• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৪)

ঢেপ্সির প্রেমকাহিনী

চতুর্থ ভাগ

অন্যদিন ছুটির শেষে আমরা বন্ধুরা মিলে বিগবাজেরর সামনে আড্ডা মারতে মারতে চিকেন রোল, চাউমিন খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু সেদিন ঢেপ্সি কাজ আছে বলে বাড়ি ফিরে গেল। যদিও কাজটা ঠিক কী আমি বুঝতে পারলেও বাকিরা বোঝেনি সে ব্যাপারে নিশ্চিত। রাতে ঢেপ্সি ফোন করে জানায় আজ ভোরবেলায় অজয়ের সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল। তাই যেতে লেট হয়েছিল। আমি বললাম ‘তা শুধুই দেখা হয়েছিল? নাকি …?’ জবাবে হাসতে হাসতে বলল ‘হ্যাঁ রে দীপু আমি অজয়কে প্রপোজাল দিয়েছি।’ আমি হেসে ফেললাম আর বললাম ‘বাহ্! অতি উত্তম কাজ করেছো বৎস। তবে আজ থেকে আমাদের ঢেপ্সি মিঙ্গেল।’ ‘নাহ্। এখনও হ্যাঁ বা না উত্তর আসেনি ওপার থেকে’ ঢেপ্সি ম্যাড়মেড়ে গলায় বললো। ‘চাপ নিস না সব ভালোই হবে’ আমি আশ্বাসবাণী দিলাম। ঢেপ্সির থেকে জানতে পারলাম ওরা বিকালে গঙ্গার ধারে ঘুরতে গেছিলো। প্রায় ঘন্টা খানেক ছিল। ঢেপ্সি বেশ আনন্দে আছে দেখে আমার ভালো লাগলো।
এর মধ্যেই আমাদের পার্ট ওয়ান পরীক্ষার ডেট অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেল। কলেজ যাওয়াও এখন বন্ধ আমাদের। শুধু পড়তে গেলেই ঢেপ্সির সঙ্গে দেখা হয়। পরীক্ষা উপলক্ষে ফোন‌ও বন্ধ। পয়লা বৈশাখের দিন স্যারের কাছে পড়তে গেছি। ঢেপ্সি বললো পড়ার শেষে একটু ওয়েট করিস তো। গলাটা কেমন যেন ঠেকালো। পড়ার শেষে ও আমার সামনে থেকে অজয়কে ফোন করলো। কী কথা হচ্ছে বুঝতে পারছিনা শুধু ঢেপ্সি হাত পা নেড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে এটুকু বুঝলাম। ফোন কেটে দিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে যা বললো তার মর্মার্থ এটাই গতকাল রাতে ঢেপ্সি ঘুমিয়ে গেছিল। অজয় অনেকবার ফোন করেছিল কিন্তু ও রিসিভ করেনি। অজয় মেসেজ দিয়ে বলেছিল ঘুম ভাঙলে একবার ফোন করিস। ঢেপ্সি ভোরবেলায় ফোন করেছিল কিন্তু ফোনটা অজয়ের এক বন্ধু রিসিভ করে। ঢেপ্সি প্রথমটা বুঝতে পারেনি পরে বুঝতে পারে। আর ওই ছেলেটা ওকে কিছু বাজে মন্তব্য করেছে। অজয় এই ব্যাপারটা জানে না। ঢেপ্সি অজয়কে সেটাই বলছিল। ইতিমধ্যে অজয়ের ফোন চলে এল। আমার লেট হয়ে যাচ্ছিল বলে আমি ঢেপ্সিকে বলে বাড়ি চলে এলাম।
পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সকলেই ব্যস্ত। তাই এই ব্যাপারটা তখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি। পড়তে যাই দেখা হয় এটুকুই। যথারীতি আমাদের পরীক্ষা শুরু হলো। অনার্সের পেপার শেষ। আমাদের দুজনের‌ই জেনারেল ইলেক্টিভ পেপার বাংলা ছিল। পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি অজয়‌ও এসেছে। আমি ভাবলাম অজয়ের সঙ্গে ঢেপ্সিও আছে। কিন্তু নাহ্ দেখলাম অজয়ের হাত ধরে অন্য মেয়ে। আমি পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। রোল নম্বর খুঁজে ঢেপ্সির রুমে গিয়ে দেখলাম ও বসে বসে পড়ছে। ওকে বললাম অজয় এসেছে দেখেছিস?? বললো নাহ শুনেছি। আমি আর কিছু বললাম না ‘বেস্ট অফ লাক বেইবি’ বলে রুমে চলে গেলাম।
পরীক্ষা শেষ। একদিন দুপুরে ঢেপ্সি ফোন করে কাঁদছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। খানিকক্ষণ পর বললো পরীক্ষার দিন যে মেয়েটা অজয়ের সঙ্গে ছিল তার নাম নন্দিনী। সে মেয়েটার সঙ্গে অজয়ের দারুন ভালো ভাব জমে উঠেছে। অজয় বলেছে ওর আর ঢেপ্সির রিলেশনটা কলেজে কেউ জানবে না এখন। কারণ কলেজে অজয়ের একটা পরিচিতি আছে। অজয় সবাইকে বলবে নন্দিনী ওর গার্লফ্রেন্ড। অজয় এটাও বলেছে অজয় ঢেপ্সির থেকে বেটার কাউকে ডিসার্ভ করে। সব শুনে আমি বললাম আমার মনে হচ্ছে তোর চয়েস ভুল। তুই এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আয়। কিন্তু ঢেপ্সি কাঁদতে শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো আমি ওকে খুব ভালোবাসি। তুই একটা উপায় বল যাতে করে অজয়কে আটকে রাখা যায়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম ভালোবাসা কখনো আটকে রাখা যায় না পাগলী। সেটা ফাঁস হয়ে দাঁড়ায়।
