গদ্যের এজলাশে অজিতেশ নাগ

কবিতার ঈশ্বর…কবিতায় ঈশ্বর
একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। কবির বাড়িতে প্রতি রবিবারের সকালে আসর বসে। কবিদের সমাগম। আমিও গিয়েছি আমার এক বোনের সাথে। এছাড়াও অনেক গুণমুগ্ধ ভক্তের আগমন ঘটেছে। কবি এলেন। শ্বেতশুভ্র ধুতি পাঞ্জাবি। বসলেন তার জন্য নির্দিষ্ট কেদারায়। আলাপচারিতা চলছে। সবাই কবির কথা শুনতে উন্মুখ। তবে কবি এতটাই মৃদুভাষী যে শুনতে হলে কান পাততে হবে। ধীরে ধীরে বসবার সব ক’টি আসন পরিপূর্ণ। মাঝখানের টেবিল ভরে উঠেছে প্রচুর শিঙাড়া, চা আর সন্দেশের আয়োজনে। এমন সময় একজন অল্পবয়স্ক ছেলে এসে হাজির। কবি নিমেষে উঠে দাঁড়ালেন। আমরা ভাবলাম বুঝি কোন দরকারে কবি ভেতর ঘরে যাচ্ছেন। আমাদের সবার চোখকে রসগোল্লা বানিয়ে দিয়ে কবি একখানা চেয়ার উঠিয়ে নিয়ে আসবার উদ্যোগ করলেন। সবাই, স্বাভাবিক ভাবেই, হাঁহাঁ করে উঠল। আমি দেখলাম, মুগ্ধ হলাম, মাথা ঝুঁকে গেল প্রণামের জন্য। বিদ্যা মানুষকে বিনয় দান করে – এই আপ্তবাক্য শুনে আসছি সেই ছেলেবেলা থেকে, আজ তার দৃশ্যরূপ দর্শন হল। একজন নব্য দর্শনার্থী শুধুমাত্র বসবার জায়গা পায়নি বলে একজন জীবন্ত কিংবদন্তী কবি নিজে উঠে যাচ্ছেন চেয়ার উঠিয়ে নিয়ে আসতে, এ দৃশ্য অবলোকন করাটাও ভাগ্যের ব্যাপার। বেরিয়ে আসার আগে হাঁটু মুড়ে বসে প্রণাম করলাম, আশীর্বাদ পেলাম। তিনি শঙ্খ ঘোষ ব্যতিত আর কে হবেন? শঙ্খ ঘোষ মানেই কবিতা আর তিনি নিজেই কবিতার দেবতা, যার সামনে নতজানু হওয়া যায় অক্লেশেই।
এইবার এই দেবতাকে আমার দর্শনের প্রথম অভিজ্ঞতা লিখি। ক’দিন থেকেই ভাবছিলাম জীবনে করছিটা কী? সকাল, বিকেল আর রাত্রি আসছে, চলেও যাচ্ছে, নিয়ম মেনে। সেই ঘুম থেকে ওঠা, অফিস যাওয়া অথবা না যাওয়া, রাতে হতক্লান্ত হয়ে ফিরে খেয়ে ফের ঘুম। মাঝখানে টুকটাক নানা পাপ আর টুকটাক পুন্য কামিয়ে নেয়ার জন্য মন্দিরে, মসজিদে বা গীর্জায় হানা দেওয়া। কিন্তু প্রকৃত পুণ্য বা ভালো কাজ কি আমরা করি, বা করলেও ক’টা?
