সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সৈকত ঘোষ (পর্ব – ২)

কলকাতা কলিং

সেগমেন্ট-২:

গুটি গুটি পায়ে একটা আস্ত শহর ঢুকে পরে আমার মধ্যে। আমি হেঁটে যাই তার শিরা উপশিরায়। এ এক আশ্চর্যমোচন, তীব্র মেটালিক। অন্ধকার ছুঁয়ে থাকে স্পর্শকাতর আঙুল। এর পর তোমাকে জন্ম নিতে হবে। বেসামাল অক্ষর পেরিয়ে যায় হলুদ সিগন্যাল। আমি দেখেছি কীভাবে মুহূর্ত জোনাকি হয়ে ওঠে। আমি দেখেছি কীভাবে ভোরের এলবাম থেকে ঝলসে ওঠে ঘুম শহরের অ্যালগোরিদম। স্লিপিংপিল গিলে নেয় একটার পর একটা মেট্রো স্টেশন। আমি প্রাচীন ইস্তেহার খুলে দেখি। সেখানে তোমার কোনও চিহ্ন নেই, বিরহ নেই, লজ্জার রোমশ বুকে মুখ লুকিয়েছে অভ্যেস। গোলাপি নৈঃশব্দে বেজে ওঠে রাগ দরবারি। আমি ছায়ার কফিনে তোমাকে খুঁজেছি। বিকেলের আঁচলে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। এ শহর আসলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, সুন্দরের ঠোঁটে হাই-হিল ফ্লাইওভার। তুমি রক্তে মিশে গেছো, আমার সমস্ত সেভিংস একাউন্ট জুড়ে বিচ্ছেদ বন্দিশ। এর পরেও তোমাকে নিয়ে গসিপ হবে। সিনেমা হলের অন্ধকার কিংবা মেঘেদের আঁতুরঘরে সোনালী বুদ্বুদ। তুমি বাইপাস থেকে শোভাবাজার, নিউটাউন থেকে নন্দন, পার্কস্ট্রিট থেকে তিলজলা হয়ে যে কোনও সময়ে সুইচওভার করবে মৃত্যুতে।
ইতিহাস বলছে এভাবে ছেড়ে যেতে নেই মুখোমুখি বসিবার দিনে। কে বলেছে মরে গেছে বনলতা সেন? কে বলেছে তুমি হতে পারবে না রিনা ব্রাউন? ইথারে ভেসে ওঠে মুখ। তুমি প্রতিদিন বেঁচে ওঠো নতুন করে মরে যাবে বলে। আমার খুব ইচ্ছে করে পঞ্চাশটা বছর রিভার্সে যেতে, আমার খুব ইচ্ছে করে অন্তত একখান সেলফি। আহা, সেই ওড়না সেই আলোর বিচ্ছুরণ। বছরের শুরুতেই নতুন আসাইনমেন্টে হাত দিয়েছি, জন্মদাগ মুছে দিয়েছে গোপন এপিসোড। মাদমোয়াজেল, তুমি ট্রাম-লাইন বরাবর নিশ্বাস লিখে রাখো। আমি অসহায়তা ধার করি। এ এক অদ্ভুত মুখোশ, এ এক অদ্ভুত জার্নি। কিছুতেই অঙ্কগুলো মিলতে চায় না।
আবার মুখোমুখি হবো তোমার। এ এক নতুন জন্ম। নিশ্বাসে বেজে ওঠে কবীর সুমন। তুমি ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারো, এক ঝটকায় এনে দিতে পারো ফুটপাতে। ঢেউ থেমে যায়, বেজে ওঠে অপেক্ষার রিংটোন। আজ সারারাত ভিজবো, মনে মনে খুব জ্বর আসবে আমাদের। আমার একে অপরকে ছুঁয়ে ভুলে যাবো সবকিছু, ভুলে যাবো ভয়ঙ্কর। তোমার কপালে লাল টিপ, হাত ভর্তি রঙিন চুড়ি। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থনে আমাদের আয়নার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। ভয় পেওনা দিলবরজান, কেউ কিচ্ছুটি জানবে না। তোমার সংসার আছে, আমার দাবিহীন নৌকা। তুমি একবার শরীর পেতে দিলেই আমি আগুন হয়ে উঠবো। ছুটন্ত ট্রাম থেকে ছুঁড়ে দেবো ফাইটার কিস। ডার্লিং, এ আকর্ষণের কোনও কাঁটাতার নেই। তোমার বুকে মৃত্যুও সুন্দর।
এসো, সব দাগ মুছে দিই। বৃষ্টিপাখি আজ খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে। অসংখ্য না হয়ে ওঠা কবিতার ভিড়ে আমার জোনাকি হয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে। কথা দাও, পিছু ডাকবে না। কথা দাও, সিলভারস্ক্রিন জুড়ে তুমি পাওলি দাম হয়ে উঠবে…

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।