[ গতকাল রাতে হঠাৎ কথা বন্ধ করে শুতে চলে যাওয়ার কথা বলায় অর্কপ্রভ একটু অবাক এবং বিরক্তও হয়েছিল।… ফোন বন্ধ করল। কী মেয়ে রে বাবা! হঠাৎ এভাবে উদয় হওয়াই বা কেন!… ‘প্রেম করতে রাজী আছি’ বলাই বা কেন!… আবার এমন দুম করে ‘শুতে যাচ্ছি’ বলে ফোন বন্ধ করে দেওয়াই বা কেন!!
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস্এ্যাপের এই মাধ্যমকে প্রথম প্রথম বুঝতে একটু অসুবিধেই হয়েছিল। এখন, বুঝতে পারে, এখানে সবাই মোটামুটি ভেসেই বেড়ায়… মাটিতে পা খুব একটা কারো নেই। রাত হলেই নিশাচর প্রাণীর মত প্রহর দাপিয়ে ভেসে বেড়ায় আর, আঁধারের বুক চিরে জ্যোৎস্নাকে খুঁজে বার করে এনে ছড়িয়ে দিতে চায়… রূপকথার পরীরাও নেমে আসে কখনো কখনো!!… প্রতিদিন কোজাগর… কে জেগে আছো !!?…
অর্কপ্রভর ঘরেও জ্যোৎস্না এসে পড়ে মাঝে মাঝে… কিন্তু, এ মেয়েটিকে নিশাচর হতে দেখেনি কোনদিনও।… এ বড় অদ্ভুত!!… দুবছর আগেও এমনই এসেছিল কয়েকমাস… উপচে পড়া ধোঁয়াশা নিয়ে… তারপরে হঠাৎ উধাও… আবার এখন সাড়ম্বরে।
‘মেয়েটি’ বলে ভাবতেই ইচ্ছে করে অর্কপ্রভর। কতই বা বয়েস হবে!… সে তো বায়োডাটা দেখে বোঝা যাবে না। তবে, ২৫/৩০ বছরের তফাতে যদি একটা প্রজন্ম হয়, তবে মেয়েটি পরের প্রজন্মের, সেটা নিশ্চিত।
এই প্রজন্মকে ঠিক ঠিক চিনতে পারেন না অর্কপ্রভ। এরা বলে, বয়েস নাকি একটা সংখ্যামাত্র !! কত জনের কাছে যে একথা শুনেছে!… ঠিক, কিন্তু সংখ্যাগুলির মানেরও যে ক্রমশঃ ওজন বাড়ে সেটা আর ভাবে না। মন যে সংখ্যাগুলির লাগাম ধরে থাকে, সেটা যেমন ঠিক, তেমনই মন যে কাঁধে একটি অভিজ্ঞতার ঝোলা নিয়ে বিবাগী হয়ে ঘুরে বেড়ায়, সে কি তারা মনে করতে পারে !?
অর্কপ্রভ জানেন, তার কাঁধের ঝোলাটি বেশ ভারী।… তার প্রজন্মের মাটিতে-পা-রাখা সত্যিকারের নারীমূর্তিগুলি তার ঝোলায় যে জায়গা করে নিয়েছে!!… সুখ দুঃখ হতাশা বেদনা আনন্দ উচ্ছলতা উদ্দামতা আফসোস আরো কত রকমের ভঙ্গীমায় একেকজনের মূর্তি স্মৃতির তুলোটকাগজ মুড়ে সে-ও যত্ন করে রেখে দিয়েছে … নাড়াচাড়া করলেই কথা বলে ওঠে। শুতে শুতে মনেহল, এখনকার ভাসমান মাধ্যমের ছায়া ছায়া মূর্তিগুলোকে সেভাবে বোধহয় রাখা যায় না… শুধু একটা হার্ডকপিতে আপলোড করে রাখা… নির্ভার… “দেখা না দেখায় মেশা “!! ]
মোঃ– কাল রাতে কথা শেষ করা সম্ভব হয়নি… খেতে দেবার সময় হয়েগেছিল।… এটুকু মেনে নেবেন তো!!…
অন্তরের আলোয় দেখে নিতে বলেছেন!….
