|| শাম্ভবী সংখ্যা ২০২১ || T3 শারদ সংখ্যায় অলোক মুখোপাধ্যায়

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ


ম্যাটার ইজ নট সো ইজি অভি।পরপর দুটো অ্যাসাইনমেন্ট জাস্ট কেলো করলি। এটা কোন স্টোরি হলো!
কতবার বলেছি সোর্স গুলোকে ইউজ কর।জেসমিনকে ফোন করেছিলি?
-অনেকবার ট্রাই করেছি। কিছুতেই কানেক্ট হচ্ছে না।
-বোগাস।অভি ইউ আর জাস্ট ওয়ান চার অক্ষর ড্যাস ড্যাস।এখনও সময় আছে অভি যদি নামাতে
পারিস চাকরি থাকবে।চিফ এডিটার কিন্তু আমাকে অলরেডি হিন্ট দিয়েছেন।নেহাত দাদা ধরে এসেছিস
নইলে তোর যা পারফরমেন্স! এনি ওয়ে আরেকটা চান্স দিছি দ্যাখ কি করবি।
-কিছু সাজেশন দিলে ভালো হতো বস।
-নাইন ইলেভেনের হিস্ট্রি এবং নাজিবুল্লার ডেথ এই দুটোই আগে ডিলিট করবি।ইউ এস এর ওয়ে অফ
অ্যাকশন, পাব্লিক ফিলিংস এসব নিয়ে আরেকটু চিন্তা ভাবনার দরকার আছে।সুযোগ পেলেই জেসমিন কিন্তু
আফগানিস্তান থেকে যে কোন মুহূর্তে ফ্রান্স নয়তো ইতালী চলে যাবে।ওর কাছে অনেক ইনফরমেশন
আছে।আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে গেলেও জেসমিন এর যা কানেকশন এবং সোর্স সেগুলো ঠিক্ মতো
ইউজ করতে পারলে আমাদের নিউজ জাস্ট ফাটাফাটি হয়ে যাবে।ইউ এস সোলজাররা কাবুলের মেজর
পার্ট এবং এয়ারপোর্ট গার্ড করছে।লেটেস্ট ইনফরমেশন আমেরিকা আরও কিছুদিন ওদের সৈন্য সামন্ত
কাবুলে রাখবে।মোবাইল টাওয়ার গুলো এখনও অক্ষত আছে।সো ডো’ন্ট ওয়েস্ট টাইম অভি।
-থ্যাঙ্ক ইউ বস।একটা কথা ছিল
-কি কথা
-নাইন ইলেভেন, ওসামা বিন লাদে্‌ন, নাজিবুল্লাহর ডেথ এগুলো তো আফগানিস্তানের প্রেজ়েন্ট
সিচুয়েশনের সাথে রিলেটেড তাই না।এগুলো বাদ দিয়ে…..
