ক্যাফে অনুবাদ কাব্যে বেবী কারফরমা

লবণাক্ত জল

সুকেশ সাহনী (বরেলি, উত্তরপ্রদেশ )

বৃদ্ধ সগুনিয়া (যারা যাদুবলে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে) তার যাদুদণ্ড নিয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল তবে এ কাজে তার মন লাগছিল না। এই জমিতে পা দিয়েই সে তার অন্তঃদৃষ্টি দিয়ে দেখে নিয়েছিল সেসব গাছগুলোকে যেগুলো মিষ্টি জলে বেড়ে ওঠে। এখন লোক দেখানো কিছু একটা তো করতেই হবে। তার যাদুদণ্ড থেকে ঝুলন্ত পুঁটুলির দিকে তার তেমন দৃষ্টি নেই। তার দৃষ্টি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কালসার চেহারার বাচ্চাগুলোর দিকে, যাদের ঠিকরে বেড়িয়ে আসা গোল গোল গতিশীল চোখ দুটো ওদের বেঁচে থাকার প্রমাণ দিচ্ছিল। কোথাও কোন গ্রামবাসীকে দেখা যাচ্ছিল না, যতদূর নজর যাচ্ছিল শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ব্ল্যাক কমান্ডো । প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে আশেপাশের সমস্ত গাছগুলো কেটে দিয়েছিল।

একটা বড়ো ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী উৎসুক হয়ে সগুনিয়ার কাজকর্ম দেখছিল। গৃহ সচিব সহ বেশ কিছু ছোট বড়ো অফিসারও ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল।

কাজ শেষ করে সগুনিয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসে দাঁড়াল।

“তোমার যাদুদণ্ড কি বলছে?” গৃহ সচিব জিজ্ঞাসা করল।

“হুজুর, এখানকার মাটির নিচের সব জায়গার জল মিষ্টি” বৃদ্ধ বলল।

সচিব খুশী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে এখনও অসন্তোষ দেখাচ্ছিল। আরেকবার তার ফার্ম হাউসের জন্য জমি নির্বাচন করার সময় সে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করেছিল । জলের রাসায়নিক বিশ্লেষণও করিয়ে ছিল আর পরীক্ষার রিপোর্টও ভাল এসেছিল। কিন্তু ফার্ম হাউস তৈরি হতে হতেই জমির নিচের জল লবণাক্ত হয়ে গেল। শেষে উপায়ন্তর না দেখে তাকে আবার মিষ্টি জলের জমি হন্যে হয়ে খুঁজতে হচ্ছে।

“কিছুদিন পর আবারও জমির জল লবণাক্ত হয়ে যাবে নাতো?”

“মানুষের অশ্রুর বর্ষা বন্ধ না করলে, আবারও জল লবণাক্ত হয়ে যাবে।” বৃদ্ধ জমির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল।

“অশ্রুর বর্ষা?” সচিব চমকে উঠল।

“এমন কথা তো কখনও শুনিনি!” মুখ্যমন্ত্রী অস্ফুট স্বরে বলে উঠল।

“এই বর্ষার ব্যাপারে জানতে গেলে, মুখ্যমন্ত্রীকে অবশ্যই সেই কুয়োর জল পান করতে হবে যে কুয়োর জল জনতা পান করে।” এই বলে বৃদ্ধ যাদুদণ্ড কাঁধে রেখে গ্রামের পথে পা বাড়াল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।