ধারাবাহিক উপন্যাসে আবুল কালাম আজাদ (পর্ব – ১১)

কিশোর উপন্যাস

ঢাকা টু মানিকগঞ্জ

১১।।
মাহাবুব ভাই হনহন করে সামনে হাঁটা ধরলেন। শত হলেও আমরা মাহাবুব ভাইয়ের লোক। আমরা তার পিছু নিলাম। আকমল ভাই লম্বা পা ফেলে মাহাবুব ভাইয়ের সামনে গিয়ে পথ আটকালেন। বললেন: কোথায় যাচ্ছিস? ক’দিনের পিচ্ছিল এঁটেল মাটি। রাগের মাথায় এলোমেলো হাঁটতে গিয়ে পড়ে হাত-পা কিছু একটা ভেঙে বসবি। তখন আর মেয়ে দেখা হবে না। রাগের মাথায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এটা প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি নিজে রাগ করলে দেখিস না সবকিছু কেমন লন্ডভন্ড করে দেয়।
মাহাবুব ভাই থামলেন। কিন্তু মুখে কিছু বলেন না। ফোঁস ফোঁস করতে লাগলেন। আকমল ভাই বললেন: বড়ো একটা নৌকা ভাড়া করে সারা রাত নৌকায় করে পদ্মার বুকে ভাসবো। আছে এমন অভিজ্ঞতা?
: এই বৃষ্টির ভেতর পদ্মার মুক্ত বাতাসে আর কিছুক্ষণ থাকলেই আমার জ্বর হবে, সাথে নিউমোনিয়া হ্যাঁচ্চো…!
: তোরা শহরের ননীর পুতুল তা জানি। তবে তোর এই হাঁচিটা নকল। হাঁচি কেউ একটা দেয় না। কমপক্ষে দুইটা। ঠিক আছে, ছৈওয়ালা নৌকা ভাড়া করবো। তোরা ছৈয়ের নিচে বসে থাকবি।
আমরা ঘাটে এসে উপযুক্ত একটা নৌকা খুঁজতে লাগলাম। বর্ষার উত্তাল পদ্মায় ছোট নৌকা ভাড়া করা ঠিক হবে না। আবার ছৈ থাকতে হবে, মাঝিও হতে হবে দক্ষ।
বলে-ব্যটে এক হয় না। নৌকা বড় হলে ছৈ থাকে না। ছৈ থাকলে নৌকা হয় ছোট। আবার নৌকা বড় এবং ছৈ দু’টো পেলে মাঝি দেখে পছন্দ হয় না।
কিন্তু চেষ্টায় সবই মেলে। ঘন্টা খানেক খুঁজে একটা নৌকা পাওয়া গেল। বেশ বড়। অর্ধেকটা ছৈ দেয়া। ছৈয়ের নিচে ঘুমানোও যাবে। দুইজন মাঝি। একজন নবীন। একজন প্রবীণ। নবীনের বয়স বিশ/বাইশ। প্রবীনের বয়স পঞ্চাশের ওপরে। তবে দু’জনেরই সুঠাম দেহ।
আকমল ভাই বললেন: আপনাদের নৌকায় করে ভাসতে চাই।
প্রবীণ মাঝি বললেন: ভাসতে চাইলে ভাসবেন।
: ২/৩ ঘন্টার জন্য কত দিতে হবে?
: ৫০০ টাকা।
: আর সারা রাতের জন্য?
: ঐ ৫০০ টাকাই।
: যা বাব্বাহ! এ দেখছি দুধ আর ঘোল একই দামে বিক্রি হয়। তাহলে আজ রাতের জন্য আপনাদের নৌকাটা ভাড় করলাম।
: ঠিক আছে।
: নৌকায় কি ইঞ্জিন আছে?
: জি আছে।
: ইঞ্জিনের ভটভট শব্দে তো ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাবো না, বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাবো না, বাতাসের শোঁ শোঁ শুনতে পাবো না। প্রকৃতির কাছে গেলে নীরবতার দরকার।
: আপনারা না চাইলে ইঞ্জিন ছাড়বো না। হাল-বৈঠাও আছে। আমরা দুইজন দক্ষ মাঝি। আমাদের চাইতে দক্ষ মাঝি এই ঘাটে নাই। যদি কাউরে বাইর করতে পারেন তো কোনো ভাড়া নিবো না, উপরি আপনাদের ৫০০ টাকা দিবো।
: আপনার কথা শুনে প্রীত হলাম। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হলে কম-বেশি দক্ষ হতে হয়। চ্যালেঞ্জ দেয়ার সাহসও সবার থাকে না।
আমরা নৌকায় উঠে গেলাম। আমাদের উৎসাহের কমতি সেই। কিন্তু মাহাবুব ভাই মনমরা।
আকমল ভাই বললেন: তোরা বস, আমি খাবার নিয়ে আসছি।
মাহাবুব ভাই বললেন: কী আনবি?
: ফল, রুটি, ভাজি আর বিস্কুট, চানাচুর এইসব।
: রাতে আমার ভাত খাওয়ার অভ্যাস।
: আজব লোক! এই বৃষ্টির মধ্যে এতগুলো মানুষের জন্য ভাত-তরকারি আনা সম্ভব? আর এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করবি। ডাক্তাররা রাতে ভাত খেতে নিষেধ করেন। ভুড়ি বেড়ে গেলে বিয়ে করা সমস্যা হবে। আজকাল মেয়েরা ভুড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ করে না।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।