T3 || Valentine’s Day Special || সংখ্যায় বিপ্লব দত্ত

ভলেন্টারি ডে

রসুলপুর গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা বট গাছ আর তাকে কেন্দ্র করে চাতাল। বিকেল হলেই সেখানে ছেলে ছোকরাদের আড্ডা। সঙ্গে থাকে রসিক নাগর কাকা যার নাম প্রেম কুমার দাস। কুমার তুলে দিয়ে গ্রামের মানুষ প্রেম দাস বলেই ডাকে। জামার কলার তুলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে। আহা হা। আর এই চাতালের একটা নাম আছে -মিলন চাতাল। কেও জানে না অথচ কথিত আছে একসময় এক যুবক যুবতী প্রেমের ফাঁদে পড়ে এই গাছেতেই নাকি আত্মহত্যা করে। সে কথা মনে না রেখে আড্ডা,তাস খেলা এগুলো এলাকার মানুষের অঙ্গ। এখন শীতের শেষ হলেও কেমন যেন শিরশিরানি ঠান্ডা। মানুষজন এই ঠান্ডায় এখানে কম আসছে কিন্তু কাকা আর তিন সাঙ্গপাঙ্গের কামাই নেই।

পটলা একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো – কি গো কাকা আজ নাকি ভলেন্টারি ডে?

উফ তুদের লিয়ে আর পারি না ইর জন্যি তো শিক্ষার দরকার। উটাকে বুলে – ভ্যালেন্টাইন ডে।

তা এদিন কি হয় গো ?

পেরেম নিবেদন।

পটলা,বিলু আর গুলান নড়েচড়ে বসলো। গুলান জিজ্ঞাসা করলো – তা কাকা তুমি কাকে পেরেম দিবা? কাকীর তো বয়স হলো। লতুন কেও?

ফোঁকলা দাঁতে ফিক করে হেসে বললো -তুরা তো জানিস খেঁদির কথা। সে মুর লগে সারা জেবন বে করলো না। উকেই গোলাপ দিব। আহা রে বেচারি সারাটা কাল মুর লগে……

বিলু পটলাকে আঙুলের খোঁচা দিলো কিছু একটা বলার জন্য। কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে বিলুর প্রশ্ন – আচ্ছা কাকা ফেসবুকে দেখলাম তুমার এই বুড়া মুখখানার বদলে একডা চ্যাংড়ার ফটোক আর বয়স লিখেছো পঁচিশ। কেনে গো ?

কাঁচা পাকা গোঁফে দুবার হাত বুলিয়ে প্রেম দাস বললো – হ, তুদের লুকিয়ে কিছু করার উপায় নাই দেখছি। আরে বুঝলি না বেশি বয়স দেখালে অল্প বয়সীগুলান বন্ধু হতো নাকি। কত মজা করি উদের সঙ্গে। সারাটা দিন মুবাইল লিয়ে কেটে যায়। না হলে তো ওই বুড়ির মুখপানে তাকিয়ে তাকিয়ে মুর হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে যেত বুঝলি কিনা।

সন্ধ্যে প্রায় হতে চলেছে। আজ কাকার বাড়ি যাবার নাম নেই। কেমন যেন তার চোখ কাকে খুঁজছে। এদিকে তিন ছোকরার অধীর আগ্রহ নতুন কিছু দেখার।

হঠাৎ প্রেম দাস তিনজনকে বললো – তুরা বাড়ি যা। মুর আজ যেতে দেরি হবে। ওরা চলি কাকা বলে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যে খেঁদি হাজির মিলন চাতালে। আহা। পাশাপাশি দুজনে কুজনে। কত কথা। কাকা পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাজা গোলাপ ফুলটা বের করে যেই খেঁদিকে দিতে যাচ্ছে অমনি পিছন থেকে বাজখাঁই গলায় কাকীর আওয়াজ – ও তাই বুলো এই খেঁদি তুমার প্রেমিকা। আজ তুমার একদিন কি মুর একদিন। এদিকে খেঁদি আর ওদিকে কাকা চিৎপটাং। আর মধ্যে কাকী লাঠি দিয়ে একবার কাকাকে আর একবার খেঁদিকে।

“কাকী আর মেরোনা গো আজ ভলেন্টারি ডে” – তিন চ্যাংড়া দৌড়ে এসে বলে দে ছুট।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।