• Uncategorized
  • 0

হৈচৈ স্মৃতিকথায় অঞ্জলি দে নন্দী, মম

ঠাকুরের ভোগ দান

আমি তখন কলেজে পড়ি। ছুটির দিনে গিয়ে বেলুড় মঠে হাজির হতাম। সারাটা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় হোষ্টেল ফিরতাম। ওখানেই দুপুরে ভোগ পেতাম। সঙ্গে আমার অনেক বান্ধবী থাকত।
এক দিন আমার অতি বৃদ্ধা ঠাকুমা আমাকে বলল, ” বড় রানী মা! তোর বেলুড় মঠে আমাকে দুর্গা পূজার সময় ভোগ পাওয়াতে পারিস কি? বড় সাধ হয়। ” এর পর শ্রী দুর্গা মহা অষ্টমীর দিন আমি আমার কোনও রকমে হাঁটতে পারা বৃদ্ধা ও অসুস্থ্য ঠাকুমার হাত ধরে রওনা দিলুম। গিয়ে দেখি মঠের মূর্তির কাছ থেকে বাইরের মেন রোড পার হয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের গেট পর্যন্ত বিরাট কিউ। এটি ভোগ পাওয়ার লাইন। ঠাকুমাকে বোঝালাম যে ভোগ পাওয়ার কোনও আশা নেই। মূর্তি দর্শন করে বাড়ি ফিরবো। এই বলে আমরা প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকে মাকে নমস্কার করলাম। উঠে দাঁড়াতেই দেখি কি, এক দিব্য কান্তি পুরুষ, তাঁর সর্বাঙ্গ থেকে এক অলৌকিক জ্যোতি বের হচ্ছিল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” মা আপনারা ভোগ পেয়েছেন কি? ” আমি বললাম, ” না। ” উনি আমাদের প্যান্ডেলের পিছনে নিয়ে গেলেন। সেখানে আমাদের বসতে বললেন ও নিজেও বসলেন। তাঁর দু হাতের তালুতে দুটি ভোগ ভরা মাটির মালসা। তিনি আমাদের ও দুটি সামনে রেখে বললেন, ” দয়া করে এই ভোগ গ্রহন করুন মা! ” আমি বললাম, ” এতো নয়। একটিতেই আমাদের দুজনের হয়ে যাবে। ” উনি বললেন, ” দুটিই নিন মা! ” আমরা ভোগ নিলাম। পেট ভরে গেল। এতো বেশি যে আইঢাই করছি। উনি এরপর ওনার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটি জলের বোতল বের করে আমাদের হাত ধোয়ালেন। আবার জল পানও করালেন। এঁটো মালসাদুটি নিজে হাতে তুলে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেললেন। আমাদের মঠের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন।
আমার ঠাকুমা যে কত আন্তরিক তা আমি বুঝলাম। ঠাকুর তাই নিজে এসে ঠাকুমার মনের সাধ পূরণ করলেন। ভক্তের ভক্তিতে যে ঠাকুর বড় কাছের জন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।