২৩শে জানুয়ারী স্পেশালে অনিন্দিতা শাসমল

অগ্নিশিখা,আপনাকে…

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
‘ভয় নাই ,ওরে ভয় নাই–
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
—–বিশ্বকবি
ছোটোবেলা থেকেই যে নাম শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছি…
স্বাধীনতা দিবসের দিন, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম, বাঘাযতীন, গান্ধীজী, মাস্টারদা, মাতঙ্গিনী ,প্রীতিলতা এবং আরও অনেক সংগ্রামী উজ্জ্বল মুখের মাঝে প্রিয় যে মুখ ,তা আর কারও নয় —-
আপনার, নেতাজী।
অবাক ছেলেবেলায় প্রিয় দাদার মুখে বিস্মিত হয়ে শুনেছেন, পরাধীন ভারতবর্ষের দুঃখ দুর্দশার কথা। তখন থেকেই সঞ্জীবনী,যুগান্তর,সন্ধ্যা, বন্দেমাতরম্ পত্রিকার বিপ্লবী ভাবধারা আর প্রাচীন সন্ন্যাসভূমি এ ভারতের মহান দেশনায়ক,স্বামীজীর বাণী আপনাকে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছিল। প্রকৃত অর্থেই আপনি ‘স্বামীজীর মানসপুত্র ‘।
স্কুলজীবনে যিনি আপনার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ আর সামাজিক চেতনার স্ফূরণ ঘটান, সেই প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাসকে প্রণাম।
প্রণাম রত্নগর্ভা দৃঢ়চেতা আপনার মা, প্রভাবতী দেবীকে আর ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি ফিরিয়ে দেওয়া আপনার স্বদেশপ্রেমিক পিতা, জানকীনাথ বসুকে।
আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত অরবিন্দ ঘোষের মুক্তিচেতনা আর এই মামলায় জয়ী ব‍্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাসের সাংগঠনিক কুশলতার প্রভাবে আপনি হয়ে উঠলেন একজন দক্ষ সংগঠক ।
ছাত্রজীবনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েও আপনার মেধা, আপনাকে সেরা ছাত্রের শিরোপা পরিয়ে দিয়েছে। একের পর এক পরীক্ষায় সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে , বিবেকের যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েও বাবার ইচ্ছের মর্যাদা দিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় সফল হলেন। অবশেষে সেই পদে ইস্তফা দিয়ে– দেশপ্রেমের আদর্শে অবিচল এক সত্তা — আপনি,সুভাষচন্দ্র বসু ।
সশস্ত্র বিপ্লবের সার্থক রূপকার,যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং রাসবিহারী বসু আপনার রক্ত তোলপাড় করেছিলেন। সারা দেশের যুবসমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানালেন আপনি—
“Give me blood and I will give you freedom…”
সক্রিয় মুক্তিসংগ্রামে কারাবরণ করে সাহস সঞ্চয় করেছেন একটু একটু করে । তারপর কোনও কারাপ্রাচীর আপনাকে চার দেওয়ালের গন্ডীতে আবদ্ধ রাখতে পারেনি, অবরুদ্ধ করতে পারেনি আপনার সংগ্রামের পথ।বন্দীদের ওপর অকথ্য অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘনীভূত হয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগদান, দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রা শেষে আজাদ হিন্দ ফৌজের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের মাধ‍্যমে যে সশস্ত্র লড়াইয়ে নামলেন আপনি,পৃথিবীর কোনো শক্তি , এমনকি ‘সুভাষ হঠাও’ অভিযানও আপনাকে নিরস্ত করতে পারেনি বিপ্লবের পথ থেকে । ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিলেন আপনি।হ‍্যাঁ , আপনিই…
মর্মে মর্মে আপনি উপলব্ধি করেছিলেন —
” ভারতের কল্যাণ আমার কল‍্যাণ “…
মাত্র আটচল্লিশ বছরের কর্মময় আপোসহীন আপনার সংগ্রামী জীবন, আজকের যুবসমাজকে সঠিক পথের সন্ধান দিক, ‘বরাভয়’ মন্ত্রে দীক্ষিত করুক।
স্বামীজীর স্বদেশমন্ত্রের সার্থক রূপকার , মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হে মহান দেশনেতা , হে মৃত্যুহীন প্রাণ —–
আপনাকে শতকোটি প্রণাম…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।