-বুঝেছি।এতক্ষণ বৃথা সময় নষ্ট করলাম।তুই এক কাজ কর অভি, ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে মানে মানে কেটে
পর।অ্যাসাইনমেন্টটা আমি সৌরদীপকে দিয়ে দিচ্ছি।
সাব এডিটর সাগ্নিক রায়ের চেম্বার থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে অভিনব সান্যাল।তার পর
স্মোকিং জোনে গিয়ে সিগারেট ধরায়।ধোঁয়া গেলার অভ্যাস আগে ছিল না।নিজের অজান্তেই হয়ে গিয়েছে
অভ্যাসের দাস।খবর খুঁজতে ছুটতে হয় নানা প্রান্তে।চা কফি সিগারেট ছাড়া চলে না কিছুতেই।প্যান্টের
পকে্টে মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে।রাইয়ার ফোন।মোবাইল কানে দিয়ে নিজের ডেস্কের দিকে এগোতে থাকে
অভিনব।
বড় কাগজে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা মাত্র দেড় বছর।এর আগে মফস্বল শহরের দৈনিক যুগসন্ধি পত্রিকায়
হাতেখড়ি।আরও আগে দুটো জেলার সাপ্তাহিকে কাজ করেছে অভিনব।খবরের পাশাপাশি ক্যামেরায় ছবি
তোলা দুটোতেই অবাধ বিচরণ।কবিতার প্রতি ওর আলাদা টান এবং ভালোবাসা।রিপোর্ট লিখতে গিয়ে
কবিতার আশ্রয় প্রায়শই নিয়ে ফেলে অভিনব।হেডলাইনের নীচে নিজস্ব সংবাদদাতা সুত্রে প্রকাশিত হলেও
খবরের মাঝখানে টুকরো টুকরো কাব্যিক ছন্দ বুঝিয়ে দেয় কাজটা অভিনবর।সেসব নিয়ে ওর পরিচিত
এবং বন্ধুমহলের উৎসাহের অন্ত নেই।রাইয়া দুবার ফোন করেছে, কল রিসিভ করেনি অভিনব।মেসেজ
পাঠিয়েছে -বসের সাথে মিটিং এ আছি মাই ডিয়ার, পরে কল করছি।অভিনবর দুচোখের দৃষ্টি ল্যাপটপে
নিবদ্ধ থাকলেও ডেস্কের ওপর অফিসের কনফিডেন্সিয়াল মোবাইল সেটটার দিকে খেয়াল রাখছে।সাব
এডিটর সাগ্নিক রায়ের শেষ বাক্যবানে বারে বারে বিদ্ধ হতে থাকে অভিনব।সৌরদীপের হাতে কাজটা চলে

যাওয়া মানে অভিনব শ্যাল হ্যাভ টু কুইট! নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করে অভিনব। রাইয়াকে কল
ব্যাক করতে যাবে সেই মুহূর্তেই ব্লিঙ্ক করে ওঠে ডেস্কের কনফিডেন্সিয়াল সেট।আফগানিস্তান থেকে
আননোন নাম্বার।হিয়ারিং জ্যাক কানে লাগায় অভিনব।
-ইয়েস
-আর ইউ মিস্টার সানিয়াল স্পীকিং?
-ইয়েস ইয়েস, হু আর ইউ!
-আই অ্যাম শাকিলা, কলিগ অফ জেসমিন।সী ইজ বিজি ইন অ্যানাদার কল। প্লীজ স্টে অন লাইন।
অবশেষে জেসমিনকে পাওয়া যাচ্ছে।উত্তেজনার গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে অভিনব।ফোন হাতে নিয়েছে
জেসমিন।
-গুড আফটার নুন সানিয়াল দা।আপকা নাম্বার কানেক্ট করনা রিয়েলি বহুৎ মুশকিল।সিচুয়েশন ইজ
গ্রাজুয়ালি বিকামিং ভেরি ব্যাড হিয়ার।আই থিঙ্ক দে উইল ক্যাপচার এভ্রিথিং উইদিন টু ডেজ………..
প্রায় দশ মিনিট জেসমি্নের সাথে কথা হলো।অভিনব নিজে বলেছে কম শুনেছে বেশি।আফগানিস্তানের
ওভার-অল সিচুয়েশন জানা গেল এবার স্টোরি সাজাতে হবে।কাঁটা ছেড়া করে প্রেজেন্ট করতে দু ঘন্টার
বেশি লাগার কথা নয়।রাইয়াকে সাড়ে ছটায় কাফে নাইন রেস্তোরায় সিট বুক করার জন্য হোয়াটস
অ্যাপে মেসেজ দিয়ে ল্যাপটপে মনোনিবেশ করে অভিনব।

-আমি চিকেন লেমন করিয়েন্ডার সুপ নিচ্ছি তুই?
-আমি তোর থেকে শেয়ার করবো।একটা ক্রিসপি চিকেন ফুল প্লেট বলে দে।
-মনে হচ্ছে তোর মুডটা ঠিক নেই অভি, এনি প্রবলেম! –
না তেমন কিছু না।কপালটা টিপ টিপ করছে।খিদেও পেয়েছে খুব।
-তাহলে আরও এক প্লেট ফিস ফিঙ্গার আর তোর জন্য একটা কফি অর্ডার করি?