অতএব সেই পূণ্যের লোভেই একদিন (রবিবার নয়) হাজির হয়েছিলাম কবি’র বাসাবাটিতে, দুজন বন্ধু’র সঙ্গলাভ করে। দারুণ ভয়ে, ভয়ে। সেই কবি, যার কলম কালজয়ী পঙক্তির জন্ম দেয়, ‘‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি… তোমার জন্যে গলির কোণে ভাবি আমার মুখ দেখাব মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।’’
প্রথম যাচ্ছি, কী জানি কী বলবেন। আগে থেকে না জানিয়ে যাওয়ার জন্য বকা-ঝকা করবেন না তো? যা হবে, তা হবে। বকা-ঝকা করলেও পিতৃতুল্য মানুষ। যাই হোক, এই তীর্থযাত্রায় আমি বাদে বাকি দুজন তীর্থযাত্রী ছিলেন দেবব্রত সান্যাল আর শান্তনু ব্যানার্জী। নিতান্তই ভয়ে ভয়ে দুরুদুরু বক্ষে, হাতে এক একখানি কবির কাব্যগ্রন্থ, হাজির হলাম তিনতলায়। দরজায় টোকা। খুলে দিলেন একজন পরিচারিকা।
আমাদের বসতে দেওয়া হল কবির বসার ঘরে। বিলাসিতার তিলমাত্রহীন ঘরখানা দেখে আমরা বাকরুদ্ধ। ছাদ অবধি বোঝাই বই, চারদিকে শুধু বই আর বই। লেখার টেবিলে বই, একচিলতে শোওয়ার খাটে বই, এমনকি স্থানাভাবে মাটিতেও বইয়ের রাশি। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ ভক্তের মনোভাব নিয়ে বসে।
অনতিবিলম্বে হাজির কবি শঙ্খ ঘোষ। যাকে এক ঝলক দেখেই মনে হয় – হে স্রষ্টা, তোমায় সেলাম। প্রণাম নিলেন না। যদিও ততক্ষণে তার পদযুগল ছুঁয়ে ফেলেছে আমাদের বিনত দৃষ্টির অঞ্জলি।
এরপরের সময়টুকু শুধুই স্মরণীয়। কিভাবে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময় টের পেলাম না। আগে কোনদিন দেখেননি আমাদের, তবু কবিতা নিয়ে নানান কথা বললেন, আমাদের নিজ নিজ জন্মস্থান নিয়ে কথা বললেন, কবিদের নিয়ে কথা বললেন। আজ এটুকু মনে আছে যে তিনি বলছিলেন আর আমরা শুনছিলাম। অত্যন্ত মিতবাক, ধীরভাষী। যথারীতি চা, সন্দেশ সহ আপ্যায়ন করতেও ভুললেন না। নিজে থেকে আমাদের নাম, ধাম জিজ্ঞেস করলেন, জেনে নিলেন আমাদের পেশাটাও। প্রশ্রয় দিলেন তাঁর সাথে ছবি তোলার। আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে তাঁর হাতে তুলে দিলাম আমার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘যাপিত হৃদয়’। মনে হল এতদিনে আমার বইটি এ নদী, ও নদী ঘুরে পথ খুঁজে বেড়াচ্ছিল, আজ সাগরের দেখা পেল অবশেষে।
কিভাবে যে ঘণ্টাখানেক অতিক্রম গেল বুঝতেই পারলাম না। বেরিয়ে আসার সময় কবি নিজে দরজা অবধি এগিয়ে এলেন। বুঝে নিলাম কবি শুধু কবিতাই লেখেন না, কবিতাকে নিজের সাথে একাত্ব করে ফেলেছেন আর সে দুঃসাহস তিনি ধারণ করতে পারেন। হ্যাঁ তিনিই পারেন যার এ জন্মের পার্থিব নাম – শঙ্খ ঘোষ, যিনি এবং একমাত্র যিনিই লিখতে পারেন,
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরা ছাড়া
তোমার কোনো ধর্ম নেই, শুধু বুকে কুঠার সইতে পারা ছাড়া
যেভাবে আমরা জানতে পারি এই কবির আবির্ভাবের বিষয়ে, সেই প্রসঙ্গে বলা যায়, তখন লেখকের চেতনাকে বর্জন করে প্রতিটি অন্য বোধ-জরায়ুকে কাজে লাগানোর এবং স্বাধীনতা বিস্বাদে ভরা উত্তাল এক সময়-পঞ্চাশের দশক। দেশভাগের ম্লান ক্লান্তি ও রাজনীতি, অর্থনীতির নতুন অনিশ্চয়তায় তখন ধুঁকছে কলকাতা তথা সমগ্র ‘কলকেতিয়া’ সভ্যতা। কিন্তু নতুন কলমে উঠে আসছে না কোন দামাল হাওয়া বা কলমের রক্তাক্ত প্রতিবাদ। যৌন সাহসিকতা, প্রেমের অহংকার আর অহংকারের প্রেমে মাতাল তখন কবিকুল। সেই সময়ে “দিনগুলি রাতগুলি” কাব্যগ্রন্থের হাত ধরে আবির্ভাব সেই কবির। ‘নিভন্ত চুল্লিতে’ আগুন দিতে ও আরেকটু কাল বেঁচে থেকে বাঁচার আনন্দ নিতে এবং দিতে তিনি এলেন। তিনি বাংলা কবি ও পাঠক সমাজকে যেন বললেন “একটু নড়ুন, চাপ সৃষ্টি করুন”। বাংলা কাব্য জগতে নতুন রুচি ও সম্ভ্রম নিয়ে এলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ‘নুরলজিয়ার ব্যথার’ বাঁশির সুর বুকে গেঁথে তিনি সৃষ্টি করলেন আধুনিকতার নতুন মেঘমল্লার। তিনিই এক ও অদ্বিতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ।