অতটাও প্রখর এখনো হতে পারিনি… তাই অভাববোধও পিছু ছাড়ছে না 🙂
কিন্তু, পারবে তো সামলে রাখতে!! পারবে তো অন্তরের, বাহিরের সব হিসেব মিলিয়ে চলতে !! ‘হিসেবের মধ্যে বেহিসেবী টান’ সামলানো বড় মুখের কথা নয়। আজ হয়তো বুঝতে পারছ, আমায় তুমি তোমার অপরূপ রূপে ভোলাতে পারবে না। তাহলে, তোমায় প্রশ্ন করতে হত না ‘আপনাকে এখন দেখা যায় না কেন’?…মনে আছে তো, দুবছর আগেও তোমার সংগে কয়েকমাস কথা হয়েছিল… তারপরে আবার এখন এলে!!
আসলে কী জান, তোমার সীমাবদ্ধ বহিরঙ্গে, তোমার নিত্যদিনের হিসেবনিকেশে তোমাকে পাওয়ার চেয়ে, তোমার অন্তরের সীমাহীন দিগন্তে তোমাকে আমার আকাশ দিয়ে স্পর্শ করা, অনেকবেশী আকর্ষণীয়। ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে ফুল’ হওয়ার চেয়ে (সে নাহয় তোমার সাজানো বাগানেই থাকুক) তোমার ‘অঙ্গসৌরভে’ মিশে থাকা অনেকবেশী আকাঙ্ক্ষিত। তোমার প্রলয়ঙ্করী দৃষ্টিদীপ্ত জনগণমনশাসনকারী চাপা হাসির ছবিতে ‘ লাইক, লাভ, ওয়াও’ ইমোজী দেওয়ার চেয়ে, সে হাসির রহস্যে লুকিয়ে থাকা গজদন্তদুটিতে ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখায় আমার গোপন অধিষ্ঠান, অনেক বেশী তৃপ্তিদায়ক।
পারবে তো ! এমন দুর্লোভী (দুর্লভ নয়, 😊) প্রেমিকের সাথে প্রেম করতে? ‘এককাপ চায়ে তোমাকে চাওয়ার’ তুচ্ছতায় আমার আগ্রহ নেই, কিন্তু, ‘নিঃসীম শূন্যে’, একান্ত একাকীত্বে, নিভৃত অবসরে, প্রবল বর্ষণে গোপন অভিসারে যেতে পারবে তো এমন দুর্বিনীত প্রেমিকের সাথে?… পারলে এসো। তোমার প্রেম নিবেদনে আমার অনন্ত প্রসারিত আশ্বাস রইল।
মোঃ – বাব্বা… অনেকখানি খোরাক… মনের 😊
অনেকখানি লেখা… মানে, একরাশ ভাললাগা 😊.
রান্না করছি তো… ভাল করে পড়ে উত্তর দেবো…
অঃ — বেশ।… বলেছি তো, ‘নিভৃত অবসরে’ আসবে!… এখন লিখলে কেন!?.. কাজ সেরে নাও।
[ অর্কপ্রভর ভাল লাগল।
সংসার একটি বৃক্ষ। আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে গেলে শিকড়কেও মাটির গভীরে তত বেশী ছড়িয়ে দিতে হয়… তা না করে আকাশ ছুঁতে গেলে সামান্য হাওয়াতেও গাছ উপড়ে যাবে। মেয়েটি সংসার সামলে নিয়েই আসুক, এটা অর্কপ্রভও চায়।… লেখালেখি করে কিছু সময় আনন্দে কাটানো ছাড়া তার কাছে আর কীই বা আশা করতে পারে মেয়েটি!! ]
মোঃ– মুগ্ধ হলাম… 😍
আমি যৌবনে প্রলুব্ধ হই না…. এ আমার ভারি দোষ… অনেকের বিরাগভাজনও হয়েছি এ কারণে… হা হা
আমি হৃদয়ের ঐশ্বর্যে প্রলুব্ধ হই… ‘ প্রেম ‘ মানে কি…!? আসলে একটি নির্দ্বন্দ্ব, নিষ্কলুষ ভালোথাকার ভরসা…. বৃষ্টির পর রামধনুর ছটায় আকাশ যেমন নিঃশব্দ, নিঃশর্ত ভালোবাসা ব্যক্ত করে তেমনই খানিক…
অন্তরে এই ডানা মেলার আকাশ টুকুর সন্ধান পেলে বাইরের হিসেব মেলানোটা তেমন কঠিন ঠেকে না আর….
