সাপ্তাহিক শিল্পকলায় শিল্পের জন্য শিল্প – লিখেছেন অ্যালবার্ট অশোক (পর্ব – ৫৭)

এলেইন ডি কুনিংঃ বিতর্কিতা শিল্পী? (১)


এলেইন ম্যারি ডি কুনিং (Elaine Marie Catherine de Kooning) তার জন্মের সময় নাম ছিল Elaine Marie Catherine Fried। তিনি আমেরিকার মহিলা অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেসনিস্টদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিল্পী। এবং বিখ্যাত। তিনি ১৯১৮(২০) সালে জন্মান নিউইয়র্কের ফ্লাটবুশ (in Flatbush, New York/Sheepshead Bay, Brooklyn)নামক স্থানে; তার মা আইরিশ ক্যাথলিক ম্যারি এলেন ও’ব্রায়েন, বাবা প্রোটেস্টান্ট ইহুদি রক্তের চার্লস ফ্রাঙ্ক ফ্রায়েড। এলেইন চার ভাইবোনের সবার বড়। তার মা এলেইন যখন ৫বছরের, তখন থেকেই মিউজিয়ামে নিয়ে যেতেন, ছবি আঁকা শেখান, এলেইনের ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে দিতেন, ভাল ছবি প্রিন্ট করে দেওয়ালে আটকে দিতেন।
একটু বড় হলে, প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার সহপাঠি বন্ধুদের পোর্ট্রেট করে দিতেন, আবার বিক্রিও করতেন। তিনি খেলাধুলায়ও ছবি আঁকার মত ভাল করতেন।
হাই স্কুল থেকে স্নাতক হবার পর, নিউইয়র্কের হান্টার কলেজে ভর্তি হন সেখানে কিছু অ্যাবস্ট্রাক্ট ও সোস্যাল রিয়ালিস্ট পেইন্টারের সাথে বন্ধুত্ব হয়। ১৯৩৭ সালে নিউইয়র্কের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আর্ট স্কুল ও আমেরিকান আর্টিস্ট স্কুল আর্ট নিয়ে ভর্তি হন। আর্ট কোর্স করার সময় থেকেই তিনি অনেক শিল্পীদের মডেল হিসাবে রোজগার শুরু করেন।
১৯৩৮ সালে এলেইনের এক শিক্ষক ম্যানহাটানের এক ক্যাফেটেরিয়াতে শিল্পী উইলেম ডি কুনিং এর সাথে পরিচয় করে দেন। এলেইনের বয়েস তখন ২০ আর উইলেমের বয়স ৩৪।এলেইন আগেই উইলেমের কাজ ছবি দেখেছিলেন, এবং ফ্যান হয়ে গেছিলেন। ফলে উইলেমের কাছে ছবি নিয়ে ক্যারিয়ার বানাতে ইচ্ছুক হন। উইলেমের বাড়ি কাম স্টুডিও ছিল 143 West 21st Street এ। এলেইনের ছবি চর্চা উইলেম কড়া মনোভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। একই ছবি পারফেকশনের জন্য বার বার করতে দিতেন, কখনো রেগে ছিঁড়ে ফেলতেন। এলেইনের অনেক ছবি উইলেম শিক্ষক হিসাবে নষ্ট করে দেন। এলেইন তবু উইলেমের কাছেই থেকে যান, উইলেমের হাতের পুতুলের মত।(sternly requiring that she draw and redraw a figure or still life and insisting on fine, accurate, clear linear definition supported by precisely modulated shading. He even destroyed many of her drawings, but this impelled Elaine to strive for both precision and grace in her work) তাদের ৫ বছর প্রেমও এমন চলার পর ১৯৪৩ এ উইলেমকে বিয়ে করেন। হয়ে যান এলেইন ডি কুনিং।

তাদের বিয়েটা ছিল খোলাখুলি বিয়ে, যাকে বলে ওপেন ম্যারেজ। অর্থাৎ কেউ কারুর প্রতি দায়বদ্ধ নয়। যে যা খুশি করতে পারে। উইলেমের কয়েকজন মহিলা ভক্ত ছিল, যাদের সাথে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। আর এলেইনের ছিল অগুনতি পুরুষ, যাদের সাথে তিনি তার খেয়াল খুশী মত যৌন সম্পর্ক করতেন।
আমাদের পৃথিবী হল পেশীর ক্ষমতার। ফলে নারী কর্তা ব্যক্তি হয়ে উঠেনি।পুরুষ সমাজ, রাস্ট্র, ও নিজের পরিবারের কর্তা ব্যক্তি। এছাড়া নারীর যৌনতা নেতিবাচক, সে নিস্ক্রিয়ভাবে যৌন উপভোগ করে।পুরুষের মত আগ্রাসী নয়। ফলে পুরুষ যদি তার স্ত্রীবাদে কোন কম পরিচিত/ পরিচিত মহিলার সাথে যৌন সহবাস করে সেটা বীরত্বের সাথে দেখা হয়। আর নারী যদি তার স্বামী বাদে অন্য কোন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করে সেটা নিন্দনীয় দেখা হয়। এলেইন এই ভাবনাটা উলটে দিয়েছেন। তার কাছে হল পুরুষ একটা ‘সেক্স অবজেক্ট’। ফলে পুরুষকে ব্যবহার করে তিনি বীরত্ব অনুভব করতেন।
তার জীবনে তিনি শিল্পী ও মডেল, এবং একজন শিল্প সমালোচক হয়ে সমাজের উপরের তলার বহু ক্ষমতাশালী পুরুষকে বিছানায় নিয়ে গেছেন ও তাদের ব্যবহার করেছেন নিজের স্বার্থে। বিশেষ করে তার স্বামী উইলেমের কেরিয়ারে, তার ছবির প্রচার, মিডিয়ার লোক ও গ্যালারীর মালিক বা ছবির বিক্রীর লোকদের তিনি বেশী পছন্দ করতেন ও বিছানায় নিয়ে যেতেন। যদিও তিনি নিজেও একজন শিল্পী ছিলেন।(Mrs. de Kooning slept primarily with men who would advance her husband’s career. Elaine’s lovers included Harold Rosenberg, the influential art critic, Tom Hess, the trend-setting editor of Art News, and Charles Egan, a leading New York gallery owner. By sleeping with these men Elaine ensured that her husband was crowned the king of Abstract Expressionism.) যারা এলেইনের জীবনী গ্রন্থ লিখেছেন তাদের মধ্যে লী হল (Lee Hall) বলেছেন, (Elaine and Bill, Portrait of a Marriage: The Lives of Willem and Elaine De Kooning.)এলেইনের জীবন খুবই বিতর্কিত ও ভাবনা তপ্ত করার মত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।