এই মানুষটার ব্যাপারে কিছু লিখতে বসা ভারি দুঃসাহসের। যে মানুষটার আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ, তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। যাদবপুর, দিল্লি আর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। এ সব তথ্যই সবার কন্ঠস্থ। তাহলে অন্য কিছু লিখি।
একটি বইয়ের কথা লিখি। ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’। শোনা যায় তিনি এই বইয়ের উৎসর্গ কবিতাটি স্বপ্নে পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বইতে তার বেশ কয়েকটি কবিতা আছে, যা স্বপ্ন থেকে শুরু, কয়েকটির পুরোটাই স্বপ্ন। তিনি কবিতা ‘নামাতে পারেন না’। তিনি কবিতার জন্ম দেন। কবির প্রচুর কবিতা আছে যাতে বারংবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে আমি-তুমির অবস্থান নিয়ে, যে অবস্থান ক্ষণে ক্ষণে চতুষ্কে চতুষ্কে বদলে গেছে। সেখানে কোনো ধারাবাহিকতায় নয়, প্রতিটি চতুষ্ক তার নিজের দাবিমতো তৈরি করে তুলেছে আমি-তুমির চরিত্র। তুমি-কে এই যে কোথাও সদর্থক কোথাও নঞর্থক লাগে, কোথাও মহাজাগতিক কোথাও মানবিক, কোথাও মৃত্যু কোথাও জীবন, তা এই বইটিতেই কেবল আছে তা নয়, হয়তো কবির সব বইতেই আছে।
একটা ব্যাপার লক্ষনীয় কবির প্রচুর কবিতা কিন্তু নিজস্ব মননের ব্যথাজনিত অভিঘাত থেকে লেখা। হয়ত কোন নিকটজনের মৃত্যু দেখেছেন, সেই নীরব কষ্ট তার কবিতার পটভূমিতে রচনা করেছে, খুব প্রত্যক্ষে না হলেও, পরোক্ষে তো বটেই। যদিও কবি তেমন কোন সচেতনতায় সেগুলো লেখেননি। অতএব এটা প্রমাণিত যে কবিতা লেখা যায়না, কবিতা আসে। ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’-এর কবিতাগুলি লেখা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সাল নাগাদ। তার ঠিক আগের বছরে কবি গিয়েছিলেন তাঁর কিশোর বয়সের ফেলে আসা জায়গা পাকশীতে। বাংলাদেশ হবার পর সেই প্রথম। ওখানে গিয়ে কবি শুনেছিলেন রাজাকার আর পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচার আর হত্যাকাণ্ডের কিছু মর্মান্তিক বিবরণ। হতবাক কবি খোঁজ নিচ্ছিলেন তাঁর পুরনো বন্ধুদের, বিশেষত ঘনিষ্ঠতম এক বন্ধুর। তাকে যারা চিনতেন তারা স্তব্ধ ছিলেন কিছুক্ষণ। তারপর জানিয়েছিলেন, ‘এই যেখানে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, তার নীচেই আছে এক গণকবর। সেইখানে আপনার সেই বন্ধু।’ (এবার কবি সেদিন কীরূপ শিউরে উঠেছিলেন, অবশ্য ভেবে নেওয়া যায়)। এই মৃত্যু-কষ্ট কবির মনে যে ছায়াপাত করেছিল, তারই ফলশ্রুতি ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’ কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা, যারা পড়েছেন তারা জানেন।
রাজা আসে, রাজা যায়। সিংহাসন খালি থাকে না, তবে একই থাকে শাসন-অভিমুখ। কবিকে অনেকেই রাজনৈতিক কবিতার সাথে একাত্ব করে ভুল বুঝছেন বারংবার। সরকার আসেন, সরকার চলে যান। তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন রোমান দেবতার মত, দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন নিজস্ব দুটি পায়েই, শিরদাঁড়া থাকে বজ্রের সমান্তরাল। তবেই তো তাঁর নাম হয় শঙ্খ ঘোষ।
একটা সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। কবিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ‘তোমার সমস্ত গানে ডানা ভেঙে পড়ে বক।… প্রতি রাতে মরি তাই, প্রতিদিন আমি হন্তারক’ আর ‘ভিখিরির মতো অন্ধ গলিতে রকের পাশে একা’ জাতীয় পঙতিগুলো যখন কবি লিখেছিলেন তখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায়। প্রকাশিত হয়েছিল বইমেলায় (কবিতাগ্রন্থ – গান্ধর্ব/১৯৯৪)। যদি পরবর্তী সরকারের আমলে সেই বই প্রকাশিত হত তবে কি পঙতিগুলো অপরিবর্তিতই থাকত? কবি সেদিন কী জবাব দিয়েছিলেন জানেন? কবি বলেছিলেন, ‘সময়ের বাইরের চেহারাটাই, যে ধরা থাকে কবিতায়, তা তো নয়। তাই কবিতার লাইনকে বছরে বছরে পালটাবার কথা তেমন ওঠে না। গানের দেবতা একই সঙ্গে পরাভবের বেদনা বুকে ধরতে পারেন, আবার হয়ে উঠতে পারেন উজ্জীবক। কিন্তু নিছক সময়ের কথাও যদি হত, ২০১৩ সালের এমন কী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য? আরও পরাভব? না কিছু উজ্জীবন? কীভাবে, বা কেন পালটাতাম লাইনগুলি?’
