সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে অভিজিৎ চৌধুরী (পর্ব – ১০)

না – মানুষের সংসদ

১০
গান শেষ হলে হুলো দেখল দর্শকরা তখনও মোহের আবর্তে রয়েছে গানের সুরে সুরে ।
হুলো দীর্ঘ প্রস্তাবনা রাখার আগেই মাইক্রোফোন প্রায় কেড়েই নিল শেয়াল পণ্ডিত । সভাপতি টিকটিকির অনুমতিও সে নিলো না । হুলো রাগে ফুঁসতে লাগল তবুও মুখে কিছু বলল না ।
শেয়াল পণ্ডিত শুরু করল –
পথ খুব বন্ধুর । মানুষের সঙ্গে আমাদের অনিবার্য লড়াই শুরু হয়ে গেল ।
টিকটিকি তখন বিনা মাইকেই বলে উঠল,
শেয়াল শব্দগুলি শক্ত হয়ে যাচ্ছে । আরো সহজ করে বলো হে ।
শেয়াল তখন বলল,
পথ খুব কঠিন । একের পর এক গাছ কাটা হচ্ছে । পলাশিপাড়ায়ও তাও আমরা শেয়ালেরা এখনও আছি । কতোদিন থাকতে পারব বলতে পারিনা ।
রাণি মৌমাছির ছোট্ট বুকটায় কেমন কাঁপুনি হল । শ্রমিক মৌমাছির দল থরথর করে কেঁপে উঠল ।
সভার দর্শকদের মধ্যে একটি হাঁস পরিবারও কিছুক্ষণ আগে এসেছে ।
মা হংসীটি বলল –
মৌমাছিদের অপরাধ কি ছিল !
শেয়াল উত্তর করল –
কিছুই না । তারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বাসা নির্মাণ করছিল ।
বাবুই পাখিও কিছুক্ষণ আগে এসেছে । সে বলল –
অসাধারণ নির্মাণ – কৌশল । আমারতো হিংসে হয় ।
মা হংসী তখন আবার বলল –
তবে আগুন লাগলো কেন !
টিকটিকি এবার মাইক্রোফোন নিল । সে বলল –
মানুষ চায় না – সে ছাড়া জীবজগতে আর কেউ থাকুক ।
হুলো বেড়াল সঞ্চালক কিন্তু কিছুই বলার সুযোগ পাচ্ছিল না । সভার স্বাভাবিক আইন-কানুন কেউ মানছে না ।
সে তখন বলল –
এইসব কি হচ্ছে । সভার বিধি কেউ মানছে না । সভা শুরু করার প্রস্তাবনা করব আমি । নিয়ম-মাফিক সভাপতি মনোনয়ন হলে তিনিই সভা পরিচালনা করবেন । দর্শকের প্রতিক্রিয়া সভার শেষে নেবো আমরা ।
শেয়াল পণ্ডিত সম্মতি-সূচক মাথা নাড়াতে লাগল ।
তখন হুলো বলল –
তুমিই তো নষ্টের গোড়া । নিজের ইচ্ছেমতন আগেই বলতে শুরু করলে ।
তখন টিকটিকি বলল –
এসব কি হচ্ছে ! সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ । মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমরা মানুষদের মতনই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠছি ।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।