শ্যামলী বলল, আপনার মতো গুণী দর্শক তো আমি আর পাব না। তাছাড়া, বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
অরুণ বললেন, তাহলে নাচ দেখাচ্ছ কাকে?
শ্যামলী দুষ্টুমি করে বলল, ঘরেতে একজন এসেছে। নিশিকুটুম্ব।
অরুণ অবাক হয়ে বললেন, সে আবার হয় না কি? বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আর তোমার ঘরে বাইরের লোক? এটা বড্ড বেশি হয়ে গেল!
শ্যামলী বলল, আহা, আপনি যেন জানেন না, আমি অঘটনঘটনপটীয়সী!
অরুণ বললেন, য্যাঃ, আমি মোটেও বিশ্বাস করি না।
নকল দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্যামলী বলল, দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যাণ্ড আর্থ, হোরেশিও, দ্যান আর ড্রিমট অফ ইন ইয়োর ফিলজফি।
অরুণ রাগ করে বললেন, কোথা থেকে জোটালে নতুন নাগরকে?
শ্যামলী বলল, পথভোলা এক বিদেশী পথিক। শুনেছি আমেরিকা থেকে এসেছে!
অরুণ বললেন, এই তো, গুল দিতে শুরু করলে তুমি ঘনাদাকেও ছাড়িয়ে যাও!
শ্যামলী বলল, অরুণদা, ঘনাদার মতো গুল দিতে পারলে ভালই হত। সত্যি সত্যিই উনি আমেরিকার।
অরুণ বললেন, তো অতিথি সৎকারের কি ব্যবস্থা করলে?
শ্যামলী বলল, আমাদের বাঙালিয়ানা ডালভাত ওঁর তো রুচবে না। মাংস হয়েছিল। তো অন্তু এত খেয়েছে যে, নিজের ভাগেরটা তো বটেই, পিসির ভাগেরটাও সব খেয়ে নিয়েছে। আর রান্নাঘরের চাবি তো পিসির কাছেই।
অরুণ বললেন, তাহলে পালবাড়ির অতিথি নারায়ণ সারা রাত অভুক্ত থাকবে?
শ্যামলী বলল, স্ত্রীলোকের প্রেম কি জিনিস জানেন অরুণদা?
অরুণ রাগ করে বললেন, তোমার দিদিকে যখন বিয়েটা করেইছি, তখন প্রেম সম্বন্ধে নিশ্চয়ই কিছু জানি।
ইশশ অরুণদা, আপনি সেই চিরকালের ন্যালাখ্যাপাই থেকে গেলেন। বিয়ে করা বউ হল আপনার মতো ক্যাবলাকান্তর জন্য গার্জিয়ান। বৈষ্ণবশাস্ত্রমতে আসল প্রেম হল পরকীয়া। পরকীয়ার যে রস, স্বকীয়ায় তা আসে না।
অরুণ বললেন, বুঝেছি। তোর মাথায় কাল গিয়ে গাঁট্টা না মারলে চলছে না। খুব প্রেমপিয়াসী হয়ে উঠেছ!
শ্যামলী বলল, পিয়াসী বলে পিয়াসী? একেবারে স্ত্রীলিঙ্গের অষ্ট চরণ ষোলো হাঁটুর মতো পিয়াসী!
অরুণ থমকে গিয়ে বললেন, অষ্ট চরণ ষোলো হাঁটু? সে আবার কি?
শ্যামলী খিল খিল করে হেসে বলল, ঘটে যে কিচ্ছু নেই দেখছি! অষ্ট চরণ ষোলো হাঁটু মানে ঊর্ণনাভ বা আরো প্রাচীন ইঙ্গিতে ঊর্ণবাভ।
শ্যামলী বলল, কবিরা বলেন সুন্দরী শ্যালিকার হাতের কানমলা পর্যন্ত ভারি মিঠে! রবীন্দ্রনাথ সাক্ষী।
এমন সময় বাসন্তীবালা বাইরে থেকে বললেন, শ্যামলিমা, কার সাথে ফোনে কথা বলছিস রে?
অরুণকে শ্যামলী বলল, রাখুন রাখুন অরুণদা, মা আবার ভাববে আপনার মতো বুড়োর সাথে প্রেম করছি।
অরুণ রেগে বললেন, আমি বুড়ো? তোর সাহস তো কম না?
শ্যামলী বলল, কি জানি, বিয়ের আগে পুরুষ মানুষকে ব্যাচেলর বলে। বাংলা ভাষায় আইবুড়ো। সংস্কৃত ভাষায় অব্যুঢ়। তা আপনার তো তিন বছরের বেশি হল বিয়ে হয়েছে। আপনাকে তাই ব্যুঢ় বলছি। শক্ত সমর্থ বলিষ্ঠ পুরুষ মানুষকে লোকে ব্যুঢ়োরস্ক বলে। আর সরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলে, আপনাকে ব্যুরোক্র্যাট বলাই যায়। ছোটো করে ব্যুরো। শুনতে কি মিষ্টি না?
0 Comments.