অভিনব মুখে কিছু বলে না।মোবাইল সার্ফ করতে করতে ঘাড় নেড়ে সায় দেয়।রাইয়া ওর হাত থেকে
মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয়।
-তুই ধরা পড়ে গিয়েছিস অভি।নির্ঘাৎ বসের কাছে খিস্তি খেয়েছিস নয়তো অ্যাসাই্নমেন্ট নিয়ে ঝগড়া
করেছিস।কি ঠিক বললাম তো?
-সব কিছু বদলে যাচ্ছে রাইয়া।ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটার লোক কমে গেছে।শুধু চাওয়ার পিছনে ছুটে
ছুটে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে সবাই।আমরা টের পাইনি আমরা বুঝতে পারিনি আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
-মনে হচ্ছে কারোর লেখা কবিতার লাইন। –
হ্যাঁ কবি তারাপদ রায়।আমাদের জন্মের আগে লিখেছিলেন।কবিতার নাম “আমাদের সর্বনাশ হয়ে
গেছে”।সবটা মনে নেই, শেষের লাইন গুলো এই রকম-
আমরা টের পাইনি
আমাদের ঝর্ণা কলম কবে ডট পেন হয়ে গেছে
আমাদের বড়বাবু কবে হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছেন
আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।

-আমরা বুঝি সবই অভি তবে দেরীতে।আর বদলের কথা বলছিস!সময়ের সাথে সাথে সব কিছুর বদল
হয় এবং হবে সেটাই স্বাভাবিক।
-বাট চেঞ্জ যেটা হচ্ছে রাইয়া আমরা ধরতে পারছি না।
-সুপ ঠান্ডা করে লাভ নেই অভি।খেতে খেতে বল আমি শুনি।তুই কিন্তু আমার কোশ্চেনটা এড়িয়ে
গেলি।বসের সাথে কি হয়েছে বললি না।
-চাকরিটা মনে হচ্ছে আমাকে ছেড়ে দিতেই হবে রাইয়া।
-ফাইন! কবে ছাড়ছিস?
-যে কোন মুহূর্তে।রেজিগনেশন লেটার রেডি করা আছে।
-কাজটা ছাড়তে চাইছিস কেন?জুনিয়ার রিপোর্টারের খুব চাপ তো হবার কথা নয়।এখন তো পেপা্র
খুললেই আফগানিস্তান।কোভিডের থার্ড ওয়েভ ভোকাট্টা।কি যেন নাম তোর ঐ মেয়েটির যে তোকে টাইম
টু টাইম কাবুল থেকে ইনফর্ম করে?
-জেসমিন
-ইয়েস জেসমিন।ওর সার্ভিস ঠিক ঠাক পাচ্ছিস না, না কি অন্য কিছু!বেশি টাকা পয়সা চাইছে?
-না সেসব নয়।সমস্যাটা অন্য জায়গায়।আ্মার নিজস্ব মতামতের কোন গুরুত্ব থাকছে না।
-বুঝেছি অভি।তোর ইগো ক্ল্যাশ হচ্ছে।এটা ঠিক নয়।
-রাইয়া তুই কি সহজেই সবকিছু বুঝে যাস কিন্তু তোর আমার আমাদের সবার যে কি সর্বনাশের দিন
এগিয়ে আসছে সে্টা বুঝতে পারিস না।
-ঘড়ির কাঁটা আট টা ছুঁই ছুঁই।নটা থেকে নাইট কারফিউ। আমি ক্যাব বুক করছি অভি।তুই আমাকে
বন্ডেল গেটে ড্রপ করে দিবি।বাকি কথা যেতে যেতে হবে।
-জাস্ট আ মিনিট রাইয়া বসের কল।এই নে কার্ডটা রাখ, পেমেন্ট করে বাইরে আয় আমি ততক্ষণে কথা
সেড়ে নিই।কি আজ্ঞা হয় দেখি।

-ফেরার পথে সারাক্ষণ তো বসের সাথে ঝগড়া করে গেলি। কোন কথাই হলো না। ডিনার করেছিস?
