আগে যা হয়েছে: রাজকুমারীর সাকসেসফুল হৃদয় হরণ, ধূমধাম করে আন্তর্জাগতিক বিয়ে, স্বর্গের থেকেও সুন্দর সুন্দর গ্রহে হানিমুন। স্বাদ বদলাতে বুড়ো ধূমকেতুর পিঠে স্পেসশিপ পারকিং করে উত্তাল আঁটুঘাটু। কোল আলো করা পোলাপান। সুখের সংসার। শান্তির দাম্পত্য। নতুন নতুন সাম্রাজ্যবিস্তার। ইতিহাসের পাতায় সবথেকে গৌরবময় অধ্যায়… আহা! আহা!
এখনও অব্দি সারা ব্রহ্মাণ্ডে সব থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা, সবচাইতে মূল্যবান বস্তুটি হল গিয়ে সময়। অন্তত রাজপুত্র এবং তার চেনা শোনা ব্রহ্মাণ্ডে এইকথাটা খুব উন্নত, মোটামুটি উন্নত, সবে সবে উন্নত সভ্যতাগুলো মেনে নিয়েছে। হ্যাঁ, সময় ভ্রমণ করা যায় না যে তা নয়, কিন্তু সেটা চূড়ান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কেউ যদি চেষ্টাটুকু করে এই নিষিদ্ধ কাজটি করবার তবে আর দেখতে হবে না। হয় মৃত্যুদণ্ড নয় তার থেকেও সাঙ্ঘাতিক শাস্তি। আর সত্যি বলতে, এখনো অব্দি সময় ভ্রমণ টেকনোলজি জিনিসটা ঠিক হাতের মোয়ার মতন ছোটোখাটো জায়গায় টুকটুক করে গুটি কয়েকজন বিজ্ঞানী নিয়ে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কয়েকটা গ্রহে কিছু পেছনপাকা জাতি মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করেছে সময়কে টেক্কা দেবার কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রে তাদের গুনাগার দিতে হয়েছে ধ্বংসের ভাষায়। শোনা যায়, খোদার ওপর খোদকারি করবার স্পর্ধা দেখিয়েছিল টানুকারা। যাদের ল্যাবোরেটরিতে তৈরি হয়েছিল এই বাকুরা। কিন্তু টানুকারাও বহুদিন হাপিস। বিগত কয়েক শতাব্দী তাদের কোনো খোঁজ নেই। রাজপুত্র কানাঘুষো শুনতে পেয়েছিল চোরা মার্কেটে সময় ভ্রমণ করবার মেশিন নাকি পাওয়া যায় কিন্তু কোনো গ্যারেন্টি নেই ভ্রমণ করার পর হাত পা মাথা আস্ত থাকবে কিনা। তবে রাজপুত্রের একটা সুপ্ত ইচ্ছা রয়েই গ্যাছে একবার যদি ফেরা যেতো সময়ের উল্টো দিকে। এই নিয়ে রাজপুত্র একটা লিস্টও করে রেখেছে। আজ এই মিমাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে শনির পেটের বেল্টটার দিকে তাকিয়ে রাজপুত্রের সেই লিস্ট টার কথা হঠাৎ মনে পড়লো।
আজ বিকেল ধরলে মোটামুটি ছয় দিন হল বাকু কবলিত মিমাসে রাজপুত্র ছাড়া গরুর মতন চড়ে বেরাচ্ছে। খুব করুণ পরিস্থিতিতে যে রাজপুত্র আছে এমনটা বললে অন্যায় হবে। অমন রাক্ষসের মতন দেখতে হলেও বাকুরা মানুষ খারাপ না। মিমাস থেকে পালানো ছাড়া রাজপুত্র সমস্ত ধরনের স্বাধীনতা পাচ্ছে। কষ্ট বলতে ওদের ওই দেরা চলাকালীন পঞ্চায়েতি করার ডিউটি। শুধু রান্না বান্না