অনুগদ্যে অমিত মুখোপাধ্যায়

চৈতি হাওয়া 

চৈত্রের উজ্জ্বল রৌদ্রে পুড়ছে আকাশ, পুড়ছে মাঠ। আমি সেই আকাশ মাথায় করে, মাঠ পেরিয়ে হাঁটছি রোজ। এমন মাঠ পেরোনোর সময় আমার অন্য একটি মাঠের কথা মনে পড়ে। সেই বিস্তীর্ণ পাথুরে মাঠে একাকী দাঁড়িয়েছিল একটি পাতা ঝরে যাওয়া মহুয়া গাছ। নিরন্তর ঘুঘু পাখির ডাক যেন সেই মাঠের নিস্তব্ধতাকেই গাঢ় করছিল। মাঠের এক প্রান্তে দূরে, অনেক দূরে বাঁচার আশার মতো দাঁড়িয়ে ছিল কচি পাতায় ঢাকা, ফুল ফোটা শালবন। আজও আমার সব থেকে বেশি মনে আছে সেই ঘুঘুর ডাক। কোভিড ডেল্টা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যখন ভেন্টিলেশনে ছিলাম তখন ঘোরের মধ্যে যেন সেই শুষ্ক মাঠের ঘুঘু পাখির ডাক শুনতাম। নাক দিয়ে যখন ঘন্টায় ষাট লিটার অক্সিজেন শরীরে ঢুকছিল তখন সেই তপ্ত মাঠে বাতাসের হু হু শব্দ টের পেতাম। এসব আচ্ছন্ন অবস্থায় শোনা। সচেতন অবস্থায়ও নিজেকে ওই তৃণশূন্য পাথুরে প্রান্তরের মত লাগে। পত্রশূন্য মহুয়া গাছটার মত লাগে। আর ঘুঘুর ডাক যেন বুকের কোটর থেকে বেরিয়ে আসা ব্যর্থতার হাহাকার। তবু ওই দিগন্তের সবুজ, ফুল ফোটা, গন্ধে আমোদিত শালবনের মত আশায় বাঁচি। আজ যাচ্ছি ফুলজোরি পাহাড়ে। দেওঘরের এই পাহাড় কিছুটা বৃক্ষশূন্য, কিন্তু পাহাড়তলিতে এখন শাল, পলাশের উৎসব। ওই পাহাড় ও পাহাড়তলির জঙ্গলে হায়না, খ্যাঁক শেয়াল, নীলগাই, সজারু, অজগরের মত অজস্র বন্যজীবের বাস। হাজার হাজার পাখি। তবে আমার আকর্ষণের কেন্দ্রে ওই নব পল্লবদল। ফুলজোরি যেতে যেতে কামনা করি, সবার জীবন নবপত্রে পল্লবিত হোক।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!