Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ১৪৬)

maro news
দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ১৪৬)

পর্ব - ১৪৬

অরিন্দম দাশগুপ্ত বললেন, পার্ল এস বাক খুব বড় মাপের সাহিত্যিক।
শ‍্যামলী বলল, উনি তার থেকেও অনেক বড় মাপের মানুষ। অনেক অনাথ শিশু যাতে পরিবারের আদরের ছত্রছায়ায় মানুষ হতে পারে, তার জন্য উনি কাজ করতেন। নিঃসন্তান দম্পতি পেতো আদর করার একটি শিশু, যে তাদেরকে মা বাবা হিসেবে চিনবে, আর অনাথ বাচ্চারা পেতো বাবা মায়ের যত্ন। একটা বাচ্চার দত্তক নেবার ঘটনা ঘটলে, তিন তিনটে মানুষ প্রত‍্যক্ষভাবে উপকার হয়। নতুন বাপ মা দুজন, আর বাচ্চাটা নিজে।
বাসন্তীবালা নাক সিঁটকে বললেন, কি জানি বাপু, আমার আবার কিছুতেই পরের ছেলেকে নিজের বলে মানুষ করতে ভরসা হয় না। পর পর‌ই থাকে। রক্তের সম্পর্ক ব‍্যাপারটাই আলাদা।
শ‍্যামলী জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি করে রক্তের সম্পর্ক জিনিসটা আলাদা বলছ?
বাসন্তীবালা বললেন, তা রক্তের সম্পর্ক জিনিসটা আলাদা না হলে, সবাই পরের ছেলেকে মানুষ করত। তা কি কেউ করে? অজাত কুজাত চোর ছ‍্যাঁচড় ফেরেববাজ নোংরা মেয়েছেলে, কার না কার অবৈধ বাচ্চা, তাকে আবার ভাল করা যায়, ম‍্যা গো!
শ‍্যামলী বলল,  মা, রক্তের সম্পর্ক হলেই যদি বাপ মায়ের মতো হুবহু একরকম গুণী সন্তান জন্মাতো, তাহলে তো কথাই ছিল না। কিন্তু, তুমি দুঃখ পেতে পারো, বাস্তব জীবনে বাপ কা বেটা হয় না।
শশাঙ্ক বললেন, কেন হয় না?
অরিন্দম বললেন, জীনের কথা তো বিজ্ঞানীরা অনেক ভাবছেন। নিউক্লিক অ্যাসিডের কথা হয় তো জানো।
শ‍্যামলী বললো, আমি বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি এক‌ই বাবা মায়ের সন্তান, যারা এক‌ই রকম ডাল ভাত খেয়ে বড়ো হয়েছে, তাদের মধ‍্যেও আকাশ পাতাল ফারাক। এক‌ই বাবা মায়ের কোলে জন্মানো রাবণ আর বিভীষণ, দুজনে মেজাজে ভাবনায় রুচিতে কতোখানি আলাদা?
বাসন্তীবালা বললেন, পরের ছেলেকে মানুষ লোকে কোন্ ভরসায় করবে বলতে পারো অরিন্দম? শ‍্যামলী না হয় বাচ্চা মেয়ে, অতো শত ওর জানার কথা নয়। তোমার তো অনেক জানা বোঝা।
অরিন্দম ইতস্ততঃ করতে লাগলেন। তিনি জানেন, শ‍্যামলীর যুক্তির কাছে তিনি খড়ের কুটোটির মতো উড়ে যান।
শ‍্যামলী বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, নিজের বায়োলজিক‍্যাল বেবি হলেই সে ভদ্র সভ‍্য হবে, বাবা মায়ের কথা ভাববে, তাঁদের বয়সকালে দেখাশুনা করবে, এমন কোনো গ‍্যারান্টি আছে কি? মা , ওই যে তুমি বলছ, অনাথ ছেলে মেয়েরা দত্তক নেওয়া হলেও ভিতরে নোংরা সংক্রমণের জন‍্য চোর ছ‍্যাঁচড় গুণ্ডা বদমাশ ফেরেববাজ দেহপসারিণী ছাড়া অন‍্য কিছু হয় না, এটা কিন্তু ধোপে টেঁকে না।
গুণ্ডা বদমাশ ডাকাতদের পারিবারিক সম্পর্কের খোঁজ খবর নিয়ে দ‍্যাখো, খুব কম লোকেই দত্তক নেওযা সন্তান।
মা, একটা কথা খেয়াল রেখো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেমেয়েরা একজন‌ও কেউ কবিতা লিখতেন বলে শোনা যায় নি। আর বিদ‍্যাসাগর মশায়ের ছেলেও কোনো মহতী সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে শুনিনি। বাপ মায়ের সাথে ছেলেমেয়েদের মানসিক দিক থেকে একেবারেই মিল হয় না, তা নয়। তবে তা দৈবাৎ। কোনো চোর ছ‍্যাঁচড় জুয়াড়ি মাতাল গেঁজেল দেহপসারিণীর খবর নাও, দেখবে, অনেকেই ভদ্রলোকের সন্তান। এমনকি খেটে খাওয়া পরিবার থেকে এসেছে। বাপ মা কাউকে হাতে ধরে জুয়ো খেলতে শেখায় না। তারপর শ‍্যামলী বলল, বাবা, তুমি বলতে পারো, শিক্ষা দীক্ষা সংস্কৃতিচর্চায় বাংলার সেরা দুটো পরিবার কি কি?
শশাঙ্ক আনমনা হয়ে কি যেন আকাশ পাতাল ভাবছিলেন। অরিন্দম বললেন, এ তো সোজা প্রশ্ন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সত‍্যজিৎ রায়ের পরিবার।
শ‍্যামলী বলল, ঠিক বলেছেন। খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন, দুজনেরই পিতামহ দত্তক নেওয়া সন্তান। হ‍্যাঁ অরিন্দমবাবু, বিশ্বাস করুন, দ্বারকানাথ ঠাকুর আর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, দুজনেই দত্তক নেওয়া সন্তান।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register