গল্পেরা জোনাকি তে অর্পিতা ঘোষ পালিত

ও কে?

সুরজ –কাল তাহলে তোরা দুজন আমাদের দুর্গাপুরে যাচ্ছিস, পাশের গ্রামের সাথে আমাদের গ্রামের একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ, আমাদের গ্রামের হয়ে বাবান তোকে ম্যাচটা জেতাতেই হবে কিন্তু।
বাবান- আমি আর বাপ্পা ঠিক সকাল নটার মধ্যে তোদের গ্রাম দুর্গাপুরে পৌঁছে যাবো। কাল রবিবার, কলেজ ছুটি,তাই কোনো চিন্তা নেই।
সুরজ- ঠিক আছে, তাহলে তোরা দুজন ঠিক সময় মতো চলে আসিস।
বাবানদের শহর থেকে কিছুটা দূরে দুর্গাপুর গ্রাম।পরেরদিন রবিবার বাবান সকাল আটটার সময় বাড়ি থেকে বের হবার জন্য তৈরি হলো। মাকে বললো- আমার একটা ক্রিকেট ম্যাচ আছে, দুর্গাপুর বলে গ্রামটার নাম, এখান থেকে অনেকটা দূরে।
–তুই একা যাবি নাকি অতদূর আর দুপুরে কোথায় খাওয়া দাওয়া করবি ? …বাবানের মা বললো
– আমি আর বাপ্পা যাবো, আমাদের কলেজের বন্ধু সুরজের গ্রামের হয়ে ফাইনাল ম্যাচটা খেলতে হবে। ওখানে ওরা টিফিনের ব্যাবস্থা করবে, সন্ধ্যে হয়ে যাবে বাড়ি ফিরতে।
– সাবধানে যাস, খেলা শেষ হলেই বাড়ি ফিরে আসবি…
বাবান আর বাপ্পা ঠিক সময় মতো সুরজদের গ্রামে চলে গেল।
সারাদিন গেল ম্যাচ খেলতে, সুরজের গ্রাম দুর্গাপুর জিতল। বাবানকে সবাই খুব বাহবা দিল। খেলার শেষে প্রাইজ দিতে দিতে সন্ধ্যে হয়ে এলো। বাবান আর বাপ্পা সাইকেল করে এসেছে, অনেকটা পথ যেতে হবে তাই ওরা দুজন বাড়ি ফেরার জন্য তাড়াতাড়ি করছে।
সুরজ – তোরা দুজনে সাবধানে যাস, যেতে যেতে যে ফাঁকা মাঠটা পরবে, সেখান দিয়ে সাবধানে যাবি, পেছন থেকে কেউ ডাকলে পেছন ফিরে তাকাবিনা।
বাবান আর বাপ্পা একসাথে বলে উঠলো- কেন, ভুত টুত আছে নাকি,না চোর ডাকাত ? আমাদের কেউ কিছু করতে পারবেনা। তুই কোনো চিন্তা করিসনা, আমরা ভালোভাবে বাড়ি পৌঁছে যাবো। কাল কলেজে দেখা হচ্ছে। এই বলে দুই বন্ধু এগোলো।
হাইওয়ের ধারেই দুর্গাপুর গ্রামটা, এই রাস্তা ধরে ওদের শহরের দিকে যেতে হবে। আঁধারে ঢেকে গ্যাছে পথ, মাঝে মাঝে সাই সাই করে পাশ দিয়ে লরি চলে যাচ্ছে, তখন আলোতে সব দেখা যাচ্ছে। আশেপাশে কোনো গ্রাম নেই, ফাঁকা মাঠ। যেতে যেতে হঠাৎ বাপ্পা বললো- বাবান আমি সাইকেল চালাতে পারছিনা, আমার সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে মনে হচ্ছে বিশাল ভারি কিছু কেউ চাপিয়ে দিয়েছে।
ফেরার সময় সুরজ সাবধান করে দিয়েছিল। তখন ওরা দুজনে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল সুরজের কথা, এখন দুজনেই বুঝতে পারলো কি হয়েছে । বাবান বললো– বাপ্পা তুই গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সাইকেল চালা, আমি তোর পাশে পাশে যাচ্ছি, কোনো ভয় নেই ,আমি তোর সাথে আছি।
বাপ্পা ওর গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে এগোচ্ছে, এই শীতের রাতে ও ঘেমে নেয়ে গেছে, কোনো রকমে সাইকেলটাকে টেনে নিয়ে এগোচ্ছে।
মাঠটা শেষ হবার পরে একটা গ্রাম এলো, গ্রামে ঢোকার মুখেই কতগুলো কুকুর জটলা বেঁধে শুয়ে ছিল, হঠাৎ সব কুকুরগুলো একসাথে বাপ্পার সাইকেলের দিকে ডাকতে ডাকতে তেড়ে এলো, আর ঠিক তখুনি বাপ্পার সাইকেলটা হালকা হয়ে গেল।
বাপ্পা – বাবান,আমার সাইকেল এখন একদম হালকা হয়ে গ্যাছে, আর কুকুরগুলোকে দ্যাখ এবার মাঠের দিকে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছে।
বাবান – এইতো এবার আমরা শহরে ঢুকে পরেছি। তোকে তোর বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি বাড়ি যাব।
বাপ্পা – তোর বাড়িতো আমার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে, তাও তুই আমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দিতে যাবি ?
বাবান– আর কোনো ভয় নেই, শহরের মধ্যে রাত বারোটায় একা গেলেও কিছু হবেনা, তুইতো তা জানিস।
সেইমতো বাবান সেদিন বাপ্পাকে ওর বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপরে নিজের বাড়ি গেল।
বাবান বাড়ি ফিরে বাড়িতে কিছু বললো না। বলার পরে যদি ওর মা বাবা ভয় পায় তাই চুপচাপ থাকলো।
পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাবান ওর মাকে বললো- মা, আমি একটু বাপ্পার বাড়ি যাচ্ছি, ফিরে এসে কলেজে যাব।
বাপ্পার বাড়িতে গিয়ে দ্যাখে ওর ভীষণ জ্বর এসেছে, ভয়ে জ্বর এসেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। বাপ্পা বাড়িতে ওর মা-বাবাকে আগের দিনের ঘটনা বলেছে, ওর মা ওর গায়ে, হাত পায়ে আগুনের সেক দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ বাপ্পার সাথে গল্প করে বাবান বাড়ি ফিরে গেল।
বাবান কলেজে গিয়ে বন্ধুদের আগের দিনের ঘটনা বলাতে সবাই বাপ্পাকে দেখতে বাপ্পার বাড়ি গেল। বাপ্পার জ্বরটা সারছিলোনা, একবার ছাড়ছে আবার ফিরে আসছে। সাতদিন পরে সুস্থ হয়ে বাপ্পা কলেজে গেল।
বাবান আর বাপ্পা আর কোনোদিন সুরজদের গ্রামে যায়নি। সুরজ অনেক বলা সত্তেও, দিনের বেলায়ও যায়নি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।