সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে দীপশিখা দত্ত (পর্ব – ৫)

কাকাতুয়া বাড়ী

আমাদের দিদু

মার মুখে শুনেছিলাম,বাবার কোলে চড়ে কিংবা বাবার হাত ধরেই আমাদের এই কাকাতুয়া বাড়ীতে পাখী দেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত। তারপর কখন যে আমরা পরতে পরতে ওই বাড়ীর মানুষজনের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম নিজেরাও জানিনা। সাধারণত জেঠু,পিসীমাদের মা রা, ঠাকুমাই হন সম্পর্কে। কিন্তু কেনো যে ওনাকে ‘দিদু’ বলতাম আমরা তা নিজেরাও জানিনা বোধহয়! আসলেই ‘দিদু’দের সাথে ভালোবাসার জারণটা একটু বেশীই থাকে বলে, হয়তো!
শ্রীমতী ইন্দুমতী ঘোষকে আমরা যখন দেখেছি, তখন উনি একজন অশীতিপর বৃদ্ধা। অপূর্ব সুন্দরী। শঙ্খের মতো গায়ের রং, সারা শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে। চোখে ঘষা কাঁচের চশমা। দুহাতে একগাছি করে সোনার চুড়ি পরা। মাথার চুলও শনের মতো ধপধপে সাদা। ততোধিক সাদা হতো ওনার আটপৌরেভাবে পরণের থান কাপড়খানা। শাড়ীর নীচে সাদা লম্বা শেমিজ পরতেন। শীতকালে লম্বা হাতা আর গ্রীষ্মের সময়ে হাতকাটা শেমিজ। শেমিজগুলো অনেকটা এখনকার নাইটির মতো। প্রবল ঠান্ডায় শেমিজ আরামদায়ক হলেও গ্রীষ্মের দুপুরে কিভাবে ওই শেমিজ, সায়া, ব্লাউজ পরে থাকতেন জানিনা।
দিদুর ঘরে দক্ষিণের জানালায় রোদ আসতো। রঙীন ফুল তোলা সাদা ওয়াড় লাগানো মাথার বালিশ, গায়ের চাদর রোদে দিতেন দিদু। ওই জানলা থেকেই আমাদের উঠোনের দিকে চেয়ে কথা বলতেন। তখন বুঝতাম না, আজ বুঝি দিদুর গৃহবন্দী জীবনে, ওই দক্ষিণের জানালাটুকুই ছিলো একটুকরো মুক্তির আকাশ!ভেতরবাড়ীর নিজের ঘরটির দোতলার জানলায় দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন আর বাইরের দিকের খড়খড়ি লাগানো জানালার পাশে বসে রাস্তার মানুষ জন দেখতেন।
আমরা কখনো ওনাকে ঘর থেকে বের হতে বা কোনোদিন কোথাও যেতে দেখিনি। আমার ডাকনাম ছিলো ‘টুটুন’ কিন্তু, দিদু ডাকতেন ‘টুটুল’ বলে। ছোটবেলায় বেশ লাজুক টাইপের স্বল্প ভাষী ছিলাম আমি।দিদুরা ‘এলুম’,’গেলুম’,’খেলুম’ করে কথা বলতেন। বিশুদ্ধ নিরামিষ ভোজী সাত্ত্বিক বিধবা ছিলেন। আঁশ, নিরামিষ মানতেন ঠিকই কিন্তু কোনদিনই ছুৎমার্গের ধারধারেন নি।
ওই দিদুই আমাদের শিখিয়ে ছিলেন কেমন করে গরম রুটিতে ঘি মাখিয়ে খেতে হয়। সাদা ফুলকো লুচি, আর তারসাথে সাদা আলুর তরকারী আমরা ওবাড়ীতে চিনেছিলাম। পাউরুটি টোস্ট করে তাতে পুরু করে মাখম মাখিয়ে চিনি দিয়ে কেমন করে তারিয়ে তারিয়ে খেতে হয়! দিদু মাখনকে ‘মাখম’ বলতেন। লুচি পরোটা খাওয়াকে ‘ময়দা খাওয়া’ বলতেন। প্রথম প্রথম ভাবতাম ময়দা কি করে খায় মানুষ? পরে বুঝেছিলাম। ওবাড়ীতেই জেনেছি জ্বরের পরে মুখে অরুচি হলে, আলুমরিচ কত্তো ভালো লাগে!
