গারো পাহাড়ের গদ্যে আবু আফজল সালেহ

মহাশ্বেতা দেবী :
সহানুভূতি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষের কণ্ঠস্বর

মহাশ্বেতা দেবী (জন্ম- ১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬, ঢাকা ও মৃত্যু- ২৮ জুলাই, ২০১৬, কলকাতা) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকর্মী। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ় রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলোর অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন। মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে মহাশ্বেতা দেবীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ড সরকার বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার একটি মূর্তিকে শৃঙ্খলামুক্ত করে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শাসনকালে গৃহীত শৃঙ্খলিত বিরসা মুন্ডার একটি আলোকচিত্রের ভিত্তিতে মূর্তিটি নির্মিত হয়েছিল। ‘বিরসা মুন্ডার’ জীবনকাহিনি অবলম্বনে ১৯৭৭ সালে মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন।
মহাশ্বেতা দেবীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন মন্টেসরি স্কুলে; মাত্র চার বছর বয়সে। ১৯৩৫ সালে বাবার বদলির সুবাদে হলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মেদেনীপুরের মিশন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৬ সালে তাঁকে ভর্তি হন শান্তিনিকেতনে। এ সময়ে রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসেন। সপ্তম শ্রেণিতে রবীন্দ্রনাথকে তিনি বাংলার শিক্ষক হিসেবে পান। শান্তিনিকেতনের স্মৃতিচারণ রয়েছে তাঁর দুটি বইয়ে- ‘আমাদের শান্তিনিকেতন(২০০১)’ ও ‘ছিন্ন পাতার ভেলায়(২০০৬)’। মহাশ্বেতা দেবী ১০০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০টিরও বেশি ছোটগল্প সংকলন রচনা করেছেন। তিনি মূলত বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। লেখকের অনেক লেখা/বই/সাহিত্যকর্ম বিদেশি (যেমন ইংরেজি, জার্মান, জাপানি, ফরাসি এবং ইতালীয়) ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ভারতের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় (যেমন- হিন্দি, অসমীয়া, তেলেগু, গুজরাটি, মারাঠি, মালয়লামি, পাঞ্জাবি, ওড়িয়া এবং আদিবাসী হো ভাষা) অনুবাদ করা হয়েছে। কারণ তাঁর বেশিরভাগ লেখাই পাঠক ও সাধারণ শ্রেণির হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর কথা হচ্ছে যে, ‘আমি সর্বদাই বিশ্বাস করি যে, সত্যিকারের ইতিহাস সাধারণ মানুষের দ্বারা রচিত হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সাধারণ মানুষ যে লোককথা, লোকগীতি, উপকথা ও কিংবদন্তিগুলি বিভিন্ন আকারে বহন করে চলেছে, তার পুনরাবির্ভাবের সঙ্গে আমি ক্রমাগত পরিচিত হয়ে এসেছি’। প্রথম জীবনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতি সমালোচনা করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখনী ধরেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। তাঁর লেখা ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘তিতুমীর’, ‘অরণ্যের অধিকার’ অবিস্মরণীয় রচনা হিসেবে বাংলাসাহিত্যে স্বীকৃত। তাঁর লেখা উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ‘রুদালি’-র মত কালজয়ী সিনেমা।
