোগ। অথবা তাকে শিশু-সেবাকেন্দ্রে
দেবে নির্বাসন আগামী মাসেই।
হুম... তোমাদেরকেই বলছি... শোন হে জননী এবং জনক
তোমাদের দুর্দিনে, ধরো... প্রবীণ বয়সে
হাতের লাঠি অথবা চশমা যদি হাত ফসকে নাক উপচে
পড়ে যায়, আসবে না কেউ ছুটে পুনরায় তুলে দিতে।
ছেলেটা পাশের ঘরে বউ নিয়ে মাতবে
হাসি-তামাসায়! তোমরা একা অন্ধকারে শক্তিহীন
সন্ধ্যাবাতি জ্বালাবার। পিঞ্জিরায় কাঠবিড়ালী, তাকে সময় সময়
খাবার দিতে ভুলবে না পুত্রবধু।
অথচ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে অষুধ সেবনে
প্রায়ই হবে ভুল। আর যদি বড়ো বেশি বোঝা হয়ে ওঠো
তোমাদের আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রম, শুধু বৃদ্ধাশ্রম।
২। হরতালে ঠক্ ঠক্ ঠক্
ঠক্-ঠক্-ঠক্- ‘আপনার ঘর করবো তালাশ, আছে নাকি
কোন আগ্নেয়াস্ত্র আলমারির আবডালে?’
ঠক-ঠক-ঠক- ‘দরজা খুলুন, আমরা পুলিশ, সরকারি লোক।’
পুলিশের জীপ নিঃশব্দে ছুটছে- আলিগলি, রাজপথ,
দোকান-পাট, পার্ক, রেস্তোরাঁ ও বস্তি পাড়ায়।
এক রাতে জীপ থামলো আমাদের ছাত্রাবাসে। পাশের ঘরে
দরজায় ঠক্-ঠক্-ঠক্, ঠক্-ঠক্-ঠক ্।
ভেতর থেকে আওয়াজ- ‘কে রে শালা,
মাঝরাতে এলি ঘুম ভাঙতে...?’ পুনরায়
একটু জোরে- ঠক্-ঠক্-ঠক্ ।
দরজা খুলে দাঁড়ালো গৌতম। হাত পা
কাঁপছে, মুখ শব্দহীন, সে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
তিনজন পুলিশ। একজন বললো- ‘শালাকে
জীপে তোল, বড় বদমাশ।’
‘স্যার, আমি জামাত-শিবির নই, জাত হিন্দু।’
‘কী প্রমাণ তার, প্যান্ট খোল
প্যান্ট খোল ব্যাটা- চেক করি ঠিকঠাক্।’
ভয়ে গৌতমের পেচ্ছাব ছুটবার অবস্থা, অণ্ডকোষ
চিমসে তলপেটে মিশেছে। ঘর তালাশ শেষে
মিললো রাধাকৃষ্ণের ছবি, দেবী দূর্গার মূর্তি। বেঁচে গেলো সে
এবার রাজুদের দরজায় বন্দুকের বাটের
সজোরে আঘাত। দরজা খুলতে বাধ্য ভেতরের দু’জন।
নেই জামাতি-শিবিরি প্রমাণ, ঘরে নেই ককটেল-পাটকেল
তবু হাতকড়া দুজনের হাতে। দরজা খুলতে দেরিটাই অপরাধ...!
জানালায় চুপিচুপি দাঁড়িয়ে
দেখছি সব। আমি নিরাপদ। বাইরে লাগিয়ে তালা
গ্রিলভাঙা জানালাটা টপকে ঘরেতে ঘুমাই।
পুলিশ ভাববে নেই কেউ। বাইরে ঝুলছে তালা, তাই
দরজায় বাজবে না ঠক্-ঠক্-ঠক্।
ঘটনা কী ঘটছে, কৌতুহলে উঁকি দিলো রমজান। দুইজন পুলিশ
ঢুকলো তার কামড়ায়।
টেবিলে কুরান, নবীজির জীবনী, অজস্র
ইসলামী বই আর টুপি। বিছানায় ভাঁজ করা জায়নামাজ।
‘শালা নিশ্চিত শিবির, দাঁড়ি দেখলেই যায় বুঝা’- একটা পুলিশ
বললো এবং জাপটে ধরলো তাকে।
ছেলেটা কেঁদেকেটে বলেছিলো- ‘আমি জামাত-শিবির নই, নেই
নিষিদ্ধ দলের সাথে যোগাযোগ। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ি শুধু।’
আরও দুটো রুম সার্চ। একজন আটক। তার মুঠোফোন
ঘেটেঘুটে পুলিশ পেয়েছে উলঙ্গ নারীর ছবি
নগ্ন ভিডিও। বেকসুর খালাস। এমন ভিডিও যারা দেখে
তারা জামাত-শিবির হতে পারে না।
একজন ছাড়া পেলো পকেটে প্যাকেট ভরা
সিগারেট ছিল বলে। ইসলামে ধুমপান নিষেধ। অতএব তিনি
হেফাজতে ইসলাম নন, পুলিশের জীপ তাকে করবে না বহন ।
ঠক্-ঠক্-ঠক্... কাল হরতাল। তাই এই ধর-পাকড়, যাতে
শান্ত থাকে দেশ; ককটেল-পাটকেল না ফাটে পথে।
0 Comments.