অণুগল্পে অর্পিতা দাস

ফয়সালা

“মাসিমা, আমার নাম টুসি, আমায় চম্পা পাঠিয়েছে।”
আরতী দেবী,” ও,ভেতরে এসো। তুমি একা এলে যে বড়, চম্পা এলে না?”
“ওর আরো পাঁচ বাড়ির কাজ বাকি আছে, মিছিমিছি সময় নষ্ট করে লাভ কি বলো ?”
আরতী দেবী করুণ সুরে,”মেয়েটার দুঃখের অন্ত নেই !”
টুসি আরতী দেবীর সামনে হাত নাড়িয়ে,”গরীবের ঘরে ও দুঃখু টুক্ষু কিচ্ছু না, এই আমাদের নিয়তি।” টুসি মাথা চুলকে, ওসব ছাড়ো, কাজের কথায় ফেরো,আমার আবার সময় নেই কিনা।”
আরতী দেবী ,”আমার কিন্তু দুইজন।”
“দুইজনই হও আর পাঁচজনই পরিশ্রম তো একই।”
মেঝেতে বসে পড়ে টুসি,”মাসে কত দেবে?”
মালতী দেবী টুসির দিকে তাকিয়ে,”আড়াই হাজার নিও।”
টুসি এক লাফে উঠে পড়ে,”ও তোমার টাকা তুমিই রেখে দাও। আমার দ্বারা হবে না।”
আরতী দেবী অসহায় ভাবে,”তোমার কথাটা…”
টুসি ঘাড় ঘুরিয়ে,” মাসিমা, তোমার পক্ষে চাপ হয়ে যাবে… যাই বাপু, ঘোষ বাড়ির রান্না এখনও বাকি আছে।”
আরতী দেবী টুসির প্রতি , এককালে বাড়ি ভর্তি লোক গমগম করত। সবার রান্না এই হাতে করেছি। আজ নিজের রান্নাটাই… বয়স হয়েছে, শরীরে রোগ ব্যাধির অন্ত নেই… রান্নাটা যদি করে দিতে…”
টুসি আবার ধপ করে বসে পড়ে, “সেই কথাই তো বলছি, আড়াই হাজার টাকায় এই জামানায় কিচ্ছু পাওয়া যায় না। বিদ্যুত বিল দিতেই ফুরুৎ। এক কাজ করো তোমায় দেখে কেমন মায়া পড়ে গেল গো, আর হাজার টাকা বাড়িয়ে দিও।তোমার জন্যে এইটুকু ছাড় দিলাম। অন্য বাড়ি হলে গুনে গুনে পাঁচ নিতাম।”
“কিন্তু অত টাকা…”
“একমাস রেখে দেখো, এই টুসিকে ভালো না লাগলে ছাড়িয়ে দিও, হয়ে গেল ব্যস।” আরতী দেবীকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে, “তাহলে ঐ কথাই রইল।” বলে গডগট করে বেণী দোলাতে দোলাতে চলে যায় টুসি। ছবির মতো বাক্যহারা হয়ে আরতী দেবী তার পথের পানে তাকিয়ে থাকে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *