সাতে পাঁচে কবিতায় আকাশ কর্মকার

বিশপুরাণ

শোনো শোনো সুধীজন, শোনো দিয়া মন
এবার শুরু হচ্ছে পড়া বিশের সাতকাহন।
কেমন কাটবে বিশ বিশ, করছিল মন ফিসফিস
তার যে ছিল অন্য প্ল্যান, রাখবে এবার বন্দী
সময়গুলো পেরিয়ে গেলো, ঝুলিয়ে রেখে বন্ধ ঘড়ি
রেখেছে ঘিরে সকলকেই বিচ্ছেদের গন্ডী।
মানুষজাতি সর্বোত্তম, ক্ষুদ্রাতি সে জীব,
অনায়াসেই দেখিয়ে গেল কারে কয় মৃত্যু ভয়
বেপোরোয়ারা পৌঁছে গেল পরলোকের দ্বারে,
থামল যারা, মানল যারা, করল তারাই জীবন জয়।
রক্তে ঘামে ভেজা রাজপথ, দুরন্ত পরিযায়ী
রাষ্ট্র কেবল ভ্যাবলা চোখে তাকিয়ে দেখে একলা
কাজ হারানো লোকের দল হাঁটতে জানে মাইল
গরীবের উপর সুযোগ বুঝে সবাই নেয় বদলা।
সদ্যোজাত মাতৃক্রোড়ে, রাস্তা যায় রক্তে ধুয়ে
খবর জুড়ে ট্রেনের ধাক্কায় শ্রমিকদের ছুটি
ওদিকে আবার শিশু আগলায় মায়ের মড়া
হাসছে তখন রেললাইনের শুকনো পোড়া রুটি।
যুদ্ধ কেবল সীমান্তে নয়, চলেছে লড়াই হাসপাতালে
যুদ্ধ জয়ে ভেন্টিলেশন উঠেছে হয়ে হাতিয়ার
‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ বুঝেছে মানুষ কালের ধ্বনি শুনে
পদবীহীন আল্লাহ ভগবানের স্থানে পূজ্য কেবল ডাক্তার।
বিদেশে যখন মৃত্যুমিছিল, এখানে তখন বসন্ত
পলাশ প্রেমে পাগল মন, কদিন পরেই উদাস ফাগুন
সচেতনতার বার্তা যখন নাড়ল কড়া দরজায়,
দেরী তখন হয়েই গেছে, নিভছে না আর চিতার আগুন।
সময় ছিল মানুষ চেনার, আপন প‍র বুঝে নেওয়ার
নিজের বলা লোকগুলো সব রইল শুয়ে মুখ ফিরিয়ে
অচেনা মানুষ ভরসা দিল কথার ছলে চোখের জলে
চেনারা তাই শিক্ষা দিল সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে।
এরই মাঝে উঁকি দিল জোরালো এক ঘূর্ণিঝড়
পোড়া মানুষ পুড়ল আবার, নিঃস্ব হল ক্রেতা
নেতাদের মিছিল শেষে দাঁড়িয়ে দেখে শিশু
আঁধারে মোড়া সভ্যতায় আলোর বিলাসিতা।
রাষ্ট্র যখন লুকিয়ে পোড়ায় ধর্ষিতার দেহ
লকডাউনও লজ্জা পায়, ঊর্ধ্বমুখী ধর্ষণের পারদ
বাদুড় মাংস গল্প শোনায় মারণাস্ত্র করোনার
নারী মাংসে থাকেনা তখনও কোনোই অবরোধ।
ক্রমশঃ যেনো মানবজাতি হারিয়ে ফেলছে হুশ
বোকার মতন জ্বালিয়ে দিল মায়ের ফুসফুস।
শুধু কেন বিদেশ বিভুঁই, ঘরের পাশের শুশুনিয়া
নিজের ধ্বংস নিজে দেখে হাসতে থাকে পোর্শিয়া।
ধীরে ধীরে খুলছে সবই, নামছে মানুষ রাস্তায়
ঝুলছে তালা আজও শুধু স্কুলের গেটটায়
মিছিলের পর মিছিল যায়, উড়িয়ে দিয়ে ধুলো
রূপকথা হয় সাম্যবাদের আষাঢ়ে গল্পগুলো।
বৈধতা পায় মুখোশ, মুখোমুখি কত অপ্রিয় মুখ
সাজানো কবরের পাশ দিয়ে বয়ে যায় বিগত শোক
এখানেই বিশ্বাসে ধরা হাত, সেজে ওঠে গোধূলি
পরক্ষণেই মৃত্যুর দীর্ঘশ্বাস, ছেড়ে যায় নিজের লোক।
বুড়োর ছিল চার ছেলে তবুও হল কাঁধের অভাব
মৃত্যু শুধু নিজের হল, ভাইরাসের উড়ল ধ্বজা
উন্নয়নের প্রভাতফেরীর শেষে ক্লান্ত মনে বলল সবাই
প্রকৃতিই একচ্ছত্র অধিপতি, আমরা অসহায় প্রজা।
কালো মেঘের ওপারে লুকিয়ে হাসে রূপোলী রেখা
মৃত্যুর অবসানের পর একুশে হোক্ জীবন লেখা।
হতাশা আর বেদনার স্মৃতি গাঁথা থাকুক ক্রুশে
বৃষ্টিভেজা বিকেলের রামধনু দেখা দিক্ একুশে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।