সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৫৮)

এলেইন ডি কুনিংঃ বিতর্কিতা শিল্পী?

তখনকার দিনে Artnews ম্যাগাজিন খুবই বিখ্যাত, নবীন প্রবীণ শিল্পীদের প্রদর্শনীর আলোচন সমালোচনা থাকত। ১৯৪৮ সালে,এলেইন সেই পত্রিকাতে ১০০র অধিক বিখ্যাত ও অপরিচিত শিল্পীর সমালোচনা লিখেছিলেন। তার লেখার দৌলতে বহু শিল্পী তার সাথে পরিচয় রাখতেন। ১৯৫০ সালে তিনিই প্রথম মহিলা শিল্প সমালোচক যার খ্যাতি শীর্ষে উঠেছিল। এছাড়া তিনি আর্ট স্কুলের শিক্ষকতাও করাতেন।আমেরিকার বহু বড় বড় ইউনিভার্সিটিতে শিল্প শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।(University of New Mexico in Albuquerque; the University of California in Davis; at Carnegie Mellon, at Southampton College on Long Island; at the Cooper Union and Pratt Institute in New York; at Yale; at RISD in Rhode Island; Bard College; the University of Georgia and the New York Studio School in Paris. Between 1976 and 1978, she served as the first Lamar Dodd Visiting Professor of Art at the University of Georgia (UGA) in Athens. In 1985 she was elected into the National Academy of Design as an Associate member, and became a full academician in 1988. ) সমস্ত কিছু করার পর তিনি নিজেকে একজন শিল্পী ভাবতেন। তিনি বহু প্রদর্শনী করেন।
তাকে ১২ জন আমেরিকার মহিলা “Women of Abstract Expressionism” শিল্পীদের মধ্যে ধরা হয়। পেইন্টিং ছিল তার কাছে একটা ক্রিয়াপদ, বিশেষ্য নয়, তিনি পেইন্টিং কে একটা ঘটনা হিসাবে দেখতেন তারপর এটাকে ছবি ভাবতেন (A painting to me is primarily a verb, not a noun, an event first and only secondarily an image)
১৯৫১ সালে Sidney Janis Gallery তে শিল্পী ও তাদের বৌদের এক শিল্প প্রদর্শনী হয়। বহু নামী শিল্পী (Jackson Pollock and Lee Krasner, Ben Nicholson and Barbara Hepworth, and Jean Arp and Sophie Taeuber-Arp,) ছিলেন। এলেইন তাতে অংশ নিয়েছিলেন কিন্তু পরে বলেছেন এভাবে মেয়েদের তার স্বামীর নামে জুড়ে তুলে ধরা ঠিক নয়। মেয়েরা নিজেদের নামে নিজেদের ছবি নিয়ে দাড়াক।
১৯৫২ সালে এলেইনের প্রথম একক প্রদর্শনী হয় at Art dealer Leo Castelli’s house at The Hamptons।
উইলেমের এক মিস্ট্রেস ছিল নাম জোয়ান ওয়ার্ড (Joan Ward), তিনি একজন ইলাস্ট্রেটর ছিলেন, তার সাথে যৌনসহবাসের ফলে উইলেমের এক কণ্যা হয়, নাম লিসা ডি কুনিং।( Johanna Lisbeth de Kooning was the product of a casual affair between Willem de Kooning and Joan Ward, an illustrator whom the artist had met at the Cedar Tavern in the Village. (At the time, Mr. de Kooning, then 51 and with a reputation as a womanizer, was separated from his wife, Elaine de Kooning.) এলেইনের নিজের কোন সন্তান ছিলনা। এলেইন ও উইলেম দুজনেই খুব মদ খেতেন, দুজনেই দুজনার সাথে তুমুল ঝগড়া করতেন। এইভাবেই চলছিল জীবন । অশান্তি বাড়তে বাড়তে ১৯৫৭ সালে এলেইন ও উইলেম দুজন ছাড়াছাড়ি করে আলাদা থাকতে দুজন দুদিকে চলে যান। ডিভোর্স করেননি।


২০ বছর পর ১৯৭৬ সালে আবার দুজন পরস্পরের কাছে ফিরে এলেন।
এলেইনের আঁকা ছবির অনেক বৈশিষ্ট ছিল। তিনি উইলেমের একটা পোর্ট্রেট আঁকেন চোখ মুখ ছাড়া একটা ছবি।

তার বক্তব্য ছিল, মানুষের মুখ আঁকলে লোকে পুরো ছবি দেখেনা। পুরো ছবিতে অন্য রকম তাৎপর্যও থাকতে পারে। তার ৪০ বছর শিল্পী জীবনে তিনি বহু সাবজেক্ট নিয়ে ছবি আঁকেন (from bulls and basketball players to cave paintings and Bacchus statues) কিন্তু পোর্ট্রেট আঁকা ছিল তার খুশি। আর পুরুষের ছবি, আগেকার দিনে মহিলা শিল্পীরা মহিলাদের ছবিই আঁকত,যেমন : Élisabeth Vigée-Le Brun, Mary Cassatt, এলেইন পুরুষের ছবি শুরু করেন। তার কাছে বডি লাংগুয়েজ হল ছবির আসল বিষয়। তিনি কবি Frank O’Hara র একটা পোর্ট্রেট করেন , প্রথমে মুখ চোখ দিয়ে আঁকেন পরে মুখটা মুছে দেন, তাতে ফ্রাঙ্কের আসল পোর্ট্রেট ধরা পড়েছে। তার কাছে একটা মানুষের পোর্ট্রেট তার বডি ল্যাংগুয়েজে।


আমরা দূরে কোন পরিচিত লোক হেঁটে চলে গেলে, মুখ না দেখেও তার চলন দেখে বলতে পারি কে সেই লোক। তিনি বলতেন পুরুষরা বিপরীত লিংগের মানুষ আঁক্তে ভালবাসে, অর্থাৎ মহিলা আঁকতে ভালবাসে, তিনি ও বিপরীত লিংগের মানুষ, অর্থাৎ পুরুষের ছবি আঁকতে ভালবাসেন।তিনি পুরুষকে সেক্স অবজেক্ট হিসাবে ছবিতে দেখাতে ভালবাসতেন।
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এলেইনের পোর্ট্রেটের সুনাম শুনে তাকে দিয়ে কিছু পোর্ট্রেট বানান, সেগুলিতে অবশ্যই চোখ মুখ ছিল। কাজটা পান তার এক ছবি বিক্রেতা Robert Graham, যার সাথে এলেইনের ভাল সম্পর্ক ছিল তার সাথে কেনেডির ভাইয়ের পরিচিতি ছিল। সেইভাবে তিনি কাজটা পেয়েছিলেন। এলেইনের পরিচিতি উচ্চ মহলে ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনি বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতে পারতেন, সুন্দরী ও স্মার্ট শিল্পী। তার কানেকশন সমাজের সব নামী লোকদের সাথে। সমস্ত কিছুই তাকে আমেরিকার শিল্পের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। এখানে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টে হ্যারি ট্রুম্যানের সাথে এলেইন ডি কুনিং

(Former President Harry S. Truman and Elaine de Kooning stand next to a painting of John F. Kennedy,)।
১৯৮৯ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারীতে নিউইয়র্কের সাউথ হ্যাম্পটনে এলেইন মারা যান। ৭০ বছর হয়েছিল। তার লাং ক্যান্সার হয়েছিল, ও লাং / ফুস্ফুস বাদ দেওয়া হয়েছিল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।