তাঁর পরের কথাগুলো আরো প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, গান্ধর্ব কাব্যগ্রন্থে নিবন্ধিত কবিতার পঙতিগুলোর যে প্রসঙ্গ ছিল, তার অন্তর্গত হতাশার (হতাশা না বলে বিষাদ বলতে আমি পছন্দ করব) কারণ হিসেবে লেখার সমসাময়িক বিপর্যস্ত বাস্তবতার কথা – রাজনৈতিক সামাজিক নষ্টামির কথা – কারো মনে হতে পারে। এসবের কিছুমাত্র চিহ্ন কবিতাগুলির মধ্যে নেই, তা হয়তো বলা যায় না। কিন্তু সেইটেই এর মূল স্পর্শ নয়। প্রতিমা-প্রতীক হিসেবে ওগুলি ওঠে আসে। গোটা জীবনকে দেখতে দেখতে চলা মানুষের কোনো অস্তিত্বিক বেদনা দিয়ে দেখতে পেলেই কবিতাগুলির কাছে পৌঁছনো যায় বলে আমার মনে হয়। আর সেই জন্যই দশকুড়ি বছরে এ মনোভাবের বদল হওয়া শক্ত। কোনো রাজনৈতিক পালাবদলে এ হতাশার থেকে উত্তরণ সহজে সম্ভব নয়।
আমরা হয়ত আগেই জানতাম এটাই উত্তর হবে আর ঠিক সেই কারণে তিনি প্রবাদপ্রতিম কবি শঙ্খ ঘোষ।
দীর্ঘ দিন বাঙালির সংস্কৃতিতে জীবন যাপন করেছেন যিনি, তিনি চান অথবা নাই চান, তিনি আইকন হয়ে উঠেছেন প্রায়, অতএব তাঁকে নিয়ে কোনও কোনও বাঙালি যে শ্লেষ-পরায়ণ হবেন এ আর নতুন কথা কী ! তবে সত্যি কথা এই যে শঙ্খবাবু নিজের যে রীতি তৈরি করেছেন তা নিতান্ত বাইরের নয়। এ ভেতর থেকে গড়ে ওঠা। তা আপনার পছন্দ হতে পারে, নাও পারে। তার মূল সূত্র হল থাকা এবং না-থাকা। শঙ্খ ঘোষ তাঁর সমকালে বাঁচেন, খুবই বাঁচেন কিন্তু সমকালের ফ্যাশনে ঢুকে পড়েন না। সেই ফ্যাশনের ছাঁচ থেকে নিজেকে আলতো করে সরিয়ে রাখতে পারেন। এটাই তাঁর স্টাইল। এটা তিনি বজায় রাখতে পেরেছেন তরুণ বয়স থেকেই।
ওই যে কবি সম্মেলনের ঘটনা। না, কবি সম্মেলন তো তিনি বর্জন করেননি। শুনতে গেছেন, তরুণ কবির পক্ষে নামী কবিদের দেখা শোনার আগ্রহ স্বাভাবিক। কিন্তু তারপর? সেই পালিয়ে আসা। সুযোগ পেলেই পকেট থেকে কবিতা বের করে ‘সম্মেলন থেকে সম্মেলনে কবিতা পড়ে শোনাব’ এই কাব্য-ফ্যাশনের ছাঁচে নিজেকে মেশাতে তরুণ শঙ্খ নারাজ।
একই কাণ্ড কি তাঁর সঙ্গে কৃত্তিবাস কবিগোষ্ঠীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ঘটেনি? সুনীল ও পরে শক্তির সঙ্গে শঙ্খের সখ্য গভীর। ১৯৫৩ সাল। সুনীল গাঙ্গুলির বয়স তখন সবে উনিশ। থার্ড ইয়ারের ছাত্র। শ্রাবণ মাসে কৃত্তিবাসের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হল। তরুণতম কবিদের মুখপত্র। ভাঙা স্বাধীন দেশ। ‘বাংলাদেশের শারীরিক মানচিত্রের মতোই কাব্যের মানচিত্রও খণ্ডিত।’ কৃত্তিবাস সম্পাদক সুনীল সেই খণ্ডতার বিরোধী। পাকিস্তানের কবিদের তিনি সমদলীয় ও সহকর্মী বলে মনে করতেন। এই যে মতান্তরে আছেন মনান্তরে নেই, সমকালে আছেন কিন্তু সমকালের ফ্যাশনে নেই, নিজের মতের কথা সৌজন্য বজায় রেখেই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে এই বাঙালিয়ানা যা গড়ে উঠেছিল একসময়, শঙ্খ ঘোষ তার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন। কৃত্তিবাসের পাঠক প্রথম মুখোমুখি হয়েছিলেন শঙ্খের ‘দিনগুলি রাতগুলি’ কবিতাটির ‘বাসনা-বিদ্যুতে তুমি ছিন্ন করো চরিত্রের মেঘ।’ কিন্তু এই উচ্চারণ যাঁর তিনি কিন্তু কখনও শক্তির মধ্যরাতের ফুটপাথ বদলের সঙ্গী নন, কলকাতা শাসন করা চার যুবকের একজন তিনি হয়ে উঠতে চাননি। তিনি তাঁর মতো থেকে যাবেন তখনও, এখনও।
কৃত্তিবাসীদের সখা কিন্তু প্রতিদিনের দিনযাপনে কোথাও নিজের মতো একা। সুনীল-শক্তি তা জানতেন। তাঁদের পারস্পরিক বেরাদরির অভাব ছিল না, তবে কেউ কারও জীবন-যাপনের নিজস্বতাকে খাটো করেননি। শঙ্খের জীবন-যাপনের পদ্ধতি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির খুব প্রিয়। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা, স্বল্পভাষী, নিয়মানুবর্তী মানুষ। মধ্যবিত্ত জীবন-যাপনের চিহ্নগুলিকে কখনও বাদ দেন না। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য তিনি মন্থন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, কিন্তু সেই শিক্ষকতার পাণ্ডিত্য ও শুচিবায়ুগ্রস্ততা তাঁকে গ্রাস করেনি।
কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতায় বার বার স্থান পেয়েছে সমকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, স্বার্থসর্বস্ব রাজনীতি,
অর্থনৈতিক বৈষম্য। মনুষত্বহীন মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত মানুষের অসহায় অবস্থার চিত্র। তবে কবি আশাবাদী। অত্যাচারিত মানুষের সংঘবদ্ধ ক্ষমতাই অত্যাচারিকে ধ্বংস করবে এই প্রত্যয় তার কবিতায় বার বার ব্যক্ত হয়েছে। শব্দ ব্যবহারের দিক থেকে তিনি সচেতন শিল্পী। তার কাব্যে শব্দের বাচ্যার্থের চাইতে ব্যঙ্গার্থ অধিক গুরুত্ব
পেয়েছে। চিত্রকল্প ব্যবহারের দক্ষতা এবং নব নব ছন্দরীতির বিন্যাস তার কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। কবি এখনও নিয়মিত সাহিত্যচর্চায় নিমগ্ন রয়েছেন। আধুনিকতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আধুনিকতা সময় নিয়ে নয় মর্জি নিয়ে’। শঙ্খ ঘোষ আধুনিক মর্জির কবি। যিনি আধুনিকতা কে স্বেচ্ছাচার মনে করেননি বা ‘হাংরি’ দৃষ্টিতে আধুনিকতা বিচার করেন নি। তাঁর আধুনিকতা শুনতে পেয়েছে ‘শব্দ কোরো না / হেসো না বাচ্চা / চুপ, হাত পা ছুঁড়ো না।’
