রম্য রচনায় ইন্দ্রাণী ঘোষ

বন্ধুতা

বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না যাদের তাদের বড় জ্বালা. বন্ধুত্ত্ব কি ও কেমন সে ভাবতে গিয়ে আকাশ, পাতাল এক করে ফেললেও যেন মনে হয়, এক জীবন কেটে গেল তবু বুঝলাম না বন্ধুত্ত্ব কি? সে কি এক খোলা জানালা, না কি জানলা দিয়ে ঢুকে আসা এক ফালি নীল রুমালের মত আকাশের এক বিস্তৃতি. সে ছোট তবে তাঁর ব্যাপ্তি বিশাল.
এই যেমন কোন বান্ধবীরা নরম সরম মনের. তাদের জীবনে ছায়া ঘেরা বাতায়ন. মরুভুমির তীব্র উত্তাপ তারা দেখে নি কখনো. তাদের সান্ন্যিধ্যতে কেমন গ্রীস্মের দিনের শীতল পাটির আরাম. বহুদুর থেকে হেঁটে এসে কুজোর জলে তেষ্টা মেটানোর আরাম. কাঁথার কাজে রঙীন ফুল তুললে সেই বান্ধবীর মুখখানি যেন ভেসে ওঠে. নক্সি কাঁথায় গল্পের খোঁজে তাঁর সাথে দুপুর গড়ায়. হাসির জুঁই ফুল ছড়িয়ে পড়ে গল্পের অলিতে গলিতে. এমন বান্ধবী আমার আছে বই কি.আমি এদের নাম দিয়েছি ‘ঝোরখা’ বন্ধুনি.
আরেক রকম বন্ধু, বান্ধবী দুই আছে যারা চৈত্র মাসের সন্ধ্যে বেলার ছাদের উপর মলয় বাতাস যেন. কাছে দাঁড়ালেই, আমের মুকুলের সুবাস মাখা আদর বুলিয়ে দেয়. ক্ষিদের মুখে ভাতের গরাস গালে তুলে খাইয়ে দেয়. জীবন যুদ্ধে তেতে পূড়ে, হেরে গিয়ে তাদের কাছে বসে দু ঘন্টা ধরে বাজে ঘ্যান ঘ্যান করে গেলেও তঁারা কখনো চুলচেরা বিশ্লেষণে যাবে না. ‘যা হবার হয়ে গেছে’ বলে ঠান্ডা পানীয়টি হাতে ধরিয়ে দিতে পারে. এরা হল হাল ফ্যাসনের ভাষায় ‘কুল ডুড’. আরেকটু আগের প্রজন্মের ভাষায় ‘স্থিতধী বন্ধু’.
আরেকদল আছে যারা হাসের মত ভেসে থাকে বন্ধুত্বের সায়রে উপরিভাগে. কখনো, সখনো টুপুস করে ডুব দিয়ে তুলে আনে নিজের পছন্দের মাছটি, শামুকটি. বেশি গভীরে সন্তরণ নৈব নৈব চ. তুমি তাদের সাথে সাঁতার দিয়ে ভেসে থাকতে পারলে থাক না পারলে থেকো না. তারা ফিরেও দেখবে না. এদের বলা যেতে পারে ‘হংস চরিত বিলাসি’ বন্ধু. মন্দ লাগে না এদের সঙ্গ.
আরেক দল আছে প্রখর মেধাবী, চৌখস জীবনের প্রতিটি চালে. উদ্দামতার আড়ালেও আছে প্রচন্ড হিসেবী একটা মন. এদের হৃদয় বত্ত্বায় বেহিসিবের কোন জায়গা নেই. এদের আমি নাম দিয়েছি ‘খাজাঞ্চী ‘. এতটুকু হিসেবে ভুল চুক এদের হয় না.হিসেব কসার সময় এদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ. এরা বারবার মনে করিয়ে দেয়, চোরা বাঁকে বেসামাল হলেই সোজা খাদে.
আরেক দল আছে দামাল বাতাসের মত. এরা এলে সমস্ত উড়িয়ে, পুড়িয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যায়. যখন আসে তখন অমল, চারুর সেই ঝড়ের রাতের রসায়নের কথা মনে পড়ে. খড়খড়ি দেয়া দরজা, জানালা হাট করে খুলে যায়. এরা সেই পাগল হাওয়া যারা জাগাতে পারে অন্তরের প্রদীপ খানি. যে আলোর পরশে জেগে ওঠে অন্তরের অন্দরমহলের অলিন্দ. বন্ধুত্বের পানসি বেয়ে এদের যাত্রা সেই গভীর সমুদ্রে যার নাম ‘প্রেম’. এদের যাত্রাপথে ঝরে থাকে অজস্র রক্তকরবী. হৃদয়ের লহিত কনায় রাঙানো অজস্র রক্তকরবী. এই রক্তিম আস্ফালনে লজ্জা পায় ভোরের রবির লালিমা. এই রক্তিম উদ্ভাসেই বন্ধুত্বের উত্তরণ ঘটে প্রেমে. এদের নাম তাই অবশ্যই “রঞ্জন’.
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।