পরবর্তীকালে মহাশ্বেতা দেবী বামপন্থী রাজনীতির আন্দোলন থেকে সরে আসেন। রাজ্য-রাজনীতিতে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তাঁকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা যায়। তিনি সমাজকর্মী তিনি আমৃত্যু নিপীড়িত, বঞ্চিত-শোষিত মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করে গিয়েছেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি ভারতীয় বিভিন্ন উপজাতির মানুষের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ, ছত্রিশগড়, কিংবা বিহার বা মধ্যপ্রদেশ-সব জায়গায় তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আদিবাসী উপজাতিগুলির ক্ষমতায়ন ও তাদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে কাজ করে গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে অন্যায় ভাবে তৎকালীন সরকারের কৃষিজমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে। শান্তিনিকেতনের বাণিজ্যিকরণ-এর উদ্যোগ নেওয়া হলে মহাশ্বেতা দেবী তার তীব্র বিরোধিতা করেন। শিক্ষকতা, গণ আন্দোলন, সমাজ সংস্কার ও মানবাধিকার আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তিনি অতিবাহিত হয়েছিল। শবর গ্রামে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি দফতরে ক্রমাগত চিঠি লিখেছেন তিনি। তারপর আন্দোলনের প্রয়োজনে তাও করেছেন তিনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ। ‘মহাশ্বেতা যতখানি লেখক, ততখানিই অ্যাক্টিভিস্ট’ বলে মত দেন অনেকে। তিনি ‘হাজার চুরাশির মা’, ‘অরণ্যের অধিকার’-এর সেই প্রবাদপ্রতিম লাইন ‘উলগুলানের মরণ নাই’-এর জননী। তিনি মহাশ্বেতা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে দিল্লি বোর্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আনন্দপাঠ’ নামে সংকলন তৈরি করেন। এখানে তিনি জিম করবেট, লু স্যুন, ভেরিয়ের এলউইন প্রমুখের লেখা নিয়ে আসেন বাংলা অনুবাদে। মহাশ্বেতা তাঁর রাজনৈতিক গল্প ও উপন্যাসের জন্য বহুপাঠকের কাছে অতিদ্রুত পৌঁছে গিয়েছিলেন। দ্রৌপদী, বিছন, জল, রুদালি, বেহুলা, শিশু, স্তনদায়িনী, ভাত, কত গল্প- ক্ষুধার্ত আর বিপন্ন মানুষের জীবন বৃত্তান্ত তিনি লিখেছেন।
মহাশ্বেতা দেবী সাংবাদিক ও সৃজনশীল লেখক হিসেবেও কাজ চালিয়ে যান। পশ্চিমবঙ্গের লোধা ও শবর উপজাতি, নারী ও দলিতদের নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর প্রসারিত কথাসাহিত্যে তিনি প্রায়শই ক্ষমতাশালী জমিদার, মহাজন ও দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি আধিকারিকদের হাতে উপজাতি ও অস্পৃশ্য সমাজের অকথ্য নির্যাতনের চিত্র অঙ্কন করেছেন। মহাশ্বেতা দেবী লেখার উপাদানগুলো সংগ্রহ করেছেন সমাজের সবহারানোদের মাঝ থেকে; দলিত-নিন্মশ্রেণির লোকের কাছ থেকে। আজীবন কাজ করেছেন এদের নিয়ে, পড়াশুনাও করেছেন। তাইতো এসব শ্রেণি নিয়ে তাঁর গর্ব। সগৌরবে বলতে পারেন-‘…আমার লেখার কারণ ও অনুপ্রেরণা হল সেই মানুষগুলি যাদের পদদলিত করা হয় ও ব্যবহার করা হয়, অথচ যারা হার মানে না। আমার কাছে লেখার উপাদানের অফুরন্ত উৎসটি হল এই আশ্চর্য মহৎ ব্যক্তিরা, এই অত্যাচারিত মানুষগুলি। অন্য কোথাও আমি কাঁচামালের সন্ধান করতে যাব কেন, যখন আমি তাদের জানতে শুরু করেছি? মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার লেখাগুলি আসলেই তাদেরই হাতে লেখা।’
দলিতদের নিয়ে ইতিহাস লেখা হয় না কখনও। তারা আড়ালেই থেকে যায়। বাঙালি ইতিহাসেও তাই। আমরা অন্যদেশের শাসকদের নিয়ে ইতিহাস লিখি, জয়গান করি। কিন্তু আজীবন যারা দেশের জন্য, এখানকার যারা আদিবাসি তাদের নিয়ে কয়টা লেখা হয়? কয়জন স্বীকৃতি পান? কিন্তু মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন এদের নিয়ে; আন্দোলন করেছেন দলিতদের অধিকার নিয়ে। রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে ব্যক্তিগতভাবেও লিখেছেন। একদিন মুণ্ডা কিশোরী মহাশ্বেতা দেবীকে প্রশ্ন করেছিল- ‘আদিবাসীদের কি কোনো নায়ক নেই?’