ফিরে আসি প্রতিবাদের কথায়। বছরখানেক আগের মেডিক্যালের অনড় অবস্থা নিয়ে তিনি মুখ খুলেছিলেন। আমি যতটুকু জানি তাতে করে কোন রাজনৈতিক রঙ কবিকে কাবু করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগেও তিনি শঙ্খ ঘোষ, পরেও সেই তিনি। এক, একাকী, লৌহস্তম্ভের মত। পরিবর্তনের আগেও তিনি প্রায় বিবেকের মতো সরব হয়েছেন। ফ্যাসিবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন অন্য ভাবে। পরিবর্তনের পরেও যেখানে বুঝেছেন অন্যায় হচ্ছে, অবিচার হচ্ছে, তিনি মুখ খুলেছেন, তাঁর কলম হয়েছে উদ্দ্যত। শঙ্খ ঘোষ তাঁর থাকা না-থাকার ভঙ্গিটি এই রাজনৈতিক কার্যক্রমেও সচেতন ভাবে বজায় রাখতে সমর্থ। তাঁর ভূমিকায় আগের শাসক দলও খুশি নন, বর্তমান শাসকেরাও কবি শঙ্খ ঘোষকে গ্রাস করতে পারেননি। তাঁর বইয়ের ঘরে ছড়ানো ছেটানো বই, রোদ। তিনি জানেন স্বাধীনতা, দেশভাগ, অতিবাম আন্দোলন, বামেদের ক্ষমতা দখল, বাংলা মাধ্যম স্কুলের অবক্ষয়, দায়িত্বজ্ঞানহীন দাবির আস্ফালন, পরিবর্তন, পুঁজির বিশ্বায়ন-এ সবের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে বাঙালি জীবন। তিনি এই সব কিছুর ভেতরে শামিয়ানা খাটিয়ে জেগে ছিলেন। নিজের মতো করে বলেছেন, চুপ করে থেকেছেন। সমকালে থেকেও আরেক রকম জীবনের আদর্শ সাধারণ বাঙালির সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। দিনের শেষে এই মানুষরূপী দেবতাটির নাম যে শঙ্খ ঘোষ।
প্রথম কাব্যগ্রন্থের দুটি কবিতায় প্রতিবাদী শঙ্খের যে মুখচ্ছবি দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে তা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়েছে। প্রতিবাদ যে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কাব্যচর্চার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ততায় লগ্ন তা সুস্পষ্ট হয়েছে বারবার। ‘মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়’ কাব্যগ্রন্থ থেকেই তাঁর প্রতিবাদী চেতনা সংহত রূপ নিতে শুরু করে। ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘বন্ধুরা মাতি তরজায়’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে কবির ক্ষমতাতন্ত্রবিরোধী স্বর তুঙ্গস্পর্শী।
তখন টালমাটাল সময়। সত্তরে দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করতে বঙ্গীয় মেধাবী যুবক-যুবতীদের একটা বড় অংশ সেদিন আত্মকেন্দ্রিকতার অচলায়তন ভেঙে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল কৃষিজীবী জনতার মধ্যে। অন্যদিকে প্রতিবাদী যৌবনকে দমন করতে সরকারও হয়ে উঠেছিল সক্রিয়। ১৯৭২ সালের প্রহসনী নির্বাচনে জয়লাভের পর বঙ্গীয় কংগ্রেস সরকার জয়োৎসবের নামে শুরু করে অত্যাচারের নয়া অধ্যায়। এই কালবেলাই স্তম্ভিত হয়ে আছে ওই দুটি কাব্যগ্রন্থে। সময়চেতনার স্ফুরণ অনেকের কবিতাতেই দেখা গেছে, যাবেও। