সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অনিরুদ্ধ গোস্বামী (পর্ব – ১)

অদৃশ্য প্রজাপতি

ফোর্ট কোচি

পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুর গাছটিকে আলোকিত করে রেখেছে ।একটু আগেই বেশ খানিক্ষন বৃষ্টি হয়ে গেল।
পেঁজা তুলোর মতন মেঘ এ যেন কালির ড্রপ পরে গেছে ।তার মধ্যেই সূর্য উঁকি দিচ্ছে।গাছটি সে হিসেবে তরুণ।বৃষ্টি তে ভিজে ঈষৎ ঝুকে আছে আর বৃষ্টির জল পাতা দিয়ে ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়ছে ।এই মন খারাপের বিকেলে দেখছি কিছু প্রজাপতি গাছের চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে কিছু ফুল ও ফুটে আছে। এই গরম এ বৃষ্টি একটু শান্তির অভ্যাস।
কেরালা তে একটু গরম পড়লেই অবশ্য বৃষ্টি হয়ে যায়. সবুজের সমারোহ ই চারিদিকে। এর্নাকুলাম থেকে ফোর্ট কোচি যাচ্ছিলাম। হটাৎ বৃষ্টি তে এই পার্কে ঢুকে পড়েছি। পার্ক টা গড়ে উঠেছে ব্যাকওয়াটার এর পাশে।
লক্ষ্য করলাম ঘাসের আড়াল থেকে খেলতে খেলতে একটি বিড়াল বেরিয়ে এলো । প্রজাপতি গুলো দানা মেলে উড়ছে তার আসে পাশে.বিড়ালটা প্রজাপতি গুলোকে ছোবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।একটা প্রজাপতি তো বিড়াল তার লেজে ওপর বসে গেল।খেলতে খেলতে বিড়ালটা ঝোপের আড়ালে চলে গেল.
বৃষ্টি একেই দেরি করিয়ে দিলো তাই বুলেট স্টার্ট করে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলাম ফোর্ট কোচির দিকে ।ফোর্ট কচি বা পুরানো কোচিন যেখানে পর্তুগিজ ,ডাচ দের ঐতিহাসিক মনুমেন্ট র অবস্থান। তার সাথে আছে সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ কাকে বলা হয় “ভাস্কো দা গামার ” সমাধিস্থল ।
ফোর্ট কোচির ওয়াক ওয়ে দিয়ে হাটতে থাকলাম ,বাম দিকে ফ্রেশ ফিশ বিক্রি করছে | ডান দিকে ব্যাক ওয়াটার এর ওপর পাতা রয়েছে “চীনা ভালা ” বা চাইনিজ ফিশিং নেট ।এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে ।বসলাম একটা বোল্ডার এর ওপর ।ঢেউ ভাঙছে বোল্ডার এর ওপর ।নোনতা জল এর ছিটে -সূর্যাস্ত -আর চাইনিজ ফিশিং নেট ,এক ভালো লাগা মন এর সৃষ্টি করেছে ।নাহঃ , সে এসে এখনো পৌঁছায় নি |
এখনই হয়তো আথিরা পেছনে এসে আমার কাঁধে আলতো করে হাত রাখবে আর প্রতিবার এর মতো আয়ত কাজল চোখে চেয়ে বলবে,
সরি নীল ,ফর কীপ ইউ ওয়েটিং ।
আমি হেসে বলবো নাইস দেট ইউ হ্যাভ এপিআরড ,এটলিস্ট।
আথিরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসবে আর তার পাশে বসে তার মধ্যে আলোড়নের ঢেউ অনুভব করবো .
তারপর হয়তো হাতে হাত রেখে সূর্যাস্ত দেখবো .নীরবতা হবে কথা .আশঙ্কা পরিবর্তিত হবে নির্ভরতায়.
আথিরা বালাকৃষ্ণাণ ,কেমিস্ট্রি মাস্টার্স করছে কোচিন ইউনিভার্সিটি থেকে .কোল্লাম (কুইলনে) এর মেয়ে .হোস্টেল এ থেকে পড়াশোনা করছে .
৫:৩০ বাজে .তার দেখা নেই ফোন সুইচ অফ আসছে .কি হতে পারে ? প্রাকটিক্যাল ক্লাস ?হোস্টেল ও চিনি না ,চিনলেও কি বলে ঢুকবো .আর একটু দেখি….পশ্চিম এর আকাশ লাল থেকে কালো হতে শুরু করেছে .

উঠে পড়লাম একরাশ চিন্তা নিয়ে ।ফেরার পথে এম জি রোড এ “সাইলোন বেক হাউস” থেকে সিলোন পরোটা প্যাক করে এপার্টমেন্ট মুখে রওনা দিলাম.
ঢুকতেই দেখি “শিরি “জানান দিলো – ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর মেসেজ “ক্যান ইউ প্লিজ সেন্ড মে টি কম্পিটিটিভ ডাটা ফর আওয়ার নিউ প্রোডাক্ট টু লঞ্চড “?
যদিও শনিবার তবু ল্যাপটপ খুলতেই হলো। সঙ্গে সঙ্গে মা এর ফোন…
মা : কিরে কিছু হয়ে ছে?কতবার ফোন করছি চিন্তা হয় না বল ।
(আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ই) জানি বলবি প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এর হেড এর দায়িত্ব অনেক, কিন্তু বাবা মা এখানে তো তোর মুখ চেয়ে বসে থাকে। সে চিন্তা কি আছে ?
নীল: আরে মা বুলেট চালালে কিছু শোনা যায় না। বলো কেমন আছো?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।