• Uncategorized
  • 0

স্মরণে চুণী গোস্বামী

লিখেছেন – বামাক্ষ্যাপা সরকার

চুণী গোস্বামীর প্রয়াণের পরিপ্রেক্ষিত কিছু কথা মনে এল। সত্যিই খুব আশ্চর্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন চুনীবাবু। ফুটবলার হিসেবে তিনি যে ভারতীয় ফুটবলের যে একজন legend সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মোহনবাগানে খেলা যেকোন একজন ভারতীয় ফুটবলারের নাম বলতে বললে গোষ্ঠ পালের পরেই যাঁর নাম আসবে তিনি হলেন চুনী গোস্বামী এবং নিঃসন্দেহে মোহাবাগানের আক্রমণভাগের সেরা ফুটবলার চুনী গোস্বামীই ছিলেন। ভারতীয় ফুটবলের আক্রমণভাগের সর্বকালের সেরা ত্রিশূল ছিলেন চুনী, পিকে, বলরাম। বিভিন্ন প্রাক্তণ ফুটবলারদের যা লেখা পড়েছি তাতে বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞ ঐ তিনজনের মধ্যে চুনী গোস্বামীকেই সেরা বলতেন। ছিপছিপে চেহারা ছিল তাঁর। ড্রিবল করার অসামাণ্য দক্ষতা ছিল এবং খুব দ্রুত গতিতে ছুটতে পারতেন। 1938 সালে অভিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে ( যা এখন বাংলাদেশে অবস্থিত) জন্ম হয় চুনীবাবুর। পিতৃদত্ত নাম ছিল সুবিমল গোস্বামী। তবে ডাক নাম চুনী তেই তিনি বিখ্যাত। মাত্র আট বছর বয়েসে মোহনবাগানের জুনিয়ার একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন বলাইদাস চট্টোপাধ্যায় ও বাঘা সোমের মতো স্বনামধন্য দুই কোচের কাছে। এক সময় কিশোর চুনী ও কিশোর পিকে ব্যানার্জি যথাক্রমে বাংলা ও বিহারের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন। ছোটখাটো রোগা চেহারার বাচ্চা ছেলে চুনীর অসাধারণ খেলা পিকেকে আশ্চর্য করেছিল। সন্তোষ ট্রফির ঐ ম্যাচে প্রতিপক্ষে খেললেও চুনী ও পিকের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সূচনা হয় যা আমৃত্যু বজায় ছিল। চুনী গোস্বামী 1954 সাল থেকে মোহনবাগানের সিনিয়ার টিমে সুযোগ পেতে শুরু করেন। 1956 সালে তিনি ভারতের জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। ভারতের হয়ে 30 টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে চুনী গোস্বামী 9 টি গোল করেছেন। আনঅফিসিয়াল ম্যাচ ধরলে ভারতের হয়ে তিনি প্রায় 50 টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। 1962 সালে ভারতকে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে সোনা জেতাতে মূখ্য ভূমিকা ছিল চুনী গোস্বামীর। ঐ টুর্ণামেন্টের ফাইনালে ভারত দক্ষিণ কোরিয়াকে 2-1 গোলে হারিয়ে দেয়। চুনী গোস্বিমী 1962 সালে এশিয়ার সেরা ফরোয়ার্ড নির্বাচিত হন। শোনা যায় জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে তাঁর অসাধারণ খেলা দেখে টটেনহ্যাম হটস্পার তাঁকে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। 1964 সালে চুনীবাবুর নেতৃত্বে তেল আভিভ এশিয়া কাপে ভারত রৌপ্য পদক জেতে। চুনী গোস্বামী মোহনবাগানে খেলেছিলেন 1956-1968 সাল পর্যন্ত, তার মধ্যে 1960-1964 এই পাঁচটি মরশুমে তিনি মোহনবাগানের অধিনায়কত্ব করেছেন। তাঁর খেলোয়াড় জীবনে মোহনবাগান বহু ঘরোয়া ও সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টে খুব ভালো ফল করেছিল। 1963 সালে চুনী গোস্বামী অর্জুন পুরষ্কার পেয়েছিলেন। 1983 সালে পদ্মশ্রী ও 2005 সালে মোহনবাগান রত্ন পুরষ্কার লাভ করেন। চুনী গোস্বামীর প্রতিভার সবচেয়ে আশ্চর্য দিক হল তিনি অতি নামী ফুটবলার হলেও ক্রিকেট খুবই ভালো খেলতেন। বিশাল মাপের ফুটবরার হলেও ক্রিকেটার হিসেবে তিনি একেবারে এলেবেল লেভেলের খেলোয়াড় ছিলেন না। তিনি অলরাউন্ডার ছিলেন। বাংলার হয়ে 46 টি প্রথম শ্রেণীর টেষ্ট ম্যাচ খেলেন। প্রায় 30 এর গড়ে 1600 রান করেছেন যার মধ্যে একটি শতরান ও সাতটি অর্ধ শতরান আছে। মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ছিলেন। মোট 46 টি উইকেট ছিল তাঁর সংগ্রহে যার মধ্যে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির পর্যন্ত রয়েছে। তিনি রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার অধিনায়কত্ব করেছেন। 1962 নাগাদ বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা শুরু করলেও 1968 সালে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পরে ক্রিকেট খেলাতে পুরোপুরি মন দেন। 1972 সালে চুনীর নেতৃত্বে বাংলা রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে ওঠে। যদিও সুনীল গাভাসকার, পদ্মাকর শিভালকর সমৃদ্ধ শক্তিশালী বোম্বাই দলের কাছে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হতে হয়। তবুও বলতে হবে ফুটবল, ক্রিকেট দুটো খেলাতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার মতো কৃতিত্ব পৃথিবীর খুব কম খেলোয়াড়ের আছে। এছাড়াও টেনিস যথেষ্ট ভালো খেলতেন। মোহনবাগানের হকি টিমে খেলেছেন। প্রথম প্রেম নামে একটি বাংলা সিনেমাতে অভিনয় পর্যন্ত করেছেন। টাটা ফুটবল একাডেমিতে 1986-89 ডিরেক্টর ছিলেন এবং 1991- 1992 সালে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। 2005 সালে তিনি কোলকাতার শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিষ্ময়কর প্রতিভাবান মানুষটির প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।