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাতন্ত্রের রক্তচক্ষুকে নীরব উপেক্ষায় নস্যাৎ করেছেন কজন! কজন সেদিন কবিতায় শানিত করেছেন প্রতিবাদ! অধিকাংশই তো সেদিন সময় ভুলে, সমাজ-সত্য ভুলে রোমান্টিক ভাবালুতার নিরাপদ স্রোতে গা ভাসিয়েছিলেন। এমন সময় মুষ্টিমেয় কয়েকজন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি ধরেছিলেন কলম, প্রতিবাদে তাঁর কবিতা উঠেছিল গর্জে। লক্ষণীয়, নবারুণ কিংবা মনিভূষণের মতো উচ্চকণ্ঠ প্রতিবাদ নয়, শঙ্খ ঘোষের প্রতিবাদ এসেছে মগ্নস্বরে, কিছু দাপটে কাঠিন্যে তা অনন্যপরতন্ত্র। ‘জয়োৎসব ১৯৭২’, ‘তিমির বিষয়ে দু-টুকরো’ থেকে ‘ইন্দ্র ধরেছে কুলিশ’, ‘হাসপাতালে বলির বাজনা’, ‘মার্চিং সং’, ‘রাধাচূড়া’, ‘আপাতত শান্তিকল্যাণ’, ‘শৃঙ্খলা’, ‘বাবু বলেন’ – সর্বত্রই কবির নির্ভীক শিরদাঁড়ার তীক্ষ্ণ স্পর্শ আমরা অনুভব করি।
কখনও ক্ষমতাসীন দলের মুখ ও মুখোশের বৈপরীত্য দেখে কবির বিস্ময়মথিত ঘৃণা হয়েছে তুঙ্গস্পর্শী,
‘ভিতর থেকেই ভালোবাসব ভেবে
গিয়েছিলাম সেদিন তোমার কাছে
কিন্তু এ কী আরেকরকম মুখ
জেগে উঠলাম দহন বেলার আঁচে।’
ক্ষমতাবান অন্ধশক্তি সেদিন চেয়েছিল সবাইকে এক ছাঁচে ঢালতে। কবির প্রতিবেদনে চিরকালের ভাষায় মূর্ত হয়েছে এই প্রবণতার প্রতি তাঁর নির্ভীক কটাক্ষ। কখনো আবার পুলিশনির্ভর জনগণতান্ত্রিক সরকারের আদর্শ ও আচরণের অসংগতি তাঁর বক্রবাচনে বিদ্ধ হয়েছে,
‘তিন রাউন্ড গুলি খেলে তেইশজন মরে যায়
লোকে এত বজ্জাত হয়েছে।
… … …
পুলিশ কখনো কোনো অন্যায় করে না তারা আমার পুলিশ।’
এই পর্বে ক্ষমতাতন্ত্রের সীমাহীন ঔদ্ধত্যকে কবি বারবার বিঁধেছেন অসামান্য সাহসিকতায়। এই প্রসঙ্গে মনে আসে ‘নৈশ সংলাপ ২০০৭’ কবিতাটির কথা। নন্দীগ্রামের গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় কোলকাতায় বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় বুদ্ধিজীবীদের মিছিল। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন শঙ্খ ঘোষ স্বয়ং। এই সময়সন্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই কবিতাটি রচিত।
শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্র, পুলিশ প্রশাসনিক ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কবির লেখনী সরব এমনটা নয়, ক্ষমতার অন্যান্য কেন্দ্রকেও তিনি তীক্ষ বাক্যশরে বিদ্ধ করেছেন কবিতায়। আরওয়ালে উচ্চবর্ণের গুণ্ডাবাহিনী রণবীর সেনা একদা সংঘটিত করেছিল মারাত্মক গণহত্যা। উচ্চবর্ণের এই নারকীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবিকণ্ঠ সরব হয়। চিরকালই যে প্রান্তিক মানুষ অত্যাচারিত হয়, তাদের রক্তে রচিত হয় নিত্যনতুন জালিয়ানওয়ালাবাগ। এ-সত্যই তাঁর কবিতায় প্রাণস্পর্শী হয়ে উঠেছে,
‘আমার সবটাই আলো আমার সবটাই অন্ধকার
আমার সবটাই জন্ম আর আমার সবটাই মৃত্যু-দ্বার
আমার ধর্মও নেই আমার অধর্ম নেই কোনো
আমার মৃত্যুর কথা যদি কেউ দূর থেকে শোনো
জেনো – এ আমার মাটি এ কাল আমার দেশকাল
জালিয়ানওয়ালাবাগ এবার হয়েছে আরওয়াল!’
