ছোটগল্পে সাহানা

গোধূলি

গোধূলির আলোটা হঠাৎ হয়ে উঠলো কমলা। সূর্যের বিচ্ছুরণে রশ্মিগুলো সাতরঙা, একটি বিশেষ রঙ আকাশ মাতিয়ে তুললো। জানলা দিয়ে বাইরেটা দ্যাখে ভালো করে। ওর মুখেও পড়েছে কমলা-মেটে হলুদ আর লালচে আভা। বিরাট স্লাইডিং উইন্ডোর ওপাশে গাছপালা, মাঠ আর আকাশ….সব কেমন রঙিন! হাততালি দিতে ইচ্ছে করে!
বিতান, বিতানকে ঠিক এইসময় খুব প্রয়োজন! এইসময় ও ফিরতে পারে, একহাত দিয়ে জড়িয়ে নিতে পারে কোমর……চুপিচুপি সারপ্রাইজ দিত একসময়…
গোধূলির রঙটা ও ভীষণ ভালোবাসত! একইসঙ্গে ফুটিয়ে তুলতো অভিব্যক্তিগুলো অক্ষর আর ছন্দের সৃজনে। আবদ্ধ রাখত তাকে যতক্ষণ না লেখা এবং তার ভালোবাসা নিঃশেষিত হত!
ভাবতেই কেমন একটা আচ্ছন্ন ভাব!
ওর ছবিটা….ওই যে দেওয়ালে, কী সুন্দর করে হাসছে….যেন বলছে, আমি ভীষণভাবে বেঁচে আছি!
বেঁচে ও আছে!
জীবন্ত ছবির মাঝে শেষদিনে সাদা ফুলের মোড়কে নিঃস্পন্দ দেহটা যেদিন এসে পৌঁছয়, সে ছবি ভাসছে! মোট দুটো গুলি, দুই শক্তিশালী দলের লড়াইয়ের মাঝে পড়েছিল নিরীহ কিছু তাজা প্রাণ…রক্তের বন্যায় রেঙে উঠেছিল রাজপথ। কিন্তু এসব কিছুই সেই মুহূর্তে বোধগম্য হয়নি তার! কি আশ্চর্য!!
…সেদিন ছিল মহালয়া। দেবীপক্ষের সূচনা। স্নান সেরে একটা হালকা হলুদ তাঁতের শাড়িতে…..ফোনটা ঝনঝনিয়ে উঠেছিল! তারপরের ঘটনাগুলো ঘটেছিল খুব দ্রুত! কি কি হয়েছিল মনে নেই আজ!
পাশের ফ্ল্যাটের বৌদি যখন হাতের শাঁখা-পলা ভেঙেছিলো আর প্রায় অর্ধমৃত শাশুড়ি ওকে ঝাঁকাচ্ছিল…..হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এই উইন্ডোর সামনে দাঁড়িয়েছিল। দুটো হাত দুদিকে ছড়িয়ে যেন আকাশটাকে জাপটে নিতে চাইছিলো সে!

পরনের সাদা থানটা বিবর্ণ একটা হলদেটে রঙে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ….সময় শেষ..সময় শেষ….ক্ষয়াটে জীবনের প্রবাহমানতা….
দুহাত বাড়িয়ে শেষবেলার রঙটুকু ধরতে চেষ্টা করে গোধূলি। হ্যাঁ, সেও তো গোধূলি, ক্ষণিকের আভা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *