“টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী।
হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী।।
বেঙ্গ সংসার বডহিল জাঅ।
দুহিল দুধু কি বেন্টে ষামায়।।”
(অর্থ: টিলার ওপরে আমার ঘর,(সেখান) কোনো প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নেই, (অথচ) নিত্য অতিথি আসে। বেগে সংসার বেড়ে চলে (অথবা অঙ্গহীন সংসার বেড়ে চলে)। যে-দুধ দোহানো হয়েছে তা কি আবার ফিরে গাভীর বাঁটে।) হাজার বছর আগের এক বাঙালি কবি জীবনের মর্মস্পর্শী এই অভাবের চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর পদে – এর ভিতর কী গূঢ় তত্ত্বকথা আছে সে বিশ্লেষণে আমি যাব না,বা সে বিশ্লেষণে ব্রতী হওয়াটাও আমার লক্ষ নয়। আমি বলতে চাইছি এক প্রান্তিক মানুষজনের জীবন-যন্ত্রণা কথা। নিজেরই ঘরে ভাত নেই যাদের।”খাদ্যের সারিতে প্রতীক্ষায় ” যাদের কালক্ষয় হয়, তারাই জানে সংসার বড় হলে অভাব কতটা বিপদ সীমার ঊর্ধ্বে বইতে থাকে।যদি আমরা ধরে নিই এই পদ আসলে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্ম বেদনা তাহলেও বোধ হয় ভুল হবে না। এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের অবস্থান তো দারিদ্র্য সীমার নীচে। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। দেশ ভাগের দগদগে ক্ষত আজও তো মিলিয়ে যায়নি। যা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে হাড়-হাভাতে মানুষ। যাবতীয় অস্তাচলের অন্ধকার ঘিরে ধরে প্রান্তিক জীবনকেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-ই হোক কিংবা উদ্বাস্তু ক্ষরণ হয়তো বা যাবতীয় যুদ্ধ শেষের বিষণ্ণ হাওয়া।
সংকীর্ণ রাজনীতির আবহে আক্রান্ত হয় মানবতা।ক্ষমতার দম্ভ তো মানুষের কান্না শুনতে পায়নি কখনও! কারা ছড়িয়ে দিল ফিস্-ফাস্ ! যে মৃত্যু রেখে গেল প্রশ্ন! তুমি তো তার উত্তর জানো! সকল কোলাহলের ভেতর তো তোমার সুখানুভব। অথচ জানো মানুষ যে কাঁদছে বড়! কোথাও কী আছো কেউ? দাঁড়াও, তাদের পাশে। চলো, চলো অল্প সামর্থ্য আর বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে ওদের পিঠে হাত রেখে বলি, “ভয় কী, আমরা তো আছি… “