কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে বিচিত্র কুমার (গুচ্ছ কবিতা)

১. ঝরা পাতার মায়া
হেমন্ত আসে যেন তোমার আগমনী বার্তা নিয়ে,
বাতাসে ঝরা পাতার শব্দে জেগে ওঠে তোমার চরণ ধ্বনি।
তোমার চোখের গভীরতা—শীতল নদীর নীল জল,
যেখানে রাতের তারারা ডুব দিয়ে হারিয়ে যায়।
তুমি যখন হাঁটো, মাটি যেন ধানের খেতের গান গায়,
তোমার প্রতিটি পদক্ষেপে ধূসর পৃথিবী সাজে সোনার মোহনায়।
তোমার হাসি এক টুকরো পূর্ণিমা,
যা ঘুমহীন রাতের আকাশেও সান্ত্বনা দেয়।
তোমার চুলের মৃদু ঘ্রাণ ধানের মঞ্জরি হয়ে আসে,
যা মেঠো পথে হেঁটে হেঁটে সুরের মতোন মিলিয়ে যায়।
তুমি জানো কি, তোমার ছোঁয়া উষ্ণতার এক আশ্বাস?
যেন হিম শীতল রাতে আগুনের লেলিহান শিখা।
ঝরা পাতার মতোই কি তবে আমাদের প্রেম?
যে ঝরে, তবু মাটির সাথে মিলে যায় নতুন প্রাণ হয়ে।
তুমি আর আমি মিলে এই হেমন্তকে আলোকিত করি,
যেন শূন্য মাঠে নামে কুয়াশার ভোরের শুভ্রতা।
এই প্রেমের মায়ায় বাঁধা পড়ুক প্রতিটি পাতা, প্রতিটি বাতাস,
যা ঝরে, তবু হারায় না—মিশে যায় জীবনের চিরন্তন সুরে।
২. চাঁদের আলোয় তুমি
হেমন্তের চাঁদ যেন তোমারই প্রতিবিম্ব,
ম্লান, শান্ত, তবু গভীর।
তোমার মুখের হাসি জ্যোৎস্নার মতোই স্বচ্ছ,
যা আকাশ থেকে ঝরে পড়ে পৃথিবীর অন্ধকারে আলো ছড়াতে।
তুমি যখন কথা বলো, মনে হয় ঝিঁঝি পোকার গান শুনছি,
যা নিস্তব্ধ রাতকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টায় মগ্ন।
তোমার চোখের চাহনিতে অজানা এক গল্প লুকিয়ে আছে,
যেন কুয়াশার চাদরে ঢাকা এক শূন্য মাঠ,
যার প্রতিটি কণা ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি।
তুমি যখন পাশে থাকো,
তখন রাতের প্রতিটি তারাও ঝুঁকে পড়ে তোমার মাধুর্যের দিকে।
তোমার হাসিতে জেগে ওঠে উষার আলো,
যা দূর থেকে হারিয়ে যাওয়া পথিককেও পথ দেখায়।
চাঁদের আলো তোমার প্রতিটি স্পর্শে মিশে থাকে,
তুমি আমার হৃদয়ের আকাশে হয়ে উঠো একমাত্র নক্ষত্র।
তুমি আর আমি মিলে হেমন্তের এই রাতগুলোকে পূর্ণ করি,
যেন পৃথিবী থেমে থাকে এই জ্যোৎস্নায় মোড়ানো সময়টুকুতে।
৩. উষ্ণতার গল্প
তোমার উষ্ণতা ছুঁয়ে গেলে মনে হয়,
যেন শুকনো মাটি ভিজে উঠছে প্রথম ফসলের বৃষ্টিতে।
তোমার চাদরের ঘ্রাণে আমি শীতের রাতে আশ্রয় খুঁজি,
যেন একটি পাখি তার নীড় খুঁজে পেয়েছে দীর্ঘদিনের পর।
তুমি পাশে থাকলে সময় থেমে যায়,
যেন হেমন্তের রোদ মিশে থাকে গাছের পাতায়।
তোমার চুলে মেঘের গন্ধ,
যা ছুঁয়ে যায় আমার প্রতিটি অনুভূতি।
তোমার স্পর্শে মনে হয় হিমেল হাওয়াও উষ্ণ হয়ে ওঠে,
যেন আকাশে ঝুলে থাকা কুয়াশা মাটির বুক ছুঁতে চায়।
তোমার হাসি হলো জ্বলন্ত প্রদীপের মতো,
যা ঘরকোণকে আলোকিত করে গভীরতম অন্ধকারেও।
আমাদের ভালোবাসা হেমন্তের মতোই—
মৃদু, কোমল, তবু গভীর।
যা প্রতিটি সন্ধ্যায় শীতল বাতাসে গুঞ্জরিত হয়,
যেন প্রকৃতির প্রতিটি ধ্বনি আমাদের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি।
তুমি আর আমি মিলে এই হেমন্তকে রাঙাই,
যেন প্রতিটি ঝরা পাতা হয়ে ওঠে প্রেমের নতুন উপমা।