সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে চার অক্ষর (পর্ব – ৩)

রাজপুত্রের গল্প

আগে যা হয়েছে –
ভগ্নহৃদয় রাজপুত্র তার মিমাস যাত্রাপথের শুরুতেই কথা বলা ব্ল্যাক হোলের কবলে পড়ে। কোনোক্রমে সেখান থেকে মুক্তি পেলেও মিমাসে পৌঁছে সে আটক হয় বাকু বলে এক প্রায় বিস্মৃত প্রাণীদের হাতে। বাকুদের মোড়ল রাজপুত্রের অভিপ্রায় জানতে চায়। রাজপুত্র তার রামকাহিনী গড়গড় করে উগড়ে দেবার প্রাক্কালে কথাবলা ব্ল্যাকহোলের প্রসঙ্গ টানতেই বাকুদের মধ্যে মৃদু হইচই পড়ে যায়…
কি কুক্ষণেই না মিমাসে আসার কথা রাজপুত্রের মনে ডালপালা মেলেছিল। কোন স্বর্গলাভের আশায় এতো জায়গা থাকতে রাজপুত্র মিমাসকেই পছন্দ করলো ভগবানও কি তা জানেন? এই জন্য বলে মদ খেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নেই, পরামর্শ দিতে নেই। এখন বোঝো ঠ্যালা। আর বাকুদেরও বলিহারি। দৈত্যগুলো গোটা ব্রহ্মাণ্ডে আর জায়গা পেলো না?!!! দৃশ্যত কাচুমাচু মুখটা বজায় রেখে রাজপুত্র মনে-মনে নিজের আর বাকুদের প্রতি খিস্তির বেশ বড়সড় একটা বজরা ভাসিয়ে দেয়। সম্বিৎ ফেরে, বাকু মোড়লের প্রশ্নে।

“ উটকো মানুষ, তুমি যা বলছো? তা কি সত্যি? আমাদের সঙ্গে ফাজলামো মারলে তোমার যা হবে তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।“

রাজপুত্র যতটা সম্ভব দাঁতকিড়মিড় লুকিয়ে নরম গলায় বলে, “বিশ্বাস করুন স্যার, মাইরি বলছি ওই ভুতুড়ে ফুটোটার থেকে বেরিয়ে আমার নিজেরও অনেক্ষন বিশ্বাস হচ্ছিলনা যা হল, সত্যি-সত্যি? না ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্ন-ফপ্ন দেখছিলাম? এ-এই দেখুন… চিমটি কেটে কেটে লাল হয়ে গেছে হাত। আপনি আমার স্পেসশিপের কম্পিউটার কে জিগ্যেস করুন … রেকর্ড দেখুন… আর আমি সত্যি –ই জানতাম না আপনারা যে মিমাসে আছেন … আমি তো নিরিবিলি ভেবেই…”

