সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রূপক সামন্ত (পর্ব – ৪)

হরেক পেশা, অবাক নাম – ৪

দংলী সন্ন্যাসী 

ভারতবর্ষ চিরকালই সাধু, সন্ন্যাসী, পীর, পয়গম্বরদের দেশ। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই দেশে অজস্র মঠ, মিশন, আখড়া, বিহার, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা প্রভৃতি স্থাপিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সাধু, সন্ন্যাসী বলতে গেরুয়া বা সাদা বসনধারী, মাথায় জটা, মুখে দাড়ি, হাতে কমন্ডলু–এমন একটা ছবি মানুষের মনে ভেসে ওঠে। সন্ন্যাসীরা সংসার ত্যাগ করে, বিষয়বাসনা রহিত হয়ে সাধনভজন, জপ, ধ্যান, ঈশ্বরসাধনা, পূজাপাঠ, নামগান সঙ্কীর্তন, ধর্মপ্রচার-এসব কাজ করেন বলেই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। মঠের মোহান্ত, আখড়ার বাবাজীরা দেবসেবা, সাধুসেবা, ধর্মানুষ্ঠান আয়োজন, ধর্মসভার আয়োজন, শাস্ত্রপাঠ, সাধন, ভজন, পূজন –এসব কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেন এমনটাই আমাদের বিশ্বাস। এসব মানুষদের জাগতিক মোহের অন্ত হয়েছে বলে আমরা সাধারণত ধরে নিই। কথাটা আংশিক সত্য।
দেবালয়, ধর্মোপাসনার কেন্দ্রগুলি পরিচালনার জন্য রাজা, সুলতান, সম্রাট, জমিদার বা ধনী মানুষেরা ব্রহ্মোত্তর, দেবোত্তর, বৈষ্ণবোত্তর, পীরোত্তর প্রভৃতি নিষ্কর জায়গাজমি ব্যবস্থা করে দিতেন। এছাড়াও ভক্তমানুষজনের দান ও প্রণামীর ফলে এইসব মঠ, আখড়াগুলি বহু সম্পদের অধিকারী হত। সেইসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোহান্ত বা বাবাজিদের জমিদারী করতে হত। এঁদের নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী বা ছোটখাটো সৈন্যদল থাকত। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ডাকাতিও করতেন-এমন নজিরও আছে। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় সন্ন্যাসীদের অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করতেও দেখা গেছে। শৈব দশনামী সম্প্রদায়ের অনেক মোহান্তই বিবাহ করে সংসার জীবন পালন করেছেন বা এখনও করেন। অনেক মোহান্ত বা বাবাজীর নিজস্ব ব্যবসায় ছিল। এমনকি অনেকেই বিদেশের সাথেও বাণিজ্য জরতেন। কোনও কোনও মোহান্ত রাজকীয় বা সরকারী কূটনৈতিক দৌত্যগিরিও করেছেন। মোহান্তদের কেউ কেউ দাদনে টাকা ধার দিয়ে সুদের কারবার করতেন। এঁরা ছিলেন স্থানীয় ‘মানিলেন্ডার ও ব্যাঙ্কার’। যেসব সাধুসন্ন্যাসী ব্যবসায়-বাণিজ্যে লিপ্ত থাকতেন, তাঁদের বলা হত ‘দংলী সন্ন্যাসী’। এই দংলী সন্ন্যাসীরা ভয়ের কারণে এক চেলা করতেন। চেলার দ্বারা নাতি চেলা করাতেন এবং নাতির দ্বারা চেলা করাতেন। এঁদের বলা হত ‘পন্তী চেলা’।
তথ্যসূত্রঃ সতীশ গিরি মোহান্ত প্রণীত- ‘তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব’; সটীক সম্পাদনা- শিবেন্দু মান্না।।

অসমাপ্ত

[অনিবার্য কারণ বশত লেখকদের তরফ থেকে লেখা না পাওয়ায়,ধারাবাহিকটা সম্পূর্ণ প্রকাশ করা সম্ভব হল না!]

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।