এই প্রতিবাদী চেতনার আন্তরিক প্রকাশ, ক্ষমতাতন্ত্রবিরোধী অবস্থান শঙ্খ ঘোষকে অমেরুদণ্ডী বাঙালি সমাজে স্বতন্ত্রতা প্রদান করেছে। স্বতন্ত্র করেছে তাঁর কবিতাকে। ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ নয়, বরং ক্ষমতাতন্ত্রবিরোধী স্বরায়ণই যে প্রকৃত কবির কর্তব্য শঙ্খ ঘোষ বারবার তাঁর কবিতায় আমাদের মনে করান।
তবে কী না শুধুই কি প্রতিবাদ? কবি কবিতা লেখেন আর তাতে প্রেম আসবে না? নিচের পঙতিগুলো খেয়াল করুন,
‘জলের কিনারে নিচু জবা? শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে সেকথা জানো না?’ (শূন্যের ভেতরে ঢেউ)
‘পদ্ম, তোর মনে পড়ে খালযমুনার এপার ওপার?’ (ফুলবাজার)
‘হয়ত এসেছিল / কিন্তু আমি দেখিনি / এখন কি সে অনেকদূরে চলে গেছে?’ (ছুটি)
‘নারী যে চোখের কোণ হৃদতটমূলে / ভাসায় দু-ধার’ (যেন কোনোদিন)
‘তুমিই চিরনমস্য তাই / তোমার পায়ে রত্ন জোটাই / তোমার পায়েই বিলিয়ে দিই শরীর’ (শবসাধনা)
এমন কত কবিতার শর যে কবির তূণীরে আছে গুনে শেষ করা যাবে না। প্রেমের মাসেই (ফেব্রুয়ারি) যার জন্ম তাঁর কলমে শাশ্বত প্রেম সমুজ্জ্বল হবে এতে আর আশ্চর্য কী! কবি অক্লেশে বলতে পারেন (তার নির্বাচিত প্রেমের কবিতার মুখবন্ধে), ‘মাটিতে বসান জালা, ঠাণ্ডা বুক ভরে আছে জলে, এখনও বুঝিনি ভালো, কাকে ঠিক ভালোবাসা বলে।’ নারী ও তার অপ্রাপ্তিজনিত অপূর্ণতা নিয়েও কবি সরল ভাষায় লিখেছেন নানান কবিতা। সেই সব কবিতার মধ্যে একটি হল ‘রাঙামামিমার গৃহত্যাগ’। এক গৃহবধূ বাইরের মুক্তির হাতছানির ডাকে সাড়া দিয়ে যখন তাঁর সাধের তিলতিল করে গড়ে তোলা সংসার পেছনে ফেলে বেরিয়ে পড়েন সেই অনাস্বাদিতের কাছে ধরা দিতে, প্রতি পদক্ষেপে তিনি তাঁর ছাপ ফেলে রেখে এগিয়ে যান,
“ঘর, বাড়ি, আঙিনা
সমস্ত সন্তর্পণে ছেড়ে দিয়ে মামিমা
ভেজা পায়ে চলে গেল খালের ওপারে সাঁকো পেরিয়ে–”
অথচ, তাঁর অন্তরাত্মা পড়ে থাকে এই সংসারের ভেতর—“ছড়ানো পালক, কেউ জানে না!”
একটা ছোট খুশির খবর দিয়ে শেষ করা যাক। এই প্রথম শঙ্খ ঘোষের কবিতা থেকে গান হচ্ছে সিনেমায়। পরিচালক পাভেল তার আগামী চলচ্চিত্রে শঙ্খ ঘোষের ‘আড়ালে’ কবিতাটি ব্যবহার করছেন। কবিকে প্রচুর শুভেচ্ছা এবং প্রণাম।
এখনও সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে চুপিচুপি অন্যের লেখার প্রুফ দেখতে বসেন এই বর্ষীয়ান কবি। কেউ জানবে না, চুপি চুপি সংশোধন করে দেবেন ত্রুটি। চেয়েছেন ত্রুটি সংশোধন করতে, হয়তো পুরো পারেননি। আজও তাই দরজা খোলা ছেলেমেয়েরা সমানে আসে। ভদ্রলোক কবির বইঘরে মাঝে মাঝে বইসজ্জা বদলে যায়। যে বইটি ভাল লাগে, সেই বইটি চুপিচুপি সেল্ফের ওপর সাজিয়ে দেন। দেখতে জানলে সেই বদল দেখে নিতে হয়। অসম্মান করে নয়, অসৌজন্য প্রকাশ করে নয়, নিজের কথা এ ভাবেই বলেন শঙ্খ ঘোষ।
আগামী কোন রবিবারের সকালেও হয়ত তাঁর বাড়ি যাব, পা মুড়ে বসে প্রণাম করব, তিনি সস্নেহ হাত রাখবেন মাথায়। সাম্প্রতিক কোন কবিতার বই এগিয়ে দিলে আগ্রহভরে উলটে যাবেন পাতার পরে পাতা। অতি অনুচ্চস্বরে বলবেন, সন্দেশটা খাও, ভাল সন্দেশ।
তাঁকে আমার আভূমি প্রণাম।