“তুমি আমাদের ব্যপারে কতটা জানো?” রাজপুত্র কে থামিয়ে বাকু মোড়ল আবার প্রশ্ন করে।

“আপনারা খুব বীর। সবাই আপনাদের সম্মান করে … “
“কারা সম্মান করে?”
“সবাই করে… আমিও করি, একদম ছোটোবেলা থেকেই করি”
“আর? সম্মান করা ছাড়া আমাদের বিষয়ে আর কি জানো তুমি ”
“স্যার আমি … আসলে ইয়ে মানে ইতিহাসে খুব একটা ভালো কোনোদিন-ই ছিলাম না। সত্যি বলতে কি, বাকুদের ব্যপারে আমি যা জানি সেটা না জানার মতই। আমি কথা দিচ্ছি এখান থেকে বেরিয়ে…”
“এখান থেকে তুমি কোথাও যাবে না উটকো মানুষ” বাকুমোড়ল রাজপুত্রকে আবার থামিয়ে বলতে শুরু করে, “ তুমি ভাবছো মহান বিজানটার থেকে এখানে তুমি পৌঁছেছো তোমার ইচ্ছায়? সেটা তোমার ভুল ধারণা। মহান বিজানটার তোমাকে এখানে পাঠিয়েছে আমাদের জন্য।“
মোড়ল এই কথা বলা মাত্রই বাকি বাকুরা পা দিয়ে একসাথে মাটিতে লাথি মারতে শুরু করে দিলো যার সম্মিলিত রকম মানে দাঁড়ায় “বটেই তো, বটেই তো!” বাকু মোড়ল হাত তুলে সবাই কে থামতে ইশারা করে আবার ভাষণ শুরু করে –
“ আমরা ভাবতাম আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল টানুকাদের হাতে। সবাই বলতো আমরা টানুকাদের শেষ আবিষ্কার এবং শ্রেষ্ঠতম। প্রথম থেকে আমরা দেখে আসছি লোভী এবং মূর্খ জাতি তোমরা সবাই। তোমাদের বিবাদ, তোমাদের বিপদ, তোমাদের শত্রুতার মাঝখানে আমরা কখনো ঢাল, কখনো তরোয়াল হয়ে এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়াতে হাত ফেরতা হয়েছি। অগুনতি নক্ষত্র পেরিয়েও আমরা জানতাম না, আমরা কাদের মারছি কাদের বাঁচাচ্ছি। প্রশ্ন করিনি কাউকে।কেউ প্রয়োজন-ও মনে করেনি আমাদের যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু ভাববার। আমরা শুধু হুকুম তামিল করেছি। তোমাদের জাতির হয়েও আমরা যুদ্ধে গেছি। যুদ্ধ আমাদের সংখ্যাকে কোটি থেকে লাখ, লাখ থেকে হাজারে কমিয়ে এনেছে আর এভাবেই আমরা তোমাদের জন্য পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যেতাম যদি না মহান বিজানটার আমাদের পথ দেখাতেন। আজ মহান বিজানটার তোমাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের প্রার্থনা উনি শুনেছেন। এবার তুমি আমাদের কথা শুনবে। আমাদের কথা শুনলে তোমার কোনো ভয়ের কারণ নেই।“
রাজপুত্র থম মেরে বাকু মোড়লের তিন পিস ঠাণ্ডা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দুহাত জড়ো করলো – “ স্যার আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আমরা এক নম্বরের উদগান্ডু এবং খারাপ। কিন্তু মিস্টার বিজানটার বলে আমি কাউকে চিনিনা, আমার নিজের ভুলে আমি এখানে এসে পড়েছি তবে আমাকে এখন যদি যেতে না দেন অন্তত কি করলে আমি এখান থেকে যেতে পারবো সেটা বলে দিন, আমার দ্বারা যতটা যা করা যায় সব করবো।“
গোটা বাকু সভা চুপ। রাজপুত্র নিজের হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ শুনতে পারছে। এতো টেনশান, কারণ বাকু মোড়লের উত্তরের ওপর নির্ভর করছে রাজপুত্রের এই নতুন বন্দিদশা সাময়িক না লাইফটাইম।
বাকুমোড়ল রাজপুত্রের কথার সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে আদেশের সুর বজায় রেখে বলল,
“তুমি দূর থেকে এসেছ। ক্লান্ত। বিশ্রাম নাও। তোমার সুবিধার জন্য আমি তারগি৬৭ কে দিলাম। তুমি চালাক লোক । তারগি তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারবে।“
মোড়লের কথা শেষ হতে না হতেই রাজপুত্রের পেছন থেকে চাকা লাগানো একটা আলমারি নিজের থেকে রাজপুত্রের সামনে ঘুরে এসে দাঁড়ালো আর সেকেন্ডের মধ্যে সেই আলমারি থেকে একটা টিংটিঙে নল বেরিয়ে রাজপুত্রের ঘাড়ে আলতো করে পিনের মতন কিছু একটা গেঁথে দিলো। গোটা ঘটনাটা এতটাই দ্রুত হল, যে জ্ঞান হারানর আগে রাজপুত্র “ওঁক!” ছাড়া কিছু বলবার
সুযোগ-ই পেলো না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।