Cafe কলামে ডঃ সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য – ৩

ফুরসত

১০১ নম্বরের জন্মবৃত্তান্ত

গোটা তিলোত্তমা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ইতিহাস আর নস্টালজিয়ার সমাহার । তবে আজ শহরবাসীর যে ভরসার নম্বর ‘১০১’ তার জন্ম বৃত্তান্তই আজ বলবো । হ্যাঁ এই নম্বর দমকলের । কলকাতার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সেও নিজেকে এই গগনচুম্বী বাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে । কিন্তু এর এই নাম কেন ? শুরু কবে হলো ? আজ সবই জানাবো ।
সময়টা ১৮২০ সাল – ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা । প্রথমবার কলকাতায় ফায়ার সার্ভিস শুরু হল দুজন ইউরোপিয়ান কনস্টেবল এবং ২৩৪ জন খালাসি ও ভিস্তিওয়ালা নিয়ে । কিন্তু বাঙালির কাছে তার পরিচিতি ঘটলো ‘দমকল’ নামেই— এই নামের ব্যাখ্যায় আসছি পরে । এই সময় কোনো গাড়ি ছিল না । এর ঠিক ৩০ বছর পর অর্থাৎ ১৮৭১ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের অধীনে মাত্র পাঁচটি ফায়ার ইঞ্জিন তৈরি করা হয় ; যার তিনটি ছিল ঘোড়ায় টানা গাড়ি । আর বাকি দুটি মানুষই টেনে নিয়ে যেত । বাস্তবিকই, তখন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা খুবই কম হত । তাই, গাড়িও ছিল কম ।

এবার আসি ‘দমকল’ নামের ব্যাখ্যায় — উত্তর কলকাতার হেদুয়ার মোড়ে দেখা যাবে লম্বাটে পুরনো জং ধরা জরাজীর্ণ একটা লোহার বাক্স । কিন্তু কি ছিল এতে ? যা ছিল তার আসল জিনিসটি ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় । লাল রঙের লম্বা, লোহারবাক্স । এটাই হল ‘দমকল’।

তখন টেলিফোনের চল ছিল না । আর আগুন লাগলে খবরটা ফায়ার সার্ভিস অফিসে দিয়ে আসতে আসতেই সব ভষ্মীভূত হতো । কিন্তু এ সমস্যার সমাধানে উপায় বার করলেন ক্যাপ্টেন বার্নার্ড অ্যান্সন ওয়েস্ট ব্রুক । ১৯১০ সালে শহরের প্রতিটা মোড়ে বসিয়ে দিলেন লম্বা লম্বা লাল লোহার পিলার । যার সামনের দিক একটি কাঁচ দিয়ে ঢাকা , আর ভেতরে থাকত একটি হাতল । এই পুরো বিষয়টির সঙ্গে সংযোগ থাকত নিকটবর্তী অফিসের । আগুন লাগলে , কেউ ওই কাঁচ ভেঙে হাতল ঘুরিয়ে দম দিলে সঙ্গে সঙ্গে খবর পৌঁছে যেত অফিসে । সেখান থেকে কর্মীরা তাড়াতাড়ি জায়গা বুঝে চলে যেতেন । ফলে সমস্যার সমাধান হয় । এই যে ‘দম’ দিয়ে ডাকা, সেই থেকেই কলকাতার ফায়ার সার্ভিসের ডাক নাম হয়ে গেল ‘দমকল’। শুধু কলকাতাতেই ১৫০-এরও বেশি এই লোহার কল বসানো হয় ।

১৮৭১ সালেই পাঁচটি জায়গায় দমকলের অফিস তৈরি করা হয় । লালবাজার , টালা, পামার’সব্রিজ, ভবানীপুর, ওয়াটগঞ্জ । ১৮৯৩ সালে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বাধীন হয় দমকল বিভাগ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কয়েকটা দমকল অফিস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কলকাতা ফায়ার ব্রিগেড এবং দার্জিলিং ব্রিগেড – এই দুটি অফিসই টিকে থাকে । পরে আবার নতুন করে তৈরি হয় । এবার বলি এই লাল রঙের কারণ । বিশ্বের সমস্ত ফায়ার সার্ভিসের দিকে তাকালে উজ্জ্বল লাল রং নজরে আসবে । বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয় । এমারজেন্সি সার্ভিসের জন্য লাল রংই প্রতীক ।
আজ দমকল আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে আরও আধুনিক হয়ে চলেছে । যদিও বিশ্বের পরিষেবার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলা । তাও কিছু ত্রূটি সত্ত্বেও তাঁরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে – তাই ভুল ভ্রান্তি যাই থাক এখনো কিন্তু বিপদের বন্ধু হয়ে আসে এই ১০১ নম্বরে ডাক দেওয়া মানুষগুলো । তাই আজ ২০০ বছর পেরিয়ে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।