সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অনিরুদ্ধ গোস্বামী (পর্ব – ৮)

অদৃশ্য প্রজাপতি

সকাল ৮ টায় আথিরা চলে এলো তার স্ক্যুটি করে | সঙ্গে ঢুকলো একমুঠো জুঁই ফুলের সুবাস। প্রসাধন নেই বিশেষ |ট্রাডিশনাল পোশাকে – গাঢ় সবুজ ব্লাউস লম্বা হাতা আর কাঁচা হলুদ রঙের ঘাগড়া .ঘাগড়া তে চওড়া সবুজ পাড় ও তাতে সুন্দর কারুকার্য্য |সবুজ পাতলা ওড়না কোমর কে বেষ্টন করে ডান হাতের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের ওপর ক্লিপ দিয়ে আটকানো | চুলের একটা অংশ টেনে পেছনে বাঁধা বাকি টা পিঠের ওপর পরিপাটি করে বিন্যস্ত |সাদা জুঁই ফুলের মালা কালো চুলে এক সুন্দর বৈপরীত্ব তৈরী করেছে। কপালে কালো টিপ্ আর তার ওপর চন্দনের ফোঁটা |একটা ফোঁটা গলাতেও |কালো দুল আর গলায় কালো হার |আর হাতে দু গাছি করে সরু সোনার চুড়ি|এই আগুন রূপ এ কাকে পোড়াবে কে জানে?

এসেই প্রসাদম দিলো মানে কলাপাতায় ফুল আর চন্দন। আর বললো “মে অল ইওর উইশ বি ফুলফিলড “। আর একটু চন্দন আমার কপালে দিতে এসে দেখে আমি তৈরী হইনি । ল্যাপটপ খোলা আছ।
আথিরা রেগে তাড়া লাগলো “স্টিল উইথ ল্যাপটপ গেট রেডি ,হারি উপ প্লিজ ”
উপায় নেই দেখে ল্যাপটপ সেই অবস্থায় রেখে বাথরুম এ ঢুকলাম। কুড়ি মিনিটে বেরোলাম । ল্যাপটপ টা বন্ধ করা হয়নি তখন । দেখি আথিরা বন্ধ করে পরিপাটি করে ঘুছিয়ে রেখে দিয়েছে।
আজ বুলেট না নিয়ে হোন্ডা সিভিক টা নিয়ে বেরোলাম। কেরালা তেই কিনেছি এক গাড়ীর ডিলার এর কাছে। সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও খুব ভালো অবস্থায় পেয়ে গেছিলাম,দুধ সাদা রং । গাড়িতে ওঠার আগে আথিরা চন্দনের টিকা আমার কপালে আর গাড়ীর বনেট এ এঁকে দিলো
চেরাই যাবার পথ খুবই সুন্দর। চেরাই ঢোকার কিছু আগে দু পাশে ব্যাকওয়াটার আর তার মাঝে দিয়ে রাস্তা চলে গাছে। সত্যি “ভগবানের নিজের দেশ “।
সমুদ্র বা পাহাড় বা প্রকৃতির সুন্দরতা মানুষের মনে এক অনাবিল আনন্দ এনে দেয় । এইসময় মন বলে বস্তুটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকেনা কিছু মুহূর্ত। এক দ্রষ্টা দেখছে তার স্রষ্টা কে।
এটাই হয়। আথিরা একেবারে বাচ্চা হয়ে গেছে। গাড়ী থেকে নেমেই গাঘড়া টা দুহাতে গোড়ালির উপর তুলে ছুট দিলো সমুদ্রের দিকে। কাছে গিয়ে দেখি একটু এগোচ্ছে আবার ধু আসলে পিছিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র এখানে খুবই নমনীয়। এবার পা টা একটু ভিজতে সূর্যের আলোতে গোড়ালির ওপর নুপুর ঝিলিক দিল। ক্রমাগত আমাকে ডেকে যাচ্ছ। “কামঅন নীল ,ফাস্ট… ”
এ এক অদম্য প্রাণের হাতছানি, এড়ানো দুঃসাধ্য। আথিরা কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল
আর পেছল না একটা ঢেউ এসে দুজনকেই ভিজিয়ে দিলো।
সমুদ্রের পার বরাবর দুজনে হাত ধরে হাটতে থাকলাম। মাঝে মাঝে ঢেউ এসে পা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা গাইছে আথিরা আর আমার হাত টা নিয়ে দোলাচ্ছে। জানতে চাইলাম কি গান এটা?
আথিরা:ইটস টাফ ফর মে টু ট্রান্সলেট এক্সাক্টলি ।ইটস এ সং ফ্রম টি মালায়ালম ফিল্ম “প্রেমম “।ইট গোস লাইক থিস “থেলিমনাম মারহাবিলিন নিরামনিয়ুম নীড়ম …….মালারে।
যদিও মালাৰে টাই শুধু বুঝতে পারছি। গুন্ গুন্ করতে আমার বাম হাত টা দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।