• Uncategorized
  • 0

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় আরিফা খাতুন

বসন্তের ঝরা পাতা

আজ ২৫ শে বৈশাখ, বিকেল হয়ে এসেছে, ঝড়ো
বইছে মনে হচ্ছে এই বৃষ্টি এলো বুজি , মেয়েটার বাড়ি ফেরার সময় হয় না , আর চিন্তা করতে পারছে না তাই বাইরে বের হয়ে আসে । ওমা! মিলি তুই এই খানে বসে আছিস কেন ? আমার চিন্তা হচ্ছিল যে, কি দেখছিস বল তো ? মিলি – মা , আমাদের লেটার বক্সে কোন চিঠি এসেছে কি জানো । মা – তোর আবার পাগলামি শুরু হল এখন ফোন ইমেল এর যুগ তোকে কে চিঠি পাঠাবে বল তো ? এই ঘটনা আজকের নয় পাঁচ মাস আগে থেকে মিলি এমন পাগলামি করে চলেছে । রোজ দুপুরে বের হয় অন্ধকার নামলে তারপর বাড়ি ফিরে আসে , লেটার বক্স টা বার বার দেখতে থাকে । পাড়ার সবাই তাকে নিয়ে কত কথা বলে , এই তো সে দিন গোপালের মা এসে বলছিল তোমার মেয়ে টার বিয়ে দাওনা ও সারাদিন চিঠি ফেলা বক্সের সামনে বসে থাকে ওর কি মাথার কিছু গণ্ডগোল আছে ? হাসতে হাসতে মিলির মা বলেছিল কি যে বলো দিদি! কিন্তু রোজ মেয়ের এমন ব্যবহার বাবা মার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এক এক লোক এক এক কথা বলে । মিলির মা বাবা মেয়ে কে বিয়ে দেওয়ার ও অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু মেয়ে বিয়ে করবে না কেন তার কোন উত্তর দেয় না ! মিলির ভাই ও অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছে দিদি তুই বল তোর যদি কাউকে ভাল লেগে থাকে , মিলি তাও ও কোনো কথা বলেনা ,শুধু বলে একটা চিঠি আসলে সব ঠিক হবে। বাবা মেয়ে কে নিয়ে চিন্তায় একটা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যায় । তিনি চেকাপ করে বলেন সব ঠিক আছে কিন্তু লেটার বক্সের ব্যাপারটা বাবা মা কিছু বলেন নি।
হঠাৎ ঝড় তীব্র গতি নেয় মিলি তাও বাড়ির ভিতর যাচ্ছে না দেখে বাবা কে ডাকতে যায় মা , ভিতরে যেতেই তীব্র একটা আওয়াজ পাঁচিল এর ও পাশে থাকা আম গাছের বড় ডালটা ভেঙ্গে পড়লো , মিলি একবার মা বলে চিৎকার করে উঠে তারপর মাটিতে পড়ে গেল , ডালটা ঠিক মাথার উপর পড়েছে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে, মিলির বাবা, ভাই সবাই বের হয়ে আসে মিলি কে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখে আই.সি.ইউ তে পাঠায় অনেক চেষ্টা করে ও মিলির বাঁচা সম্ভব নয় তাই বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেওয়া হল । বাবা শেষবারের মতো মেয়েকে দেখতে গেলো মেয়ে অনেক চেষ্টা করে একটা কথা বলল ” লেটার বক্স” না আর কোনো কথা নেই , মেয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। তারপর কেটে যায় দীর্ঘ এক মাস , একমাত্র মেয়ে কে হারিয়ে মা বাবা অসহায় হয়ে পড়েছে । মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা রোজ একবার করে লেটার বক্স দেখতো সত্যি কি কোন চিঠি আসবে ? হ্যাঁ, আজ এসেছে একটা চিঠি , বাবা চিঠিটা নিয়ে যায়, মিলির মা তাড়াতাড়ি বাইরে এসো দেখো আমার মিলির চিঠি এসেছে , মা আর ভাই আসে তিন জন আজ কেঁদে পাগল । বাবা চোখ মুছে চিঠি টা পড়তে শুরু করে ।

প্রিয় মিলি,
আশা করি তুমি ভালো আছো তোমাকে কথা দিয়ে ও আমি এত দিন চিঠি পাঠাতে পারি নি তার জন্য ক্ষমা করো। তোমাকে আমি কত বার বলেছি তুমি একটা ফোন নাও ,আমি কিনে ও নিয়ে গেলাম তাও তুমি নিলে না । তুমি আগের যুগের মতো প্রেম করবে এটা তোমার জেদ । তোমার মনের ভুল ধারণা আর বদলাতে পারলাম না । এখন না কি সবাই প্রেম করে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য কিন্তু কি জানো সত্যি করে কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে কখনো কষ্ট দেয় না । আমরা যখন কলেজে পড়তাম তখন‌ তোমায় চিঠি দিতাম মনে আছে মিলি ? তোমাকে দূরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলেও যেতে চাইতে না , তুমি বলতে উওমকুমার আর সুচিত্রা সেনের মতো প্ৰেম করবে ইমরান হাসমি আর মল্লিকার নয় । দেখো ছয় মাস হয়েছে তাও তোমার আমি একটুও কম ভালোবাসি না । চিঠি পাঠাতে পারিনি , জানো তো নতুন চাকরি তাও অন্য রাজ্যে, রবিবার ছাড়া ছুটি নেই । রাগ কোরো না আর, তোমার কোনো কথা শুনবো না আর আমি পরের মাসে বাড়ি ফিরবো তোমার বাবা মা কে জানাবে আমাদের কথা ,আমি আর একা আসব না তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসব, বিয়ে করবো আমরা । আর শোনো এটা আমার ফোন নম্বর ……………….দয়া করে নিজের বাড়ির কারো বা নিজে যদি ফোন কিনে থাকো নম্বরটা দেবে , চিঠি পেয়ে ফোন করো ।।। ইতি তোমার অজয়। চিঠি টা পড়ার পর বাবা মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকলো মা’রে কেন আমাকে একবার বললি না তুই । মিলির বাবা ওই নম্বর এ ফোন করে কেঁদে কেঁদে বলল বাবা তোমার মিলি আজ বসন্তের ঝরা পাতা, আর ফিরবে না , অনেক দেরি করে যে পৌঁছালো চিঠিখানা ।।। সমাপ্ত ।।।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।