-না
-আর রাত করিস না এবার খেয়ে নে।
-তোর ডিনার কমপ্লিট।
-এবার করবো।কাল সকালের অনলাইন ক্লাশের পেপারটা জাস্ট ফিনিশ করলাম।আর ভালো লাগছে
না।স্কুল টা কবে যে খুলবে!বাচ্চাগুলোকে খুব মিস করছি।
-তোদের স্কুল যদি আর না খোলে!
-কি যে বলিস না তুই অভি।স্কুল না খোলার কি আছে!কোভিড সিচুয়েশন ডেভেলপ করলেই ধীরে
ধীরে সব খুলে যাবে।ভাবছি বাবা মাকে কিছুদিনের জন্য তখন কলকাতায় নিয়ে আসব।
-ভুলেও ওটা করতে যাস না।গ্রামের বাড়িতে ওনারা যেমনটি আছেন ঠিক তেমনটাই থাকুন।পারলে তুই
পুজোর কদিন বাড়ি ঘুরে আয়। জাস্ট আ মিনিট রাইয়া নুডুলস টা গরম হয়ে গিয়েছে।তুই রাতে কি
খাচ্ছিস?
-পাস্তা আর ভুনা চিকেন।চল খেতে খেতে কথা বলি।
মাইক্রোতে খাবার গরম হবার মাঝেই রাইয়ার মোবাইল পিং করল।অভি লিখছে “ভাঙা আয়নায়, ভুল
বায়নায় হাসে কার মুখ, তবু তার টানে মিছে আভিমানে, ভেসে যায় বুক”।
-এটা আবার কা্র থেকে টুকলি করলি।
-সালমান হাবীব।কবিতায় গল্প বলা মানুষ।
-বাহ, কথা গুলো কিন্তু দারুণ।
-গল্পটা কিন্তু করুণ
-কি রকম!
-ঐযে তুই বললি না স্কুলের বাচ্চাগুলোর জন্য তোর মন আনচান করছে।আমি বললাম স্কুল যদি আর

না খোলে।তুই আমাকে আশার বানী দান করলি।
-তো কি হলো।যেটা হবে এবং হওয়া দরকার সেটাই বলেছি।অভিমানে বুক ভাসার কোন কারণ তো
নেই অভি।আর তুই জানিসনা ভাঙা আয়নায় মুখ দেখতে নেই।
-বেশ একটা সিরিয়াস কথা এবার তাহলে বলি।
-অফকোর্স, বাট হেঁয়ালি করবি না।যা বলার সোজা সাপটা বলে ফেল।
-অনেক সময় লাগবে কিন্তু। –
-লাগুক, আমি শুনবো।
-তুই কি এখনও বিশ্বাস করিস যে পৃথিবীটা আগের মতো হবে!
-মাই গড! আমি ভাবলাম প্রেম-পীরিতির কথা বলবি।হঠাৎ পৃথিবী নিয়ে শুরু করবি বুঝতেই পারি
নি।এনি ওয়ে পৃথিবী আগের মতো হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। অনেকগুলো ভ্যাকসিন চলে এসেছে,
এবং আরও আসবে।বেটার ওয়েট ফর আ নিউ ওয়ার্ল্ড।
-ইয়েস আ নিউ ওয়ার্ল্ড।কিন্তু নতুন এই পৃথিবীতে তুই আমি আমরা সবাই কোথায় গিয়ে দাঁড়াব কেউ
জানে না।আর কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে যে বায়াসনেস তার পিছনেও কিন্তু একটা গল্প আছে।ভ্যাকসিন
নামক যে পদার্থটি আমাদের শরীরে ঢুকছে সেটা জাস্ট ইমিউনিটি বুস্ট আপ করবে এর বেশি কিছু নয়।
-সেটাই কি যথেষ্ট নয়!বেঁচে থাকার একটা উপায় থাকছে।জটিল কোন রোগ না থাকলে কোভিডের
এগেইনস্টে যুদ্ধ করে টিকে থাকা তো যাবে।চিকিৎসাবিজ্ঞান তো তাই বলছে।এর পিছনে অন্য কি গল্প
আছে আমি জানিনা।
-সেই গল্পটাই তো বলতে চাইছি রাইয়া।কোভিড ভাইরাস কিন্তু নেচার থেকে আসেনি।এটা প্ল্যানফুলি
ক্রিয়েটেড ইনসাইড ল্যাব এবং তার পেটেন্ট পর্যন্ত আছে।তুই চাইলে আমি তোকে ওয়েবসাইটের রেফারেন্স
দিতে পারি।সবচেয়ে বড় ব্যাপার কি জানিস প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস চরিত্র পরিবর্তন করবে অতএব এর
নির্দিষ্ট কোন ভ্যাকসিন তৈরি হওয়া সম্ভব নয়।সর্প হয়ে দংশন তার পর ওঝাগিরি।প্রথমে ভাইরাস ছেড়ে
মানুষকে আক্রমণ তারপর ইমিউনিটি বুস্টার।ফার্মাসিউটিক্যাল আর মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রির বিশ্বজোড়া রমরমা
কারবার।
-প্লিজ অভি ছোট মাথায় এসব আর ঢোকাতে চাই না।তুই রাখ এবার আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
-আমি তো আগেই বললাম একটু সময় লাগবে।
-আর কতক্ষণ বকবক করবি তুই?
-আমি বাজে বকছি!তোর তাই মনে হচ্ছে।আসলে কি জানিস আমরা কেউ সেভাবে ভাবিনা ভাবার চেষ্টা
করি না।আমাদের চিন্তা ভাবনার জগৎ ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে রাইয়া।
-বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদ জোগাতেই হিমসিম খাচ্ছে সবাই, ভাবার অবকাশ কোথায় অভি!
-ইউ আর হান্ড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট রাইয়া।এটাই তো ওরা চেয়েছিল।
-ওরা বলতে তুই কাদের মিন করছিস।
-যারা এই বিশ্বের সমস্ত সম্পদের অধিকারী হতে চায় আমি তাদের কথা বলছি রাইয়া।ফোর-জি্র হাত
ধরে আমরা অলরেডি কর্পোরেট সিস্টেমের প্রোডাক্ট হয়ে গিয়েছি।ডাক্তার ওষুধ খাদ্যখাদক পোশাক সবকিছু
অনলাইন।এরপর ফাইভ জি আসছে।বাইরের দুনিয়ার সাথে কোন যোগাযোগ থাকবে না।জাস্ট দশটা বছর
অপেক্ষা কর।স্কুল কলেজ অফিস দোকান বাজার বলে কিছুই থাকবে না।সমস্ত সার্ভিস থাকবে বিগ
কর্পোরেট হাউসের হাতে।এখন তুই অনলাইনে বাচ্চাদের পড়াচ্ছিস কিন্তু তখন টিচারদের অস্তিত্ব থাকবে
না।সফটওয়ার প্রোগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে পড়াশুনা ঠিক যেমন ওরা চাইবে।নির্বান্ধব হয়ে ঘরে বসে
বসে আমরা হয়ে যাব উন্মাদ নয়তো কঠিন রোগাগ্রস্ত।ফয়দা লুটবে বিগ হাউস। শুনছিস আমার
কথা।হ্যালো ……
-হ্যাঁ শুনছি আর ভাবছি
-রিয়েলি! ভেরি গুড।তোকে ভাবাতে পেরে ভালো লাগছে রাইয়া।
-আমি তোর কথা ভাবছি, অন্য কিছু নয়।মাথার মধ্যে এত চাপ কেন নিচ্ছিস তুই অভি?

