কবিতায় বিজন মণ্ডল

২০১০ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি । বর্তমানে কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে নিয়োজিত । কবিতা লেখার পাশাপাশি ভৌতিক কাহিনী লেখা এবং পড়ায় বিশেষ আগ্রহী । প্রিয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

চন্দ্রাবতী

তিন তলা বাড়ির নীচের তলায়,
শেষের দিকে তেরো বাই চোদ্দো ফুটের ঘর,
বারো বছর আগে এই ঘরে তুলেছিলে ।
তখন আমার বয়স কুড়ি,
আর তোমার বোধহয় বাইশ ।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম,
কোলকাতা থেকে আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে ।
সঙ্গে পাত্রও আসবে…
পছন্দ হয়ে গেলে সামনের মাসেই বিয়ে !
মা ঘুম ভাঙিয়ে কানে কানে বলে গেল ।
পছন্দ হয়ে গেলেই বিয়ে ?
কথাটা শুনে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ।
বিয়েতে শুধু মাত্র পাত্র এবং পাত্র পক্ষের পছন্দ দরকার !
আমারও তো পছন্দ-অপছন্দ আছে !
অবশ্য আমাদের মতো গরিব ঘরের মেয়েদের আর পছন্দ-অপছন্দ !
বিকালে তোমরা এলে…
মা পরিপাটি করে সাজিয়ে দিল ।
ছোট কাকিমার হাত ধরে তোমাদের সামনে গিয়ে বসলাম ।
তুমি সবার মাঝে বসেছিলে…
আমিও এক পলক তোমাকে দেখেছিলাম ।
এক পলকে দেখাতেই কেন জানি তোমাকে খুব ভালো লাগলো ।
মনে আছে, তুমি আমার নাম জানতে চেয়েছিলে
আমি লাজুক চোখে কাঁপা ঠোঁটে শুধু বলেছিলাম
— চন্দ্রাবতী ।
নাম শুনে তুমিও লাজুক হেসেছিলে ।
আড় চোখে আমি দেখেছিলাম….
পরের দিন তোমার বাড়ি থেকে খবর এলো,
আমাকে তোমার খুব পছন্দ হয়েছে ।
তোমার বাড়ির অন্যদেরও…
আমি তো এটাই চেয়েছিলাম ।
তোমাকে দেখে আমার স্বপ্নের পুরুষ মনে হয়েছিল ।
তারপর থেকে প্রতিটা রাত্রি,
তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছি ।
তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি ।
সারাটা দিন উদাস মনে মেঘের আনাগোনা দেখতাম ।
আর মনে মনে ভাবতাম,
কবে আসবে সেই শুভক্ষণ !
তুমি আমাকে বধূ বেশে নিয়ে যাবে তোমার ঘরে !
এলে তুমি,
ঘোড়ায় চেপে রাজ পুত্রের মতো ।
আমার সমস্ত অহংকারকে পরাজিত করে
জয় করে নিলে আমাকে ।
আমাকে সিঁদুর পরিয়ে তোমার অর্ধাঙ্গিনী করে
নিয়ে গেলে আমায় ।
একদিন জ্যোৎস্না রাতে আমার হাত ধরে
জানালার পাশে নিয়ে গিয়ে বললে,
তোমার কখনো জানতে ইচ্ছে করে না ?
আমি তোমাকে কেন এতো ভালোবাসি !
আমি কিছু বলার আগেই তুমি বলতে শুরু করলে,
“আমি রোজ রাতে এই জানালার পাশে এসে বোসতাম
মোহময়ী ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়ে
রূপকথার রাজকন্যাকে খুঁজতাম ।
হারিয়ে যেতাম কল্পনার জগতে
ভাঙা ভাঙা মেঘ যখন চাঁদটাকে আড়াল করতো
খুব উতলা হয়ে যেতাম ।
মেঘের আড়াল থেকে যখন চাঁদ বেরিয়ে আসতো
মনটা নেচে উঠতো
ছুঁতে ইচ্ছে করতো চাঁদের সৌন্দর্যকে
কিন্তু কখনো ছুঁতে পারিনি ।
তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি
তোমাকে আমার সেই রূপকথার রাজকন্যা মনে হয়েছিল
তোমাকে নিয়ে ভাসতে ইচ্ছে হয়েছিল
দূর আকাশের ।
তোমাকে মেঘবালিকা রূপে পেতে ইচ্ছে হয়েছিল ।
তোমার রূপ সাগরে ডুবতে ইচ্ছে হয়েছিল ।
কতো কতো কবিতা লিখেছি তোমার নিয়ে !”
ডায়রির পাতা উল্টে অনুভব করি তোমার স্পর্শ
প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে তোমার ইচ্ছা গুলো খুঁজি ।
জানলা খুলে বিভোর হয়ে দেখি
তোমার রং মাখা চাঁদের আলো ।
শত শতাব্দীর পরেও এভাবে মাখবো
তোমার দেওয়া রঙের পসরা ।
আজ তুমি অনেক দূরে…
তবুও তোমার স্পর্শ পাই,
তোমার লেখা প্রতিটা কবিতায় ।
তুমি আজ দিগন্তের মৌন মিছিলে হাসো
আর আমি শুভ্র থানে তোমাকে জড়িয়ে ধরি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।