খুব ছোটবেলায় দেখতাম দিদুকে রান্না করতে, কয়েকবছর পর আর চোখে ভালো দেখতেন না বলে, রান্না ঘরের দায়িত্ব মেজজেঠু নিজেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ছিলেন। চায়ে পিঁপড়ে, খাবারে চুল এসব থেকে যেতো বলে মা অন্ত প্রাণ ছেলেরা মাকে হেঁশেল থেকে ছুটি দিলেন। বড়জেঠু বাজার হাট করে এনে, সব গুছিয়ে গাছিয়ে রাখতেন, আর মেজজেঠু এক সুগৃহিণীর মতো সবদিকটা একাই সামাল দিতেন, এমনকি সেসময় মেজজেঠুকে উঠোনের কোনায় রাখা শিলনোড়ায় মশলা পিষতেও দেখেছি। প্রথম প্রথম দিদু সবজীপাতি কেটে দিতেন, দুএকবার সব্জী কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলায়,সে কাজেও ছুটি দেওয়া হলো দিদুকে। আর ছোটো জেঠুর মৃত্যুর পর উনি একেবারেই সংসারের কোনো খবরই রাখতেন না।
দিদুর শোবার ঘরে একটা বিশাল কালো রংয়ের আবলুশ কাঠের আলমারি ছিলো। দিদুর মুখেই শুনেছি, সে আলমারী নাকি ব্রিটিশ আমলের। সেই আলমারীতে ছিলো দিদুর গুপ্তধন। দিদুর পরনের শাড়ী জামাকাপড়, ঠাকুর, ঠাকুরের নকুল দানার কৌটো, ধর্মপুস্তক, লজেন্স-বিস্কুটের, নিমকির কৌটো, পুরানো ম্যাগাজিন, পুরানো খবরের কাগজ সবকিছুই সুন্দর করে গোছানো থাকতো। আলমারীর একটা পাশে আয়না বসানো ছিল, অন্য পাল্লাটা কাঠেরই ছিলো। আলমারির মাথাটায় বেশ বড়ো খোপ মতো করা ছিল, হাত বাড়িয়ে জিনিস উপরে তুলে দিলে বাইরে থেকে দেখা যেত না। আমার মনে আছে কারণ বড় জেঠু আমাকে অনেকবার চেয়ারে উঠিয়ে দিয়ে বলতেন,উপরে রাখা কিছু কাগজের প্যাকেট নামানোর জন্য।
আলমারির আয়না লাগানো অংশ দিয়ে দেখা যেত, ভেতরে অনেক ছোটো ছোটো খেলনা ছিল। মানে তখন খেলনা মনে হত আসলে ওগুলো ছিল সব ছোট ছোট শো-পিস…হাতির দাঁতের, মাটির, রবারের। আমার খুব লোভ হত। ওইসময় বিনাকা সিবাকা টুথপেস্টের প্যাকেটের ভেতরে ছোটো ছোটো রাবারের খেলনা থাকতো।সেগুলোকে যত্ন করে সাজিয়ে রাখতেন দিদু, দিদু মারা যাবার পর বড়জেঠু ওই ছোট্ট খেলনাগুলো আমাদেরকে দিয়ে মিৌদিয়েছিলেন।
পাশের পার্টের কাঠের দরজাটা ঢাকাই থাকতো, দেখতাম। কোনোদিন, কচ্চিৎ খোলা থাকলে দেখতাম ওখানে পরপর রাখা সাদা পরিস্কার ধবধবে দিদুর শাড়ি। আলমারীর সামনে অনেকটা জায়গা ছিল অনেকটা ড্রেসিং টেবিলের মত- চিরুনি,পাউডার রাখার জন্য। আলমারির গায়ে লাগানো ছিলো দুটো ডিজাইন করা কাঠের পিলার, যারা উঠেছিল আলমারির সামনের দুদিক থেকে শুরু হয়ে মাথা অব্ধি। পরে বুঝেছিলাম, ওই দুটো প্যাঁচানো খিলানের মতো পিলারগুলোই ছিল আলমারিটার অনন্য শোভা।
বাবা-মা, দিদুকে দিদিমণি ডাকতেন, ঠাকুমাও তাই ডাকতেন। আমার মনে হয় ‘দিদি’ ডাকটির ভালোবাসার পরিবর্তিত কোনো সম্বোধন ছিলো ‘দিদিমণি’।
আমাদের কখনো মনে হতো না, দিদু, আমার নিজের ঠাকুমার থেকে কোনো অংশে এতোটুকুও কম ভালোবাসতেন। আমাদের জন্য কতো রকমারী বিস্কুট যে জেঠুদের দিয়ে আনিয়ে রাখতেন তার ইয়ত্তা নেই। ওবাড়ীতেই জেনেছিলাম প্লেটে করে সুন্দর করে সাজিয়ে অনেকগুলো বিস্কুট নিয়ে একজায়গায় বসে সুন্দর করে একটু একটু করে তারিয়ে তারিয়ে খেতে হয়। আমরা খুব মধ্যবিত্ত ছিলাম তো! তাই বিস্কুটের, চকোলেটের যে বাক্স হয় তাইই জানতাম না! আমাদের বাড়ীতে কাগজের ঠোঙ্গা বা বড়োজোর রাংতার প্যাকেটে বিস্কুট আসতো। টিনের বাক্সে চকোলেট, বিস্কুট আমরা তখনো দেখিনি। ওবাড়ীতেই প্রথম দেখলাম।
কখনো কখনো পুতুল নিয়ে ওবাড়ীতে গেলে, দিদু নিজের পুরানো রঙীন শাড়ী ছিঁড়ে পুতুলের শাড়ী বানিয়ে দিতেন, পুতুলকে পরানোর জন্য। ব্রিটানিয়া বিস্কুটের টিনের বাক্স দিয়েছিলেন পুতুলের শাড়ী রাখার জন্য। রাংতা, পুঁতি দিয়ে পুতুলের গয়না বানানো শিখিয়েছেন।
