সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে চার অক্ষর (পর্ব – ৫)

রাজপুত্রের গল্প

আগে যা হয়েছে:
বাকুদের মোড়ল রাজপুত্রকে প্রায় বন্দী বানিয়ে ফেলে। রাজপুত্রের দায়িত্ব তারগি৬৭ নামধারী এক রোবট কে দেওয়া হয়। তারগি৬৭-র থেকে বাকুদের ইতিহাস সম্পর্কে রাজপুত্র কিছুটা জানতে পারে ;
আসলে রাজপুত্রের ভেতরে ভেতরে যেটা হচ্ছে সেটা রাগ আর বিরক্তি মেশানো অম্বল। আর একটা নাটুকে আলমারির সামনে সেটা নির্দ্বিধায় উগড়ে দিতে রাজপুত্রকে খুব বেশি বেগ পেতেও হোলো না। বিরক্তির আঁচ টের পেয়ে আলমারি দু পাঁচ সেকেন্ড চুপ করে বললো, “উটকো মানুষ, আপনার ক্ষোভ প্রকাশ যুক্তিযুক্ত। তবে আপনার ক্ষতি সাধনের বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় এখানে কারোর নেই সে ব্যপারে আপনি আশ্বস্ত থাকতে পারেন। “
রাজপুত্র এতক্ষণে টের পেয়েছে আলমারির ভেতরের প্রোগ্রামিং টা খুব সুচারু ভাবে করা। এই বিনয় মাড়ানো, এই ভারী ভারী শব্দ দিয়ে কথা বলা, এই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর কথার উত্তর দেওয়ার ক্লাসিক ড্রামা বাজি, গোটা ব্যপারটাই একটা উঁচুদরের ছক। বাকুরা দেখতে ওরকম গাম্বাট রাক্ষস হলেও যে বেশ এলেমদার সেটা আলাদা করে ভাব্বার অপেক্ষা রাখে না। যদিও রাজপুত্র গলায় একই রকম বিরক্তির রেশ রেখে উত্তর দিলো “ ওসব ন্যাকড়াবাজি ছেড়ে একটু পয়েন্টে আসলে ভালো হয়।”
আলমারি যথারীতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুরু করলঃ
“ বিজান্টারের কাছ থেকে ব্যক্তি চেতনাপ্রাপ্ত হবার পর বাকুরা এখানেই রয়েছে। আপনাদের গণনা অনুযায়ী প্রায় বছর তিরিশেক সময়কাল। প্রথম থেকেই মিমাসকে ঢেলে সাজাতে বাকুরা ছিল যথেষ্ট তৎপর। কিন্তু বাকি সভ্যতার মত বাকুরা এখনো নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। বাকুরা তাদের জন্মলগ্ন থেকেই যেহেতু উন্নত আর বুদ্ধিমান প্রাণী তাই বাকি জাতিদের মত তাদের ধাপে ধাপে কোনো বিবর্তন ঘটে নি। এই সামগ্রিক উপলব্ধিটিও এসেছে তাদের ব্যক্তি চেতনা প্রাপ্তির পর । যদিও তাদের জীবন নির্বাহ এখনো সম্মিলিত আর সংক্ষিপ্ত পরিসরের। বাকুরা মূলত তিনটে পর্যায়ে মিমাসে জীবন অতিবাহিত করে।
গিদাক, টিদিম এবং দেরা।
প্রথম পর্যায় গিদাক যেখানে বাকুরা প্রথমে সবাই মিলে বিজান্টারের নাম উচ্চারণ করে, তারপর একত্রে শুরু করে চাষ আবাদের কাজ এবং নিজেদের যা কিছু কারিগরি প্রয়োজন যেমন মেরামতি, নব নির্মাণ ইত্যাদি । দ্বিতীয় পর্যায় টিদিম। টিদিমের দুটি অর্ধ, প্রথমার্ধে বাকুরা রান্না সংক্রান্ত সহযোগিতায় নিয়জিত হয় এবং দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আহারাদি ও বিশ্রাম সম্পন্ন হয়। এরপর আসে তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ দেরা, দেরাতে বাকুরা সম্মিলিতভাবে আলোচনা করে কিভাবে তাদের পরের দিনের গিদাক ও টিদিম সুসম্পন্ন হবে।“
“ বাব্বা! এতো চাপকিস লাইফস্টাইল! সাধু সন্ন্যাসীরাও তো শুনলে লজ্জা পেয়ে যাবে! তিরিশ বছর ধরে তোমার মালিকদের দিন শুরু হচ্ছে প্রেয়ার দিয়ে। নিয়ে সবাই মিলে চাষ বাস আর ইঞ্জিনিয়ারিং তারপর রান্নাবান্না করে ঘুম ফুম সেরে জনসভা; তারপরের দিন আবার প্রেয়ার আবার চাষবাস! আবার ডেইলির রান্না খাওয়া, ডেইলির ঘুম, ঘুম থেকে উঠে সেই ডেইলির গুলতানি? এরকম লাইফ কাটানো তো স্বর্গ! তা আমকে এখানে কি করতে ধরে রাখা হয়েছে? সার্কাস দেখাবো?” রাজপুত্র গলায় যতটা সম্ভব শ্লেষ মেশানো যায় ততটা মিশিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
“ আপনি যথাযথ বলেছেন উটকো মানুষ, বাকুদের গিদাক ও টিদিম চলাকালীন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি ঠিকই তবে তৃতীয় অর্থাৎ দেরা পর্যায়ে পৌঁছে বাকুদের প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যার সমাধান বাকুদের হাতে নেই আর আপনার প্রয়োজন সেখানেই।“ আলমারি শান্ত স্বরে উত্তর দিলো।
“অঃ! এ তো ভেরি সিম্পিল। এই দেরা চ্যাপ্টারটা স্কিপ করলেই তো হয়। ওই গিদাক তারপর কি যেন? হ্যাঁ ওই টিদিম মানে রান্না আর ঘুম দিয়ে শাটার নামালেই তো হয়। প্রত্যেক দিন জনসভা বসালে কিচাইন তো লাগবেই।“
“ব্যপার টা অতো সরল নয়, উটকো মানুষ। তৃতীয় অর্থাৎ দেরা পর্যায় না থাকলে বাকুরা নির্ধারিত সময়ে গিদাক এবং টিদিম কোনটাই সম্পন্ন করতে পারবে না। বাকুরা খুবই শৃঙ্খলিত। ব্যক্তিচেতনা থাকবার পরেও তারা অপরিবর্তিত থেকেছে এই কারনেই। আমার ওপর আদেশ ছিল আপনাকে বাকুদের জীবন সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেবার। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেরা পর্যায় শুরু হবে। দেরা পর্যায় চলা কালীন আপনার উপস্থিতি একান্ত বাঞ্ছনীয়।“

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।