নয়, চাষবাস, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গবেষণা চলাকালীন বাকুদের মধ্যে রেগুলার মান অভিমান হচ্ছে। ক্লাস ওয়ান টুতে পড়া বাচ্চাদের মতন সব অভিযোগ। রাজপুত্রও কোনরকম রিস্ক না নিয়ে একধারসে সবার মন রেখে আড়ি থেকে ভাব করিয়ে দিচ্ছে, দামড়াগুলো তাতেই খুশি। মুখ দেখে তো কিছুই বোঝা যায় না। তবে আলমারি-র কাছ থেকে রাজপুত্র যা আপডেট এবং সার্ভিস পাচ্ছে, তাতে করে এটা ধরে নেওয়া যেতেই পারে মিমাসে রাজপুত্র কম সময়ে এখন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ লোক। আসলে ওই মহাহারামি ব্ল্যাক হোলটা বাকুদের কল কব্জা নাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাটারা নিছক রোবট নয়, তাদের এখন ভালো মন্দের টনটনে জ্ঞান গজিয়েছে ফল বশত নিজেদের মধ্যে শুরু হয়েছে মৃদু আকচা আকচি। শুধু নীল রঙের মোড়লকে বাদ দিলে রাজপুত্রের কাছে হরে দরে সব কটা বাকু-ই এক। মালটার পেটে পেটে অনেক বুদ্ধি। কিন্তু হলে কি হবে, বাকুদের এই মান অভিমানের খেলার রেফারি গিরি বাকুরা করতে পারবেনা। টেকনিকাল সমস্যা আছে। অগত্যা ভব তরণী পার করতে পারে এই উটকো মানুষ আর কেউ নয়। একদিক থেকে রাজপুত্রের কাছে এটা কলার উঁচু করবার মতন ব্যপার হলেও আদতে বাঁশবাগান। রাজপুত্র ঠিক করেছে আরও দিন দুয়েক কাটাবার পর মোড়লের কাছে কায়দা করে রেজিগ্নেশানটা জমা দিয়ে দেখবে। যতই যাই হোক, এভাবে আর কতদিন?
“উটকো মানুষ, ঘরে যেতে আজ্ঞা হোক। এখানে দাঁড়ানো এখন সমীচীন নয়” আলমারির গলা পেয়ে রাজপুত্র পেছনে ঘুরে তাকালো। ভূতের মতন চুপি চুপি কখন যে তারগি ৬৭ রাজপুত্রের পেছনে এসে উপস্থিত হয়েছে টের টুকু পাওয়া যায় নি!
“ রাতে কি খাবেন উটকো মানুষ? আজ্ঞা হোক” আলমারি একই রকম স্বরে রাজপুত্রকে জিজ্ঞেস করলো। আগে হলে রাজপুত্র বলতো বিষ দিতে, কিন্তু আলমারি পুরোপুরি বিদ্রূপ প্রুফ। তাই কথাটা প্রায় গিলে নিলো রাজপুত্র।
“কেন এখানে দাঁড়ানো সমীচীন নয় কেন? এখন বাঘ বেরোয় বুঝি?”
“আপনার হিতের জন্যই আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। ঘরে চলুন উটকো মানুষ। কালকের দেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আপনাকে”
রাজপুত্র আড় চোখে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। বিকেল সাতটা একুশ এখন। দিব্যি আলো আছে চারপাশে। শনির বেল্টটা এখন সবচেয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গোটা গ্রহকে পেঁচিয়ে ধূসর রামধনু উঠেছে যেন। আলমারির তাড়া দেবার ধরণ দেখে মনে একটু খটকাই লাগলো রাজপুত্রের। তবে বেশি বেগড় বাই করলে আবার যদি পিন ফুটিয়ে অজ্ঞান করে দেয় সেই ভয়ে রাজপুত্র চুপচাপ ঘরের দিকে রওনা দিলো।