। এ প্রশ্ন সম্ভবত তাঁর সারাটা জীবন তাড়িত করেছে। হয়তো সেই তাড়নায় বাংলা সাহিত্যকে তিনি ভিন্ন জীবনের আখ্যানে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি ওইসব মুণ্ডারীর আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন শবরদের মাতা। সাঁওতালদের মারাংদাই (বড়দিদি)। ক্ষুদ্র হয়ে যাওয়া গোষ্ঠীর মানুষের জীবনকে উপজীব্য করেএকের পর এক উপন্যাস-গল্প রচনা করেছেন । লেখক গল্প ও উপন্যাসে নিচ শ্রেণির কথাই তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন বক্তব্যেও তাই করেছেন। তাঁর ছিল অকৃত্রিম দেশপ্রেম। নিজের অবস্থানের কথা চিন্তা না করে লিখেছেন সাধারণের নিয়ে। ২০০৬ সালে ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় ভারত দ্বিতীয় বারের জন্য অতিথি দেশ নির্বাচিত হয়। মেলার উদ্বোধনী ভাষণে মহাশ্বেতা দেবী রাজ কাপুরের বিখ্যাত চিত্রগীতি ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’ থেকে পংক্তি উদ্ধৃত করে একটি আবেগময় ভাষণ দেন: ‘সত্যই এটি এমন এক যুগ যেখানে ‘জুতা’টি (জুতো) জাপানি, ‘পাতলুন’টি (প্যান্ট) ‘ইংলিশস্তানি’ (ব্রিটিশ),টোপি’টি (টুপি) ‘রুসি’(রাশিয়ান), কিন্তু ‘দিল’… দিল’টি (হৃদয়) সর্বদা ‘হিন্দুস্তানি’ (ভারতীয়)… আমার দেশ, ক্ষয়প্রাপ্ত, ছিন্নভিন্ন, গর্বিত, সুন্দর, উষ্ণ,আর্দ্র, শীতল, ধূলিধূসরিত, উজ্জ্বল ভারত। আমার দেশ’। মহাশ্বেতা দেবী ইতিহাস থেকে এমন চরিত্র নির্মাণ করেন, যা নিজেই ইতিহাস হয়ে যায়। প্রান্তিক মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া ইতিহাস থেকে তিনি নায়ক খুঁজে সাহিত্যে তাদের প্রতিস্থাপন করেছেন। যেমন ‘শালগিরার ডাকে’(১৯৮২) উপন্যাসটির নায়ক তিলকা মাঝি মূলত ইতিহাসের একজন নায়ক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের শোষণে পড়া বিহার-উড়িষ্যার সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া তিলকা মুরমুকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন এ উপন্যাস। ১৭৮৫ সালে এই তিলকা মুরমুর ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। প্রান্তিকগোষ্ঠী থেকে নায়ক হিসাবে তুলে ধরেছেন প্রায় তাঁর সব গল্প-উপন্যাসে।
মহাশ্বেতা দেবী শুধু সাহিত্যের নন্দনতাত্তিকবক সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য উপন্যাস রচনা করেননি; জীবনসত্য উদঘাটনের জন্য তিনি উপন্যাস রচনা করেছেন। সমাজের কাছে দায়বদ্ধ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। ইতিহাস যার প্রিয় বিষয়। কোনো জাতির ইতিহাসই যে ব্যক্তিত্বের বড় পরিচায়ক- এই বিশ্বাস তার প্রগাঢ়। তিনি ব্যক্তি মানুষের প্রকৃত সত্যের সন্ধান করেছেন ইতিহাস থেকে। এ কারণেই আদিবাসীর বীরত্বপূর্ণ কাহিনী যে ভারতীয় স্বাধীনতার অংশ- সেই বিষয়টিও তিনি তুলে ধরতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাসে রাজনীতি এসেছে পূর্ণ-অবয়বে, যেখানে তিনি রাজনৈতিক অন্ধকার দিকগুলোকেও উপন্যাসে শৈলীতে তুলে ধরেছেন দক্ষতার সাথেই। উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা’ (১৯৭৪)। এখানে লেখকের সাহিত্যে বাঁক পরিবর্তনের সূচনা বলে মনে করা হয়। এ সময়ে ব্যক্তিগত জীবনে সাহিত্য-দর্শনে নতুন সত্তার প্রকাশ ঘটে। ‘ঘরে ফেরা’ (১৯৭৯) উপন্যাসটিও একই রকম। এখানেও রাজনৈতিক উপাদান নিয়ে এসেছেন।