আমি ঠিক কাউকেই রূপে ভোলাতে চাই না… ওটা তো নেহাৎই বাহ্যিক… আজ আছে কাল নেই… তখন কি হবে…!? মুশকিল হলো সবাই রূপেই আবদ্ধ হয়… আমি হাঁফিয়ে উঠি… আর মুক্তি খুঁজে…. বাঁচি 🙂
মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে যে, মানুষটি এমন নিশ্চুপ কেন… কিন্তু আগ বাড়িয়ে বিরক্তির কারণ হওয়ার একটা অদ্ভুত ধারণা আছে আমার… তাই আর বিরক্ত করার অভিপ্রায় হয়নি…. কিন্তু জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তাটি সে আশঙ্কা খানিক কাটিয়ে দেওয়ায়… এবং বাইরে বেড়াতে দিয়ে মনের বদ্ধমূলে খানিক তাজা বাতাস লাগায়…. জিজ্ঞেস করার সাহস জুটেছে…. যে… ” কেমন আছেন…!? ” 🙂
সাজানো বাগানের সখের গোলাপ হওয়ার বাসনা আমারও নেই…. তার চেয়ে প্রতিমুহূর্তের শ্বাসে উধাও হয়েও মিশে থাকার উপস্থিতি অনেক বেশি সম্মানীয় ….
সবশেষে বলি, গোপন অভিসার চিরকালীন লোভনীয়… তাই সে লোভ সংবরণ করা বেজায় কঠিন… 😊
অঃ– হুঁ। ডানায় জোর আছে । প্রেমের সংজ্ঞাটিও বেশ। বিপজ্জনক গ্লাইডিং এর আগে নিরাপদ জ্যাকেট পরে নেওয়ার মত। 😊। ভাল।
বাংলায় কত পেয়েছিলে! 😃
মোঃ– 😊 হা,হা…
কত পেয়েছিলাম ঠিক মনে নেই এখন… তবে খুব খারাপ পাইনি… সেটুকু মনে আছে….
বাংলা আমার প্রেম… একমাত্র এই প্রেমে আমি মুক্তি খুঁজি না….! 🙂
অঃ– ও!!… অন্য প্রেমের থেকে মুক্তি খোঁজ নাকি!!! 😎
অনেকদিন পরে তোমার ২ বছর আগের পোষ্টগুলো দেখছিলাম। unfollow করে রেখেছিলাম।
আশ্চর্য!!… অথচ, তুমি শুনে খুশী হবে, তোমার কয়েকটা ছবি আমি save করে পর্যন্ত রেখেছিলাম। এত সুন্দরী!!… তোমাকে ভাল লাগবে না, তা তো নয়!! তোমার প্রোফাইলে ছবির স্টাটাসে লাইক আর সৌন্দর্যের প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়, সে তো আমি দেখিই!! আমার অবশ্য তোমার গান (মাঝে মাঝে এখনো শুনি), তোমার কথা বলার শিল্পিত প্রকাশ, এগুলো বেশী টানত’। তোমাকে বললে হয়তো শুনবে না বলে বলিনি, তোমার চুলের দুপাশে পেতে আঁচড়ানো ছবি আমার বেশী ভাল লাগত’। তোমার বাবার সংগে আছে, দেখো। পার তো সেরকম ছবি একটা দিও। রেখে দেব। ওটাতে খুব softness আছে।
ফেসবুকে আসা কমাতে চেষ্টা করেছি। অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। সবার সংগে কথা বলেও আরাম হয় না। তবে যারা ইনবক্সে আসে তাদের একেবারে ফেরাতে পারিনা। তাই বেশী যোগাযোগ হয়নি।
তুমি প্রায় একবছরের ওপর আসনি। প্রায় বিস্মৃতিতেই চলে গেছিলে। অনেকদিন কণ্ঠের গান শোনা হয় নি। শুনিও।
মোঃ– আসলে softness বুঝি সেই সময়ের আমিটায় ছিলো… সময়ের সাথে সাথে সবটুকুই পরিবর্তনশীল কিনা…. 🙂
হুম্… পড়া সত্যি কমিয়ে দিয়েছে এই social networking … এই মেকি বাঁচায় এমন দুরূহ টান তৈরি হয়ে যায় যে আসলটুকুতে ধুলো জমতে শুরু করে…
ইনবক্সে ঢুঁ মারার অভ্যেস আমার নেহাৎই কম…. কখনো -সখনো নিয়ম উল্লঙ্ঘন করি… যেমন সেদিন আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম… 🙂
তবে আর যেটুকু শুধুই সকালের শুভেচ্ছা বার্তা… কারণ অযাচিত প্রেম আমি নিতে পারি না… তাই কথার পরিধিও কমে যায়…
প্রশ্রয় না থাকলে আমি আসতে পারি না আসলে… এটা আমার স্বভাবের দোষ… 🙂
গানটা একদম ইচ্ছেনির্ভর…. হলে অবশ্যই শোনাবো…!
