• Uncategorized
  • 0

শিক্ষকদিবসে চন্দ্রানী বসু

১৯৭৮ সালে জন্ম। কাঁচড়াপাড়ায় ও কল্যাণী শহরে বড় হওয়া। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্য-চর্চার শুরু। মাঝে বেশ কয়েক বছর বিরতির পর আবার এই জগতে প্রবেশ। নানা পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

পাঁচ’ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষক দিবস। সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে পেরিয়ে এলাম আট বছর। হ্যাঁ শিক্ষিকা হিসেবে ২০১১ সালে আমার যোগদান, না তার আগেও বাড়িতে গৃহশিক্ষিকার ভূমিকা পালন করেছি আরো বছর পাঁঁচ। সরকারি তকমা পড়েছিল ২০১১ তে কৃষ্ণনগরের চাপরা সাউথ ব্লকের ভাতছালা প্রাথমিক বিদ্যালয়।

একটু ফিরে দেখতে বেশ লাগে….

প্রথম চাকুরির প্রথম দিন…. স্বাভাবিক ভাবেই খুশী মনেই থাকার কথা।আমি যাচ্ছিলাম ও তাই……যদিও বাড়ি থেকে স্কুল যেতেই সময় লাগত সব মিলিয়ে চারটি ঘন্টা।সুখকর খুব নয় যদিও।তবুও চাকুরী বলে কথা….তার উপর বাঙালীর   লোভনীয় সরকারি চাকুরী…. !! তো যাইহোক…..ট্রেন…দুটি বাস ও ভ্যান সব টপকে  যেখানে পৌছালাম সেটি হচ্ছে একটি অনামী নদী….প্রায়।৫০০ মি চওড়া বুক নিয়ে দিব্যি বিভীষিকা  হয়ে আমার সামনে বয়ে চলেছেন।এই দিনটির আগে অবধি আমার জানা ছিল …..নদী আমার ভীষণ প্রিয়।এবার সব ভুলতে শুরু করলাম…..কারণ নদীটি টপকাতে হবে একটি সাঁকো দিয়ে।আর সেটি কতগুলো বাঁশ দিয়ে তৈরী….ভেঙে পড়ি পড়ি অবস্থা।বাঁশ গুলি কোনোক্রমে লাগানো আছে….প্রায় একফুট দূরে দূরে।নীচে তাকালে মাথা ঘুরছে….আর ওপরে তাকালে….নদীর বুকে আদর প্রাপ্তি।এমত অবস্থায় আমার কান্নাকেই একমাত্র আপন বলে মনে হল……এবং আমি স্কুল যাব না …..আমি বাড়ি যাব  …….বলে পরিত্রাহি কান্না জুড়লাম।যারা আমার পাশ দিয়ে স্কুল যাচ্ছিল তারা এরূপ অবাক কোনোদিন হয়েছে বলে বোধ হল না।যদিও আমার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তাতে ।আমার তখন একটিই উদ্দেশ্য যে কোনো উপায়ে আমার বাবাকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া।কিন্তু  বাবাও নাছোড়বান্দা।অবশেষে বাবারই জয় …..হাতটা শক্ত করে ধরে একরকম টানতে টানতে সাঁকো পার করলেন।আর আমি কাঁদতে কাঁদতে ……..

 সেদিন মনে হয়েছিল বাবার থেকে কঠিন মানুষ আর কেউ নেই…..কিছুদিন পরে অবশ্য বাবাকে বলেছিলাম…..ভাগ্যিস বাবা তুমি আমার সাথে ছিলে।…..বাবা শুধু হেসেছিল।

এরপর একটি ভ্যানের ব্যবস্থা হয় অন্য রাস্তা দিয়ে….আমি ও অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি ওই সাঁকোর সাথে।ন’ মাস  ভ্যানে চড়ে যাওয়ার ও প্রচুর স্মৃতি আজ খুব মনে পড়ছে।
এই সময়ের একটা  কথা খুব মনে পড়ে। বাচ্চা একটি মেয়ে।নাম রাধিকা। চতুর্থশ্রেণী।স্কুলে প্রায়ই আসত না। কিছুতেই কারণ ও বলত না।হঠাৎ শিক্ষক দিবসের দিন একটি কলম উপহার নিয়ে হাজির।আমি ওর অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে উপহারটি নিতে রাজি হলাম না। একটু পরে ওর এক বন্ধু আমায় জানাল- ও স্কুলে আসতে পারে না কারণ ও পাট থেকে দড়ি বের করতে যায়।ওর বাড়ির সবাই।নইলে ওরা খেতে পাবে না।আর সেদিন ও সকাল থেকে পাট তুলে ছয় টাকা পেয়েছিল।তিন টাকা বাবা কে দিয়ে বাকি তিন টাকা দিয়ে ওই কলম টি কিনে এনেছে।আমার জীবনের সবচেয়ে দামী উপহার। আজও লেখা হয় নি এ কলমে।….

ন’ মাস পর আমার বদলি হয় বর্তমান স্কুলে।চলে আসার দিন ও একা পুরো রাস্তা ভ্যানে বসে নীরবে কেঁদেছিলাম….. যাওয়া আর আসা দুটোই বড় অদ্ভুত।

এই আট বছরে কর্মক্ষেত্রে যাদের আমি নানা ভাবে পাশে পেয়েছি তাদের সকলকে আমার ভালোবাসা….ভালোবাসা সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে।ভালোবাসা আর অসীম কৃতজ্ঞতা ভাতছালা গ্রামের সকল মানুষের প্রতি যাঁরা আমায় দুপুরের খাবার দিতেন ন ‘ মাসের প্রতিদিন।……. সবাইকে নিয়ে আরো আরো অনেকটা বাকি পথ চলতে চাই।
অপরাহ্ণের আলোয় নিজেকে মেলে ধরি
স্মৃতির সরণী বেয়ে বারবার পিছনে ফিরি ….
ভালোলাগা মনখারাপের নেশা লাগে বড় …
মন….জানি তুমি এ নেশাতেই বারবার মর!!!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।