ক’দিন পর ফোন করে বললো ওদের মধ্যে সব মিটমাট হয়ে গেছে। নন্দিনীর সঙ্গে অজয়ের আর যোগাযোগ নেই। আর কলেজেও মোটামুটি অনেকেই জানে ঢেপ্সি অজয়ের গার্লফ্রেন্ড। আমি অনেকদিন কলেজ যাইনি তাই এতো ডিটেলস খবর জানতাম না। আবার একদিন হঠাৎ করে ঢেপ্সি ফোন করে বলে অজয় ওকে আর পাত্তা দিচ্ছে না। রাজনীতির নেশায় মেতে উঠেছে। নিজের কিছু প্ল্যানিং আছে কলেজ নিয়ে। সেগুলো ফুলফিল করতে চায়। অজয়ের সঙ্গে অনেক মেয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। যেগুলো শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে আটকে নেই। একজনের সঙ্গে তো এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছিল যে ওরা একে অপরের সঙ্গে ফোরপ্লে অবধি করেছে। অজয় ইদানিং ঢেপ্সিকে তেমন ফোন মেসেজ করে না। কলেজ ভোট, রাজনীতি এসব নিয়ে ব্যস্ত খুব। আমি সবটা শুনে বললাম ‘তুই যদি আনকমফোর্ট ফিল করিস তবে সরে আয়।’ ওদিক থেকে জবাব এলো ‘আমি অজয়কে খুব ভালোবাসি। আমার বিশ্বাস ও একদিন বদলে যাবে।’ আমি অনেক বোঝালাম কিন্তু দেখলাম ঢেপ্সি রেগে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে শেষমেশ বললাম’ভেবেচিন্তে যা করার করিস।’ আমাকে সুবিধা অসুবিধা হলে ফোন করিস।
কলেজ ভোট শেষ। বিভিন্ন পদের ভাগ বাটোয়ারা শেষ। কিন্তু অজয় কোনো পদেই নেই দেখলাম। ঢেপ্সি আজকাল বিশেষ ফোন করে না। ফোন করলে রিসিভ‌ও করে না। ব্যাচ চেঞ্জ করেছে। আমি ও তাই আর বিশেষ যোগাযোগ করি না। একদিন সন্ধ্যায় আমি টিউশন পড়িয়ে ফিরছিলাম। অনেকদিন পাপড়িচাট খাইনি, খুব খেতে ইচ্ছে করছিল। পাঁপড়ি চাট কাকুর স্টলের সামনে সাইকেল থেকে সবেমাত্র নেমেছি দেখছি পাশেই অজয় দাঁড়িয়ে। আমি নিজে থেকেই আলাপ করার জন্য বললাম ‘হাই অজয়দা। আমি অপরাজিতা মানে ঢেপ্সির বান্ধবী।’ আমার সঙ্গে বেশ হেসে হেসে কথা বললো। আমার একটা জরুরী ফোন এলো। আমি তাড়াতাড়ি করে পাঁপড়ি চাটের দাম মিটিয়ে বেরিয়ে এলাম। রাত্রি একটার সময় হঠাৎ ঢেপ্সির ফোন। ঘুম চোখে ফোন ধরতেই ভেসে এলো অকথ্য ভাষায় অপমান। আমি অবাক। ঢেপ্সি হঠাৎ আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছে কেন? আমি কী করলাম?? ওকে বারবার বলতে লাগলাম শান্তভাবে বল কী হয়েছে? আমি কী এমন দোষ করেছি, যে তুই এতো অপমান করছিস?’ ঢেপ্সি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো আজ বিকালে তোর সঙ্গে অজয়ের দেখা হয়েছিল?
আমি বললাম ‘হ্যাঁ’।
ঢেপ্সি চিৎকার করে বলে উঠলো ‘ লজ্জা করে না। তুই না বলিস আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড! আমার সম্পর্কে শেষপর্যন্ত তুই ভাঙন ধরাতে এলি? অজয়ের সঙ্গে গায়ে ঢলে পড়ে কথা বলার খুব দরকার ছিল তোর? আর তুই ইচ্ছাকৃতভাবে পাঁপড়ি চাটের পুরো টাকা দিসনি। তিরিশ টাকা হয় তুই ইচ্ছে করে কুড়ি টাকা দিয়েছিস। যাতে অজয় বাকিটা দিয়ে দেয় আর সেই ছুঁতোয় তুই অজয়কে সরি বলার অছিলায় ফোন নম্বর নিয়ে নিস।’
আমি আকাশ থেকে পড়লাম সব শুনে। বললাম ‘এসব কিছুই না। আমি নর্মাল কথা বলেছি। আর আমার ফোন এসেছিল তাই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসেছিলাম।’ ঢেপ্সি কাঁদতে কাঁদতে বললো’ তোরা সবাই উঠেপড়ে লেগেছিস আমাদের দুজনকে আলাদা করার জন্য। কিন্তু পারবি না।’ এটা শুনে আমার খুব কষ্ট হলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম’ বেশ আর কখনো অজয়দার সঙ্গে কথা বলবোনা। তোরা ভালো থাকিস।’ ঢেপ্সি বললো ‘আমার অনুপস্থিতিতে অজয়ের সঙ্গে কথা বলবি না। আর ও তোর ফোন নম্বর চেয়েছে। আমি দিইনি আর দেবোওনা। ও এটাও বলেছে তুই অনেক স্মার্ট এবং সুন্দরী।’ আমি উত্তরে বললাম ‘চাপ নেই। তোদের মাঝখানে কখনোই যাবো না। তোরা ভালো থাকিস।তোর সুবিধা অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করিস। বাই, এখন ফোন রাখি।’

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।