Cafe কলামে – আত্মজ উপাধ্যায় (পর্ব – ৩২)

অর্থই সম্পর্ক

বিয়ে। দুটি মানুষের মধ্যে নয় শুধু, দুটি গোষ্ঠির, দুটি গোষ্ঠির মান মর্যাদা, ধর্ম, আচার ব্যবহার,ইত্যাদি নানা বিষয় জূড়ে থাকে। এই সমস্ত কিছুর কোন একটি বা একাধিক বিষয় সম্পর্ককে যুক্ত করে বা বিযুক্ত করে।
দুটি ভিন্ন ধর্মের মানুষ উদার পন্থী না হলে সমস্যা দেখা দেয়। দুটি ভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যেকার আচার অনুষ্ঠান ব্যবহার সমস্যা আনে। আমরা দেখেছি, ভারতে,স্বাধীনতার আগে ও পরে বহু ধর্মীয় দাঙ্গা নরহত্যা।
সাধারণতঃ যুবক ও যুবতী বয়েসে ছেলে মেয়েরা আবেগ প্রবণ থাকে, পরিণতি ভাবেনা। ভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথে যৌনমিলন অনেকেই বাহাদুরি ভাবে। এবং তখন তাদের মধ্যে অবাস্তবতাকে ছোঁয়ার একটা চিন্তা দেখা দেয়। কিন্তু পরিণাম সুখের নয়। বিয়ের প্রথম কয়েক বছর যৌনমিলনের আকর্ষণে, সমস্যাকে চাপা দিয়ে রাখে। কিন্তু যা চাপা দেওয়া যায়না বা এড়ানো যায়না তা একসময় মুখোমুখি হতে হয়।
বিয়ে নিয়ে প্রাথমিক সমস্যা যেগুলি হয়ঃ নিম্নবিত্ত ঘরে আর্থিক অনটন। মধ্যবিত্ত ঘরে স্বাধীনতা বা স্বেচ্ছা চারীতা, উচ্চবিত্ত ঘরে অধিক উচ্চাশা ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের চাওয়া পাওয়া।

নিম্নবিত্ত বা মজুর শ্রেণীতে খুব একটা যৌতুক বা ঘটা বিয়ে হয়না। অনেক সময় ছেলের ও মেয়ের পরিবার দু একজন নিকট আত্মীয় সহ মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতের মাধ্যমে মালা বদল করে বিয়ে করে। সংসারের চাপ মূলতঃ আর্থকেন্দ্রিক। দিন রোজগারি দিন যাপনকারী। আপদে বিপদে কষ্ট। অনেকে স্বামী স্ত্রী দুজনেই যাহোক আয়/ উপায় করতে গিয়ে কে কত আনল কে কিসে খরচ করল এসব নিয়ে ছোটখাট বিবাদ প্রত্যহ থাকেই। এবং ক্রমশঃ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাদের বিয়ে অল্প বয়সেই হয়.১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ছেলেরা পড়াশুনা খুবই নগন্য করে, ফলে তারা সব্জী ওয়ালা , মাছ ওয়ালা, হকার, শ্রমজীবি, চাষা প্রমুখ। এই শ্রেণিটা অনেক, সারা জীবন্ দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে কাটায়, বিয়ে তাদের কাছে যৌনসম্ভোগ ও সন্তান উৎপাদনের ও স্বাভাবিক জীবনের এক চিলতে রোদ্দুর। জীবনের দেনা পাওনা শূন্য। এদের ডিভোর্স ইত্যাদি হয়না। পালিয়ে চলে যায়। কেউ কারুর প্রতি দায় বদ্ধতাও থাকেনা।
মধ্যবিত্ত সমাজে, ছেলে মেয়ে সকলেই স্বপ্নদেখে একদিন বড়লোক, অনেক টাকার মালিক বা নাম যশ কুড়িয়ে বিখ্যাত হয়ে যাবে। এই শ্রেণিতে লোকেরা আদর্শ বলে কিছু ভাবে, পড়াশুনা পাশ করা, তাদের কাছে জীবনের এক ভিন্ন মানে।তারা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য ও সুখ সহ স্বাধীনতা অ্যাডভেঞ্চারের মত নেয়। তারা সাংস্কৃতিক জগতে নিজেদের কিছু কীর্তি রাখতে চায়। জীবনের শেষ দিকে ভাবে, জীবনটা রংগিন হয়েছে বটে, কিন্তু লক্ষ্যে পৌছানো গেলনা। তাদের বিয়ের একটা বয়স দেখা যায়, মেয়েরা হল ২৫ বছরের আর ছেলেরা হল ৩০/ ৩৫। ছেলেরা চায় তাদের বৌ হবে প্রদর্শনীর বস্তু, খুব সুন্দরী, আর মেয়েরা ভাবে তাদের স্বামী হবে অনেক টাকার মালিক তার সব আহ্লাদের বস্তু কিনে দেবে। কিন্তু তত দিনে তারা স্কুল কলেজে একাধিক যৌন সংগম করে ফেলেছে। এবং তা তারা আধুনিকা হতে গেলে এগুলি একটা গুণ ধরে নেয়। তাদের পোশাক আশাক চলন বলন হাল ফ্যাশানের।
বিয়েতে তাদের পাওনা দেওনা অনেক কিছু হয়। অনেক আচার অনুষ্ঠান থাকে, মোটামুটি প্রতিটি বিয়ে সরকারি খাতায় নিবদ্ধ থাকে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দেখা যায় দুজন দুজনের সাথে বনিবনা হচ্ছেনা।দুজনেই ভাবতে থাকে তাদের বিয়েটা একটা ভুল , অন্য কোথাও হলে অনেক বেশি ভাল থাকা যেত। দুজনেই চাকুরি করে বা কিছু একটা সরকারি বেসরকারি উপায় বা নিজেকে ব্যস্ত রাখার, স্বপ্নের উদ্দেশ্যে, নাম যশের উদ্দেশ্যে ছুটে। দুজনেই মতলব বাজ হয়।এবং বিয়ে ভাংগার জন্য উঠে পড়ে। দুজনেই পরকীয়াতে জীবন খোঁজে।
এবার যেহেতু, বিয়ের সময় এত টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ে হয়েছে, যৌতুক গয়না ইত্যাদি দেওয়া হয়েছিল, সেই হেতু মহিলা বাপের বাড়ির সাথে পরামর্শ করে কোন আইনজীবি ধরে নানা মিথ্যা সহ আদালতে মামলা করে। এবং সেই মামলাতে পুরুষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। যেমন ৪৯৮ এ আই পি সি, বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স।