আসলে আমরা ছোটো হলেও, ওবাড়ীতে আমাদের মনের দিক দিয়ে ছোটো ভাবা হতো না। বিস্কুট দেওয়া নেওয়ার বিষয়টি আমাদের দু’পক্ষেরই খুব প্রিয় ছিলো বলে ছোটজেঠু সেই মুহূর্ত টাকেই সেলুলয়েড বন্দী করেছিলেন।
একবার মনে আছে, আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি।বাড়ীর সামনে স্কুল, তাও ঘন্টা পড়ে গেছে বলে দৌড়ে যাবার সময় গাছের গুঁড়িতে পা আটকে পড়ে গিয়ে কনুইয়ের কাছটায় চামড়া কেটে প্রায় হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। তখন কাটাছেঁড়ায় একমাত্র ওষুধ ছিলো লাল ওষুধ (মারকিউক্রোম)। আর মারাত্মক হলে বোরিক কম্প্রেস করে শিবাজল ট্যাবলেট গুঁড়ো করে লাগানো। বোরিক কমপ্লেক্সের নাম শুনেই তো আমার কান্না শুরু! এদিকে হাতের ঘা ক্রমশঃ পেকে উঠতে শুরু করেছে দেখে বাবা বললেন,
“ওকে আর ছাড়া যাবেনা।”
দুপুর বেলা দুপায়ের ফাঁকে বাবা চেপে ধরলেন, আর মা গরমজল দিয়ে বোরিক কম্প্রেস করে দিচ্ছে, এক দুবার দিয়েছে কি দেয়নি, আমি চিল চিৎকার জুড়েছি। দোতলার ঘরে থেকে সেই চিৎকার শুনে দিদু চুপিচুপি নিজেদের পেছনের দরজা দিয়ে, আমাদের বাড়ীর পেছন দিয়ে, উঠোনে এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। যে মানুষটা একপাও বাড়ী থেকে বের হন না,সেই মানুষ ‘গু’ বন পেরিয়ে চলে এসেছেন আমাদের বাড়ীর ভেতরে। ‘গু’ বন কারণ তখন সব বাড়ীগুলোর খাটাপায়খানা থাকতো বাড়ীর পেছনে দিকে আর বিহারী পট্টির বাচ্চারা কেউ বাড়ীতে হাগু করতো না, রাস্তার পাশে ড্রেনেই চলতো পেটখালি করার কাজটা!
এসেই মা বাবাকে বকুনি,
“তোমরা এইভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছো! বোরিক কম্প্রেস কি করে করতে হয় তাও জানো না?”
ওরা ঠিকই দিচ্ছিল কিন্তু আমিই তো ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিলাম, সেটা আর কে বলে? দিদুকে দেখেই জাপ্টে ধরে আমার সে কি কান্না! আমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করে তবে বাড়ী গেলেন।
সেই থেকে ছোটখাটো কিছু হলে আমরা আর বাড়িতে না বলে ওবাড়ীতেই বলতাম। আমাদের বাড়ীতে ব্যবহার হোতো ডেটল আর জেঠুরা,দিদু সুন্দর করে লাল ওষুধ লাগিয়ে দিতেন। শীতকালে হাতে পায়ে গ্লিসারিন লাগিয়ে দিতেন।
ছোট জেঠু মারা যাবার পর দিদু ওপর থেকে নীচে কমই নামতেন,আমরাই তরতর করে বড়ো বড়ো সিড়ি ডিঙিয়ে ওপরে দিদুর ঘরে চলে যেতাম। আস্তে আস্তে দিদু দৈনন্দিন ও সাংসারিক জীবন থেকে নিজেকে একদমই গুটিয়ে নিলেন। দৈনিক খবরের কাগজ পড়া, গীতাপাঠ আর আমাদের সাথে একটু আধটু গল্প গুজব করেই দিন কাটতো দিদুর। চোখে ঘষা কাঁচের চশমা পরে দিব্যি কাগজ পড়তেন দুপুরের রোদে, জানলার পাশে বসে।
দিদুর ঘরে একটা বিশাল রেডিও ছিলো। সেটায় যখন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় গমগমে গলায় বলা শুরু করতেন, “আকাশবাণী কলকাতা! খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের বিশেষ বিশেষ খবর —-” সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ করে বসতে ইশারা করতেন। আমরা বুঝে যেতাম খবর শুনতে হয়,খবর শুনে অনেক কিছু ঘরে বসেই জানা যায়! আবার ফি রবিবার সকালে পার্থ ঘোষের গল্পদাদুর আসরের আগে থেকেই রেডিওর সামনে আমাদের জন্য দুটো বেতের মোড়া পাতা থাকতো। আমরা বিস্কুট খেতে খেতে শুনতাম গল্পদাদুর গল্প। আমাদের শিশুমনে সংস্কৃতির বীজ বোধকরি সেসময়ে ওবাড়ীতেই বোনা হচ্ছিলো। আমি একদিন না গেলে,পরদিন দিদু জানতে চাইতেন,
“কাল এলে না যে বড়ো! শরীর খারাপ হয় নি তো?”
আস্তে আস্তে আমাদের উঁচু ক্লাস হতে থাকলে, পড়ার ফাঁকি মারার জন্য দিদুর খবর নেবার অছিলায় কাকাতুয়া বাড়ীতে গিয়ে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আসতাম। মা,- বাবা বাড়ীর বাইরে গেলে, ঠাকুমা বাড়ীতে না থাকলে আমাদের ওবাড়ীতে রেখেই বাবা-মা নিজেদের কাজে যেতেন। আসলে তখনকার সমাজে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ শব্দগুলোর এতো সহজভাবে ব্যবহৃত হতো না। আর সত্যি কথা বলতে কি! আমরা আরো অনেক অনেক বড়ো হয়ে শব্দগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝেছি। আজ আমারো মনে হয়, ভাগ্যিস! আমাদের মা ঠাকুমারা গুডটাচ ব্যাডটাচ জানতো না বা শেখায়নি!
আমাদের মনের প্রসারতা, জ্ঞানের পরিধি, অজানাকে জানার আগ্রহ সেই বয়সেই উস্কে দিচ্ছিলেন। আমার ডাক্তার ঠাকুর্দা, তাঁর বিনামূল্যে গরীবদের জন্য চিকিৎসার গল্প, ওই সামান্য বয়সেই তাঁর প্রতিপত্তির গল্প শুনতাম দিদুর কাছে।
কাগজের বিশেষ কাটিংগুলো দিদু রেখে দিতেন আমাদের পড়ার জন্য। আমার মনে আছে, আমার বি এড পড়ার সময় ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা হয়। সারাদেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা। সেদিনের আনন্দবাজারপত্রিকা খানা আর আলমারীর খুলে একখানা বহু পুরানো খবরের কাগজ বের করে, একসঙ্গে করে বলেছিলেন,
“এসো টুটুল! তোমায় একটা জিনিষ দেখাই।
এই দ্যাখো,যেদিন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজী মারা যান এটা তার পরদিনকার কাগজ আর এটায় গতকাল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর কথা লেখা আছে। দুটো কাগজই আমি তোমায় দিলুম, যত্ন করে রেখো!”
আমি হাত পেতে কাগজ দুটো নিয়ে পড়ে অভিভূত হয়েছিলাম। মাত্র কুড়ি বছরের ব্যবধানে ঘটা দুটি মৃত্যু ও দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ণ করতে আমি শিখেছিলাম একুশ-বাইশে। বিএড কলেজের ম্যাগাজিনে এটা নিয়ে আমার একটা লেখাও ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিলো যেজন্য আমি আজো কৃতজ্ঞ দিদুর কাছে। তবে দিদুকে দেওয়া কথা আমি রাখতে পারিনি। ওনার অতো যত্নে রাখা কাগজ দুটিকে আমি সযত্নে রক্ষা করতে পারিনি। জীবন জোয়ারের স্রোতে ভাসতে ভাসতে তারা কবে যে হারিয়েছে টেরও পাইনি।
সেইসময় দিদুর বয়স প্রায় নব্বইয়ের কাছাকাছি। ধীরে ধীরে চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়, তবে ওনার বড়ো ও মেজ ছেলে ওনাকে ভগবানের মতো শ্রদ্ধা করতেন। ওনারা রত্নগর্ভা মাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অসম্ভব সেবাযত্ন করেছেন।
এরপরে আমাদের বাড়ী নতুন করে তৈরী করার জন্য ভেঙে ফেলা হয়, আমরা বেশ দূরে ভাড়া বাড়ীতে চলে যাই। সেখান থেকেই চাকরী নিয়ে কলকাতার বাইরে চলে যাই। সেখানে বসেই মায়ের চিঠিতে জানতে পাই বার্ধক্য জনিত কারণে দিদু আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।