মহাশ্বেতা দেবীর ছোটগল্পের ব্যাপারেও একই কথা। দলিতদের কথা যেমন আছে, আছে রাজনীতির অন্তর্নিহিত বিশ্লেষণও। তিনি প্রায়ই বলতেন যে, সাহিত্যে শুধু হৃদয়-গ্রাহ্যতা নয়, মস্তিষ্ক-গ্রাহ্যতাও চাই। এটা মনেও লালন করতেন তিনি। তার প্রমাণ তাঁর লেখায়, তাঁর বক্তব্য-আলোচনায়। গল্প-উপন্যাসে এটা দারুণভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মহাশ্বেতা দেবীর বিশিষ্টতা এই যে তিনি বাংলা সাহিত্যে সর্বাধিক আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস রচনা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাসের ইতিহাস থেকে চরিত্র নির্মাণ করেছেন। আদিবাসী সংগ্রামের এবং ভারতীয় সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বিপ্লবী এবং বীরের চরিত্র নিয়ে আসেন। যা বাংলা সাহিত্যের সংগ্রামী চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। তাঁর আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘কবি বন্দ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু(১৯৬৭)’, ‘অরণ্যের অধিকার (১৯৭৫)’, ‘চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তির(১৯৮০)’, ‘সুরজ গাগরাই(১৯৮৩)’, ‘টেরোড্যাকটিল, পূরণসহায় ও পিরথা(১৯৮৭)’, ‘ক্ষুধা(১৯৯২)’ এবং ‘কৈর্বত খণ্ড (১৯৯৪)’। মহাশ্বেতা দেবী আদিবাসীদের জীবন উপজীব্য করে প্রচুর ছোটগল্প রচনা করেন, এসব গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘শালগিরার ডাকে(১৯৮২)’, ‘ইটের পরে ইট(১৯৮২)’, ‘হরিরাম মাহাতো(১৯৮২)’, ‘সিধু কানুর ডাকে(১৯৮৫)’ প্রভৃতি। এই সব গল্প-উপন্যাসে তিনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সামরিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে আদিবাসী প্রতিবাদী চরিত্র চিত্রিত করার পাশাপাশি দেশীয় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শোষণের প্রতি প্রতিবাদ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছেন। অন্য উপন্যাস-গল্পেও লেখক আদিবাসী প্রসঙ্গ এনেছেন। ‘ককরোজ-নকরোজ(২০১২)’ নামে শিশুতোষ গল্পগ্রন্থও লিখেছেন তিনি। এছাড়া অন্য গল্পগুলো হচ্ছে: ‘ব-দ্বীপের(২০০৬)’, ‘ভাতগল্প(২০১১)’, ‘বৃহস্পতিবার(২০১৩)’, ‘আমাদের গ্রামে মালো পাড়া নাই(২০১৬)’ এবং উপন্যাসগ্রন্থ ‘আশ্বিনের শেষ রাত্তিরে(২০১৫)’ উল্লেখযোগ্য ।
হৃদয়ের টান থেকে কিছু করলে প্রকৃতিগতভাবেই কাছে চলে যাওয়া যায়। আন্তরিকতার খাঁদ নেই বলেই দলিতদের কাছে জননী মর্যাদা পেয়েছেন মানবতাবাদী এ লেখক। ফলে পুরস্কার/পদকও পেয়েছেন। করেছেন দেশের প্রতিনিধিত্ব। এপার-ওপার দু’বাংলাতে তাঁর অসংখ্য পাঠক। ১৯৭৯ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান অরণ্যের অধিকার উপন্যাসটির জন্য। ভারতের সাহিত্যিকদের শ্রেষ্ঠ সম্মান ‘জ্ঞানপীঠ’ তিনি পান ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৭ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান আদিবাসীদের মাঝে কাজ করার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পদক পান। এছাড়া জগত্তারিণী পুরস্কার, বিভূতিভূষণ স্মৃতি সংসদ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত লীলা পুরস্কারও লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে সাম্মানিক ডক্টরেট রবীন্দ্রভারতী অর্জন করেন। ভারতীয় ভাষা পরিষদ সম্মাননা ২০০১ সালে অর্জনসহ ভুবনমোহিনী দেবী পদক, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়ে সম্মানিত হয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী। নোবেল পুরুস্কারের জন্য প্রায়ই আলোচনায় আসতেন তিনি। গণমানুষের কণ্ঠস্বর মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে জানান,“মহাশ্বেতা দেবী কলমের শক্তিতে আশ্চর্যজনকভাবে চিত্রিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন সহানুভূতি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের এক কণ্ঠস্বর…।”.
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।