ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (অন্তিম পর্ব )

কিশোর উপন্যাস

ঢাকা টু মানিকগঞ্জ

: আমরা মানে? আমার যাওয়ার সাথে তোদের সম্পর্ক কী? তোরা কালই যা। তোর মামা-মামী আছে না? আদোর করে খাওয়াবে পুকুরের বড় বড় মাছ, পালের বড় বড় মুরগি।
: তোমার থাকতে হবে। ছেলে নিয়ে যাব। তোমাকে দেখবে, তোমার বিয়ের ব্যাপরে…..।
: ওমা! ঘটকালীর ব্যবসা শুরু করেছিস? তোকে দিয়ে হবে। খুব লাভজনক ব্যবসা। তা অফিস নিয়ে ফেল। শোন, ল্যাভেন্ডিস টাইপের, ভাদাইম্যা টাইপের আনস্মার্ট কিছু নিয়া যাবি না।
: ‘কিছু’ মানে? মানুষকে ‘কিছু’ বলছো কেন?
: আচ্ছা, যা খুশি নিয়া যাইস। এখন যাই।
কঙ্কনা আপু একটা সিএনজি ডেকে উঠে পড়ল। আকমল ভাইকে বলল: স্যার, ভার্সিটিতে আমি আপনার সাথে দেখা করবো। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হয়েছি স্যার।
আকমল ভাই মিটিমিটি হাসি হেসে বললেন: ধন্যবাদ, দেখা হবে।
রাস্তার ওপারে গিয়ে গাছে নিচে একটা চায়ের দোকানে বসে আমরা চা খেলাম। চা খেতে খেতে আকমল ভাই বললেন: স্বীকার করছি যে, আমার কারণেই তোদের ওপর দিয়ে এতটা ভোগান্তি গেল।
আমরা সবাই তাকালাম আকমল ভাইয়ের মুখে। আকমল ভাই বললেন: আমার সাথে দেখা না হলে তোরা সোজা মানিকগঞ্জ চলে যেতি। গানের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা, পদ্মানদীতে ভাসা এসব কিছুর প্রস্তাবই গিয়েছে আমার কাছ থেকে। সুতরাং আমি দুঃখিত। আমাকে তোরা ক্ষমা করে দিস।
মাহাবুব ভাই বললেন: মহিলাদের মতো ইমোশন দেখাচ্ছিস যে? এটু আগে একটা মহিলাকে দেখলিতো কেমন স্ট্রং-স্ট্রং নিনজা।
: শোন, চাচা-চাচীকে নিয়ে গিয়ে কঙ্কনাকে দেখে আসিস। ওকে বিয়ে করলে তুই সুখি হবি। খুবই ভালো একটা মেয়ে।
: আমার মতো ল্যভেন্ডিসকে ও বিয়ে করবে না।
: এখন না হয় ল্যাভেন্ডিসের মতো লেগেছে। তখন কি আর তা লাগবে? তোর মতো সুদর্শন পুরুষ খুব কমই আছে।
: আপাতত আর মেয়ে দেখার ইচ্ছা নেই। বিয়ের সিদ্ধান্ত আরও পেছালো।
: তাহলে যে আমি নিজেকে অপরাধী মনে করবো।
: মহিলা কেসিমের ন্যাকামো করিস না আমার সামনে। যা, তোর গন্তব্যে চলে যা। আমরা বাসায় ফিরবো। বাসায় ফিরে গোসল করে, খেয়েদেয়ে ঘুমাবো। মনে হচ্ছে, কয়েক যুগ ধরে ঘুমাই না।
আকমল ভাই একটা সিএনজি ডেকে চলে গেলেন। আমরা রিকশা ডেকে দুইজন করে একেক রিকশায় উঠলাম। মাহাবুব ভাই আর আমি উঠলাম এক রিকশায়।
আমার পাশে বসে মাহাবুব ভাই চুপচাপ। আমি কিছু বলতে ভরসা পাচ্ছি না, পাছে মাহাবুব ভাই রেগে ওঠেন। তার মেজাজ এখন বোঝা কঠিন।
একটু পর মাহাবুব ভাই-ই মুখ খুললেন। বললেন: তুই ভীষণ মিথ্যা বলতে পারিস।
আমি চমকে উঠলাম। এর মাঝে মাহাবুব ভাইয়ের কাছে বিশেষ কোনো মিথ্যা বলেছি বলে তো মনে পড়ে না। আমি বললাম: কখন, কী মিথ্যা বললাম?
: তুই তো বলেছিস যে, তোর কঙ্কনা আপুর মতো সুন্দর মেয়ে ঢাকা বিভাগে একটাও নেই।
: কেন, কঙ্কনা আপু কি সুন্দর না?
: এতটা সুন্দর মেয়ে আমি এই জীবনে একটাও দিখিনি। আমার বিশ্বাস ওর চেয়ে সুন্দর মেয়ে এই দেশে একটাও নেই। তুই ওকে ডিগ্রেড করেছিস।
আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। মাহাবুব ভাই বললেন: হাসিস কেন? আমি কি ভুল কিছু বলেছি?
: আপনার চোখে….
: শুধু আমার চোখে না, সবার চোখেই তাই মনে হবে।
: আগামি সপ্তাহে আবার কঙ্কনা আপুকে দেখতে যাব। তখন গিয়ে পাকাপাকি কিছু করে আসবো।
: আর হয় না। সে যদি আমাকে এই অবস্থায় দেখে না ফেলতো তো একটা কথা ছিল। তোদের পদ্মানদী দর্শনই আমার জীবনের কাল হলো। পদ্মা নদী আমার সব স্বপ্ন, আশা ওর ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আমার হৃদয়টাকে শূন্য করে দিয়ে গেল।
: আপনি এত আপসেট হচ্ছেন কেন? ওর সেলেফোনের ছবিগুলো খোয়া যাবার কারণে ওর মাথা ঠিক ছিল না। সেলফোনের ছবি মেয়েদের জীবন-মরণ।
: আর কোনো সান্ত¦না বাক্যে আমার মন শান্ত হবে নারে গাব্বু। আমি একটা উপন্যাস লিখবো। উপন্যাসের নাম হবে-পদ্মার ঢেউরে….।
তারপর মাহাবুব ভাই গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলেন: পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় পদ্মে নিয়ে যা যারে…..।
রিকশাওয়ালা বলল: ঢাকা শহরে রিশকায় বইসা পদ্মা নদীর গান, বিষয় কী?
আমি বললাম: পদ্মা নদী দর্শনের কারণে তার একটা স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
: পদ্মানদী তো মানুষের স্বপ্নই ভাঙে। আমার বুকেও তো কত স্বপ্ন ছিল। সর্বনাশা পদ্মানদী ঢেউয়ে ঢেউয়ে সব ভাইঙ্গা দিল। ঘর, বাড়ি, জমি, সখিনার সাথে ভালোবাসা সব….। আইজ আমি ঢাকা শহরে রিশকা চালাই। এমন তো কথা ছিল না।
রিকশাওয়াওয়ালা গাইতে লাগলো: ও সখিনা গেছোস কি না ভুইলা আমারে/ আমি এহন রিশকা চালাই ঢাহার শহরে।

শেষ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।