কিন্তু, unfollow করেছিলেন কেনো…!?
অঃ– ঠিক কারণটা মনে নেই। তবে, তোমাকে আমার পোষ্টে তেমন পেতাম না বলে তোমার পোষ্টেও আগ্রহ ছিল না। তারপরে, হঠাৎ কথা বলা ছেড়ে দিলে!!… সব মিলিয়েই।
ফেসবুক social media হিসেবে ঠিক আছে। আর, অন্যভাবে, ব্যক্তিগত পরিচিতি গড়ে উঠলেও সম্পর্ক কতটা গড়ে ওঠে সে বিষয়ে আমার সন্দেহই আছে! তবে, যেভাবে ব্যবহার হচ্ছে!!… উফ্, বাপের জম্মে এত গালাগাল জানতাম না! আবার, মতামত দিতে গিয়ে দেখেছি, বন্ধুর চেয়ে শত্রুর সংখ্যা বেশী হয়ে গেছে। কী দরকার!!
Unfollow করে রেখেছিলাম কেন, তার কিছুটা উত্তর তো ওপরেই দিলাম। কিন্তু, এটাও বড় কারণ যে, প্রথমবারের কথোপকথনগুলোর কোন একটা সময়ে আমার মনে হয়েছিল, আমার সরে আসা উচিত। তোমাদের সাংসারিক বোঝাপড়ায় আমার উপস্থিতি বোধহয় কিছু সমস্যা সৃষ্টি করছে, তোমার কথাবার্তায় এমনই মনেহচ্ছিল। সে টা আমার কাম্য ছিল না। এটা তুমি হেসে উড়িয়ে দিতে পারো, অস্বীকার করতে পারো, ‘part of the game ‘ (যেমন বলেছিলে) মনে করতে পারো!… কিন্তু জগৎ সংসারটা আমি অনেক বেশী দেখেছি। আমার মনে হয়েছিল, game টা ওখানেই সাময়িক অন্ততঃ শেষ হওয়ার দরকার ছিল।
আজকের পরিচিতি, বোঝাপড়াটা অনেক দৃঢ়, সেই ভয়টা কমেছে। 😊
অঃ– কিংবা, মনের বোঝাপড়াটা হয়তো ছিলই। কম্পাসের কাঁটা যেদিকেই ঘুরে যাক শেষপর্যন্ত ….😊
আসলে, ‘প্রেম করতে রাজী আছি’ — এমন প্রবল বর্ষণে মাথায় ছাতা ধরে বাঁচাবার চেষ্টা না করে নতজানু হয়ে ভিজে যাওয়াকে মেনে নেওয়া, একটা বোঝাপড়া তো বটেই! 😍
মোঃ– 😊… হুম্… মুক্তি না খুঁজলে বাঁচার আনন্দ নেই 🙂
তবে,বোঝাপড়া করে ভেজা যায় কি কখনো…!?
শূন্য মনে খোলা আনন্দে ভিজতে হয় যে…. নইলে স্বস্তি নেই…
নতজানু হয়ে মেনে নেওয়া ঠিক নয়… নতজানু হয়ে গ্রহণ করা… এত মেনে নিতে গেলে তো প্রেম বোঝাপড়া হয়েই থেকে যাবে শেষ পর্যন্ত …. সে বোঝা বওয়া ভারি কঠিন… 🙂
শুভরাত্রি।
অঃ — তা-ই!! বলছো!… কিচ্ছু মেনে নেওয়ার দরকার নেই!!… প্রেম!… শুধু বোঝাপড়াহীন প্রেম!!! বেশ… তাহলে, তাই হবে। 😎
[ কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নেট বন্ধ করে দিয়েছে… তা দিক… সেটুকু মেনে নিতে বলেছে… নিশ্চয় কারণ থাকতে পারে… কিংবা ঠিকই আছে!! অর্কপ্রভর অবশ্য একটু অস্বস্তি বোধ হয়। ]