কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে আবদুর রাজ্জাক (গুচ্ছ কবিতা)

১| আমার ডানা ছিলো না, পালক ছিলো না

শাদা কুয়াশার মতো আমাকে স্বচ্ছ করেছো, অন্তিমে তোমার

ছায়ার শেফালিকায় উড়েছিলো সাধ।

 

তোমার স্মৃতির ওপারে নদী, এপারে খেয়াঘাট মাঝি মল্লারহীন,

নৌকো আছে পাল নেই কোনো, ভাঙা গলুইটা ময়ুরীর মতো,

ইচ্ছ করে স্বচ্ছ হয়ে যাই তুষার সমিপে।

 

রাশি রাশি মেঘ, সারি সারি বৃক্ষ, বাষ্প হয়ে হয়ে জল উড়ে যায়

দেখতে পাইনে, তোমাকেও না।

তুমিও অবিকল কুয়াশার মতো, শাদা ঝাপসা, তোমাকে দেখবো,

ভাববো, বাধা দেবে কে?

মমতা ঘন হয়ে এলে তোমাকে পাওয়া যায়, রহস্য যা-ই হোক,

সামনে তপ্ত বৈশাখ, আজ চৈত্রের শেষ রজনী।

 

বপন কৃত চারাগাছগুলো খরায় কাতর,

ইরাশা মুদ্রিত একটি বিকেল কি তোমাকে উপহার দিইনি?

দুটিরঙ্গিন বেলুন, শোলার পাখি, মাটির টমটম, ইত্যাদি ইত্যাদি….

মানুষ না থাক, ভালোবাসা থাকে, স্মৃতির শ্লোক থাকে,

বেলা শেষের গল্প থাকে, তবুও আশাহত ফল পাকে না কোথাও।

 

একটি অবিরাম স্বপ্ন থাকে বুকের ভেতরে কুহকের মতো।


২| গল্প কুঠারের, গল্প বৃক্ষের

কেউ কেউ বৃক্ষ- বৃত্তান্ত বিষয়ে বিস্তর বেদনা প্রকাশ করে,

গভীর নিদ্রাভাবনায় পাঁজর থেকে খসে পরে

কর্তিত লিলিফুল,

যুৎবদ্ধ মোরগ ডাকে যৌন উল্লাসে, বিরতি না দিয়ে, ক্রমশ জিভ থেকে ঝরে পরে ক্লান্ত ডাহুক,

নক্ষত্র জগতে নিমগ্ন হলে——মোহনা থেকে নদীগুলো সম্পূর্ণ উধাও হয়ে যায়।

পাখিশিকারীরা বন্দুক ফেলে নদীর লাশ বুকে নিয়ে

কাঁদে, নির্জনে, অঝোরে।

‘কখনও কাঁদবে না’ এইরূপ নির্দেশ ছিলো, কাঁদলে

লাশ বুঝে যাবে সজন হারানোর বেদনা

খুব বেদনাদায়ক।

 

আমি পিপীলিকাদের কাঁদতে দেখেছি, কাঠবিড়ালীদের

কাঁদতে দেখেছি, সারিবদ্ধ শোকে মুহ্য হতে দেখেছি

খণ্ড বিখণ্ড নুড়ি পাথর সমূহের,

আলাদা আলাদা করে দেখেছি তাদের প্রাকৃতিক মুখ।

সমাদৃত আততায়ীদের অধিকৃত হতে দেখেছি ধূলিবৃক্ষে,

অদম্য কুঠার হাতে।

 

সূর্যমুখিরা কেঁদেছে অবিকল, একজন দুখি মানুষের মতো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।