|| কালির আঁচড় পাতা ভরে কালী মেয়ে এলো ঘরে || T3 বিশেষ সংখ্যায় অর্ঘ্য দে

হেমন্তের স্টেশনে

ভোরের ট্রেনে চলে গেছো। দিনের আলো আকাশে ছড়ায়নি তখনও, তার আগেই আলোছায়ার ভিতর ট্রেন ছেড়ে গেছে ষ্টেশন। আমাকে দেয়া কথা কলার খোসার মতো পড়ে আছে রেললাইনে। দু’একটা কুড়িয়ে নিয়ে ফেলে দিই জংলায়। চাঁদনি রাতে উড়তে-থাকা ধবল প্রজাপতির কথা বিশ্বাস করবে না কেউ। তোমার নিরুদ্দেশের খবর ফেরি করি। লোকে দৈনিক কাগজে পড়ে। আবার ভুলেও যায়। অবসরে বসে থাকি হেমন্তের এই পরিত্যক্ত স্টেশনে। যদি ফিরে আসো ডাউনের ট্রেনে এই আশায়। যাওয়া থাকলে আসাও থাকে। তন্তুবায়ের তাঁত বোনার মেশিনের মতো। যাওয়া আসার নির্ভুল অভ্যাসে ঘন হয় সুতোর বুনন। ফুটে ওঠে নকশা, বুটির কাজ। আমিও আশায় থাকি এই বুঝি ভিড়ের মধ্যে ফুটে উঠলে তুমি। কতবার গান গাইতে চেষ্টা করি। কোনও গান পূর্ণ হয় না। গিটারের টিউন কেটে যায়। অপেক্ষায় খসে পড়ে দেবদারুর পাতা। দূরে পাম গাছের সারি। ফল পেকেছে। তেলের কারবারিরা পেড়ে নিয়ে চলে যায়। একটা বজ্রাহত পাম গাছ, অপাংক্তেয় মনে হয় তাকে। নিছক নিয়মরক্ষার্থে দাঁড়িয়ে আছে ওই ফলদায়ী গাছের সারিতে। বসে বসে দেখি। হলুদ রঙ ধরেছে মাঠে। দূরে খামারবাড়িতে ধান সাজানোর ব্যস্ততা। জামরুল গাছের পাশ দিয়ে ছুটে চলা নদীটা রোজ একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। শিশিরে ভেজা মাঠ অবেলায় চিকচিক করে ওঠে। হয়তো নদীর সমার্থক হবার চেষ্টায়। আমার সূর্য ওঠে, ডুবে যায় হেমন্তের এই স্টেশনে। হৈমন্তিক হাওয়ায় আমার কেমন যেন শীত করে। লাইনের ধারে বুনো ফুলেদের শরীরে ধবল প্রজাপতির ঢল নামেছে। এ কি মিথ্যে হতে পারে? তোমার নিরুদ্দেশের খবরও তো ওরা ভুলে গেছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।