মুক্ত গদ্যে বর্ণজিৎ বর্মন

টিউশনি মাস্টার এবং গোধূলির রং

এখন শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময় । প্রাইভেট মাস্টারের উপায় নেই, হতাশার সমুদ্র সৈকতে টিউশনির টাকা আর মহানন্দা ব্রিজে গোধূলির রং দেখে সল্প স্বস্তিকা নিদ্রা নেমে আসে দুচোখের পাতায় । একটি নেতিয়ে পড়া কলগেট , দার ক্ষয়ে যাওয়া টুথব্রাশ , ধূসর ছাই রঙের এক জোড়া চটি ঘুম ভেঙে গেলে সকালের সঙ্গী । মালদার গলি গুলি তখন মখমল হাওয়ায় ভাসছে তা ছাড়া আর কিছুই ফ্রিতে পাওয়া যায় না । এভাবেই যুবক ভারতবর্ষের দিনের শুরু । সারাদিন ব্যাপী চলে দুর্বিসহ নানা ধরনের যুদ্ধ- যুদ্ধবিরতি নেই । নিয়ম অনুযায়ী সূর্য ডুবে যায় কিন্তু করাল গ্রাসি দরিদ্রের নিষ্ঠুরতম ঢেউ নীরব নির্বাক বুকের বাসনালয়ে আছড়ে পড়ে ক্ষতবিক্ষত মনকে জ্যান্ত লাশে পরিণত করে । এ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পরীক্ষা এর কোনো ওয়ার্ড লিমিট নেই , কোনো টাইম টেবিল নেই রেল ইঞ্জিনের মতো একবার স্টার্ট হলে আর বন্ধ হয় না । বন্ধ মানে চিরকালিন মৃত্যু । যা আর কোনো দিন ফিরবে না ।

একদিন রান্না করে দুদিন খাওয়া । যে দরিদ্রের কালবৈশাখি ঝড়ে পড়েনি সে কোন দিন কল্পনা করতে পারবে না ।তার কাছে এগুলো সোনার পাথরবাটির মতো মনে হবে। হায় জীবন! রংহীন, অনিশ্চিত, ফ্যাঁকাশে, ধূসর কি বিচিত্র কষ্টের রঙে প্রতিভাত হয় প্রতিনিয়ত । জৌলস ছিঁড়ে গেছে যাপনের গিটার আর বাজে না । সুর ভাঙা গলা বাঁশের বাঁশি স্বপ্নের ছায়াছবি আঁকে অসীম আকাশের মনে । কবে নিস্তব্ধ অপেক্ষার উপত্যকা জুড়ে গাঁদা ফুল ফুটবে হতাশার কানন মাঝে !

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!