সম্পাদকীয়

আমি তনিমা হাজরা। লিখি কবিতা, গল্প, অনুগল্প, মুক্তগদ্য, প্রবন্ধ।
নারীমাংসের মতো সস্তা মাংস আর নেই।
কি রাজনীতি, কি সমাজ, কি ভোগবাদ, কি বিজ্ঞাপন, কি বিনোদন, কি সাহিত্য, কি সংসারপ্রবাহ সর্বত্রই নারী অতি পুষ্টিকর আমিষ খাদ্য।
শিশু থেকে বৃদ্ধা যে কোনো বয়সের নারী ধর্ষিত, শোষিত, জ্বলিত,দহিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিছু ধর্ষন, শোষণ, জ্বলন,দহন তীব্র গতি, প্রকাশ্য, কিছু ধীর গতি, নিভৃত এবং গোপন।
বস্তুত এই দহন থামবে না। কারণ এটি একটি নগ্ন সত্য যে কা-পুরষ বলে যেমন একটি শব্দ আছে , কা-নারী বলে কোনো শব্দ কিন্তু অভিধানে নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নেই?
আজ পর্যন্ত কোনো দেশে কোনোদিন এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে দেখাতে পারবেন কি, যেখানে পাঁচজন মহিলা মিলে একটি পুরুষকে যৌন আক্রমণ করে পাপ লোপাট করার জন্য পুড়িয়ে মেরেছে?
আমার মনে হয় এখনো এমন ঘটনা ঘটে নি।
কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষে সেই সতীদাহের দোহাই দিয়ে থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত ধর্ষনের ক্রাইম বিলোপ করে দেবার প্রচেষ্টা অব্দি জ্যান্ত ও অত্যাচারিত নারী পোড়ানো একটা আবহমান লজ্জাজনক সত্য।
কাপুরুষের মতো ঘৃণ্য জন্তু জানোয়ার আর কিছু নেই।
ক্রাইমের উৎস সন্ধান করতেই যদি চাই তবে একই জঘন্য পরিবেশে বড় হয়ে একটি মহিলা একটি পুরুষের মতো ধর্ষক হয়ে ওঠে না কেন?
তার কারণ আমাদের সমাজব্যবস্থা, আমাদের নারীকে পণ্য করার প্রবণতা, নারীমাংস ব্যবসায় নারীর নিজস্ব মদত। হ্যাঁ অত্যন্ত দায়িত্বশীলভাবে দুঃখের সাথে, লজ্জার সাথে এটা একজন নারী হিসেবে আমাদের স্বীকার করে নিতে বাধ্য হতে হয়। একজন নারী কেন ইঁদুর মারা বিষের বিজ্ঞাপনেও স্তনাংশ দেখিয়ে নিজেকে লুব্ধজনকভাবে প্রকাশ করে দাঁড়ায়? নেটদুনিয়ায় এখন তো নিজেকে প্রদর্শন করে নারীর বেশ্যাবৃত্তি একটি প্রচলিত পেশা। এইসব কুকাজের প্রভাব পড়ে ভুগতে হচ্ছে আর পাঁচটা সাধারণ রুচিশীল মেয়ের ওপরেও। কারণ বিকৃত রুচির পুরুষকে এই কু-নারীরাই পরোক্ষে একটি সমগ্র নারী জাতির বিরুদ্ধে লুব্ধ করে তুলছে। তারা বোধবুদ্ধিহীনভাবে সবার ওপরে আক্রমণ চালাচ্ছে।
যতদিন আমাদের এই মানসিকতা, নারীকে নিয়ে এই বাজারি মনোভাবের পরিবর্তন না হচ্ছে ততদিন মোমবাতি জ্বালিয়ে ন্যাকামো এবং নেটদুনিয়ার ফেক বিপ্লব করে গরমগরম বুকনি ঝেড়ে কোনো লাভ নেই।
হ্যাঁ আপনি, আপনাকেই বলছি, যিনি নিজেকে অত্যন্ত সভ্য, সুশিক্ষিত পুরুষ বলে সাদা আলোয় পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনিও একজন নারীকে তার শরীর দিয়েই মাপেন নিজের অজান্তেই, এটা আপনার মধ্যে একটা প্রথিত জিনগত বৈশিষ্ট্য। খুব সংগোপনে নিজেকে কথাটা একবার জিজ্ঞাসা করে নিন।সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে হবে না।
যিনি এই বৈশিষ্ট্যকে নিজ রুচি, বিবেক ও শিক্ষা দিয়ে আয়ত্তাধীন রাখতে সক্ষম তিনি অধর্ষক আর বাকিরা সুপ্ত ধর্ষক।
আর এই সুপ্ত ধর্ষকদের মধ্যে যারা হঠাৎ একটা সুবর্ণসুযোগ পেয়ে যান এবং তার সদ্বব্যবহার করে ফেলেন তিনি ষ্ট্যাম্প মারা ধর্ষক আর যিনি সেই ধর্ষনের পাপ লোপাট করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মেয়েটিকে প্রাণে মেরে ফেলেন তিনি একজন খুনি।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।