-কিসের চাপ রাইয়া।এই দিনগুলোর ছবি আমি দেখে ফেলেছি তাই ভাবছি।একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার
বুঝলি।এখনও সময় আছে মানুষকে সচেতন করতে পারলে …….
–ক্যারিয়ার ভুলে তুই কি এখন অ্যাক্টিভিস্ট হতে চাইছিস?
-দরকার হলে তাই হবো রাইয়া।তুই পাশে থাকবি কি না বল।আর ক্যারিয়ারের কথা বলছিস!তোর
আমার আমাদের সবার কোয়ালফিকেশন সার্টিফিকেটগুলো দশ বছর পর জাস্ট আলমারিতে পরে
থাকবে।কোন কাজে আসবে না।
-প্লিজ অভি এবার তুই রাখ।ঘুমে আমার চোখ জড়িয়ে আসছে। গুড নাইট।

ভাগ্যিস মোবাইলে এলার্ম দেয়া ছিল না হলে ঘুম ভাঙা খুব মুশকিল ছিল।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্রাশ
হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় রাইয়া।আকাশটা থম মেরে আছে।জোর একটা বৃষ্টি নামবে।ঘরের
ভেতর রাইয়ার মোবাইলে আশা ভোঁসলের “কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে” বেজে ওঠে।সাতসকালে কার
ডাক এলো রে বাবা।বেসিনের পাশে টুথব্রাশ রেখে দ্রুত পায়ে কল রিসিভ করে রাইয়া।
-আর ইউ মিস রাইয়া?
-ইয়েস রাইয়া ইজ মাই নিকনেম গুড নেম……….
-রাইয়া আমি সাগ্নিক রায় কথা বলছি।অভিনবর সিনিয়র কলিগ। –
-ওয়াও! গুড মর্নিং স্যার
-আজকের সকালটা আমাদের কাছে খুব শুভ নয় রাইয়া।অভিনব ইজ অ্যাডমিটেড ইন গ্রীন ভিউ
হসপিটাল।
-হোয়াট? দিজ ইজ আনবিলিভএবল! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।কি হয়েছিল জানেন আপনি? কাল
রাতে কতক্ষণ কথা বললাম।
-স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী সকালে পার্কে জগিং করতে করতে হঠাৎ বেঞ্চের ওপর শুয়ে পড়ে তারপর
জ্ঞান হারায়।লেক থানার পুলিশ এসে ওকে হাসপাতালে ট্রান্সফার করে।পকেটের মোবাইল আনলক করে
ওর আইডেনটিটি কনফার্ম করার জন্য আমায় ফোন করে।অভিনবর বাবা অসুস্থ তাই ওদের ডা্নকুনির
বাড়িতে এখনও কিছু জানাইনি।ওর দিদির নাম্বারে ট্রাই করে পেলাম না।আমি আধ ঘন্টার মধ্যে
হাসপাতালে পৌঁছে যাচ্ছি।
-কি হয়েছে ওর।ডাক্তার কিছু বলেছে?
-সম্ভবত ব্রেইন স্ট্রোক
-ও হো……….
এক দলা কান্না গলায় আটকে আসে।বাকরুদ্ধ হয়ে যায় রাইয়া।অভিজ্ঞ এবং স্থিতধি সাগ্নিক রায় সাময়িক
বিহ্বলতা কাটিয়ে ভরসা দেন –চিন্তা করাবেন না মিস রাইয়া।আমরা সবাই আছি তো।ধীরে সুস্থে
হাসপাতালে চলে আসুন।একদম তারাহুড়ো করবেন না।
-সিওর, হসপিটালের নামটা রিপিট করুন প্লিজ।
-গ্রীনভিউ সুপার স্পেশালিটি। আশা করি আমাদের জুনিয়ার কলিগ সৌরদীপ এতক্ষণে ওখানে পৌঁছে
গিয়েছে।ওর কনট্যাক্ট নাম্বার আপনার হোয়টাস অ্যাপে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।