গারো পাহাড়ের গদ্যে মো. আরিফুল হাসান

ভোজনং অমৃতং নিত্যহিঃ

মৃত্যুকে রোধ করতে নিত্যদিন অমৃত পান করুন। মৃত্যু তো অবধারিত, তাহলে অমৃত কি? প্রসঙ্গত আরেকটি দান্দিকতা তৈরি হয়, মানুষ কি মৃত্যুকামী না জীবনবাদী? জীবনকামী হয় না, জীবনেই যখন চলমান, তখন জীবনকে চাওয়ার দরকার নেই। বরং জীবনের রহস্য জেনে জীবনকে পূর্নতা দিতেই মানুষের প্রয়াস। সেদিক বিচারে অস্তিত্বশীল সকল কিছুই জীবনবাদী, মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়।
মানবজীবনের পূর্ণতা আবার আসে মৃত্যুতে। মানুষ বেঁচে থাকতে যে পরিমাণ সংগ্রাম করে বাহ্যিক বা চৈতন্যে, অধিচৈতন্যে সে আবার ততোধিক মৃত্যুপ্রার্থী। এ এক অপ্রার্থিব মিলনাকাঙ্ক্ষা। পরমপ্রাণ বা মহাজীবনের সাথে একাত্ম হওয়ার প্রবল বাসনাতেই মানবপ্রাণ জন্মগ্রহণ করে। জীবদ্দশায়, বেড়ে উঠতে গিয়ে নানারূপ অপ্রাপ্তি, বিচ্ছেদ, বিরহ সে ভুলে থাকে মহাপ্রেম তৃষ্ণায়। মহাপ্রভুর মহাবিরহে সে জাগতিক দুঃখ-জরা ভুলে এগিয়ে চলে।
কোন দিকে চলে? আসলে একটা মানুুষকে যখন প্রশ্ন করা হয় তার গন্তব্য কোথায়? অস্বীকার করার যো নেই যে, সে মূলত মৃত্যু পথের পথিকই। তাহলে এই যে নিরন্তর শবের মিছিল, সন্তপ্তদের আহাজারি, সব কিছু ছাপিয়ে যে চলে যেতে চায় সে তো চলেই যায়। কেনো যায়? মোটা দাগে দেখতে চাইলে দেখা যায়, মানুষের পরিবারে মিলিত হবার বাসনা যৌথঅবচেতন মনের একান্ত আর্জি। যে বাবা-মা, পূর্বপুরুষগণ একদিন তাকে কোলে কাঁখে করে মানুষ করেছে, যাদের গৌরব সে চেতনায় ধারণ করে; সেসব পূর্বপ্রাণের সাথে পুনর্মিলিত হওয়ার উদগ্র বাসনা মানব মনের অন্দরে বিরাজিত থাকে।
অনেক বয়োবৃদ্ধসহ নানা বয়সী প্রায় সবাই জীবনে কোনো না কোনোসময় মৃত্যু প্রার্থনা করে। অনেককেই দীর্ঘজীবনে ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলতে শুনা যায়, “আর কতো”! অবাক করার মতো সত্য যে, একটা মানুষ যতোবার জীবনে মৃত্যু কামনা করে, ততবার সে জীবনের বা বেঁচে থাকার আর্জি জানায় না। এক অদৃশ্য অক্ষয় শক্তির সাথে মানষের ক্ষীণ শক্তির সম্মিলনে, মানবপ্রাণ মহাশক্তি ধারণ করতে তৃষ্ণার্ত। আত্মা এ-ও অবগত যে, সাধারণ্যে মৃত্যু ব্যতীত মহাপ্রভুর নিরবিচ্ছিন্ন সান্যিধ্য লাভ সম্ভব নয়, তাই সে জন্ম থেকেই মৃত্যুলোভী।
মৃত্যু বরণ কিংবা মরনেও তফাৎ আছে। যারা মৃত্যুকে বরণ করতে পারে তাদের জন্যেই মূলতঃ অমরত্ব। আর যে মরে গেলো, সে তো গেলোই।
মৃত্যুকে বরণ করতে হয় বেঁচে থাকতে। সময় শেষ হবার আগেই যেমন সময়ের মূল্যায়ন করা জরুরী, তেমনি মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর স্বাদ নেওয়া প্রজ্ঞাপূর্ণদের কাজ। এই মরার আগে লাশ হওয়া, সবকিছু পরমসিদ্ধান্তে সমর্পন করে, তারই একান্ত ইচ্ছায় জীবনধারণই মৃত্যুর স্বাদ। মহাপ্রভুর প্রেমই অমৃত।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।