উচ্চবিত্ত বা বড়লোকদের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী, শিল্প পতি গোছের। এরা বিয়ে করে দুটি গোষ্ঠির মধ্যে।এদের অনেক টাকা কড়ি, বিয়েটা হয় ব্যবসা বাড়াবার জন্য, অর্থাৎ যাদের কাছে অনেক টাকা বা ক্ষমতা আদায় হবে। প্রচুর মানুষ নিয়ে চলে এরা। ব্যক্তিগত জীবন এরা অনেক যৌন উপভোগ করে। স্বামী স্ত্রী যে যার মত করে। বিচ্ছেদ খুব কম হয়, কারণ বিচ্ছেদ হলে অনেক টাকা সম্পত্তি ভেঙ্গে যাবে। ফলে কেউ কারুর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামায় না।
মানুষের কাছে টাকা না থাকলে একরকম টাকার আশা থাকলে অন্যরকম আর টাকা অনেক থাকলে অন্যরকম। টাকাই বিয়ের মুখ্য চলন তেল। ভিন্ন কথায় অর্থই সম্পর্ক।
বিয়ে যেগুলি সারাজীবন টেঁকে সেগুলি দেখা যায়, নিম্নবিত্ত ঘরের যে বাড়িতে বেশি শিক্ষা নেই। এবং যৌবনের শুরুতে যে মহিলারা বিয়ে করে। সারা পৃথিবীতে ১৩ থেকে ১৭ এই বয়সের মেয়েদের বিয়ে হয়। তা নিয়ে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অনেক জ্ঞান দেয়। জাতি সংঘ থেকে মহিলা কমিশন। বাবা মা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলে, ১। তার খাওয়া পরার খরচ থেকে নিস্কৃতি পায়। ২। সে যার সাথে বিয়ে দেয় তার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সময় পায়। ৩। তার নিজের যৌন নিরাপত্তা ও যৌন সুখ যা প্রাকৃতিক সময়ে আসে তা পায়। সংসার যৌনসুখের উপরও অনেক নির্ভর শীল।
জ্ঞান দিতে পারে অনেকেই, দায়িত্ব নেয়না। সে মহিলা কমিশন বা জাতিসংঘ, বা নিজের দেশের সরকার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।