মেহেফিল -এ- শায়র মুক্তগদ্যে মানিক বৈরাগী

পরীর মাঠে বাদামী গাছ

শীত ঘাসকে ভালবাসে, না ঘাস শীতকে ভালবাসে। শীত ও ঘাস নাকি যুগল যৌণ জীবন। ঘাস আর লাল পিপঁড়া দখলে থাকা আবার কোথাও তাজা গোবর থেকে ধোঁয়া উড়ছে। কাঠ বাদাম গাছটি এখনো স্বসাহসিকতায় দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি কোণে। রাতে ভয়ে তেমন কেউ আসেনা এখানে। বাদাম গাছের বিভিন্ন ঢাল শাখা উপ শাখায় জ্বীন পরীর নাচন খেলা হৈহুল্লুড় চলে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছি বাদামতলায়। কুকুর বা শয়তান পথিক কতবার ঘুমের মধ্যে মুতে দিয়ে গেছে। অনেকেই পীর ফকির মনে করে আলো পটল আধুলি মাদুলি রেখে গেছে। স্বাভাবিকতার বিপরীতে হাসতে হাসতে পরের পুকুরে গোসল করে পাক পবিত্র হয়েছি। পদ্ম ফুলের রহস্য খুঁজতে গিয়ে তলপেটর নুনুতে আস্ত মৈষা জোঁক দিব্যি রক্ত চুষে নিচ্ছে। সাপ ভেজি খেলা দেখতে দেখতেই ভুলে গেছি নুনুতে জোঁকের ক্ষত।অনেক দিন নুনুর  ঘা শুকায়নি। বন্ধুরা ঠাট্টা মশকারিতে বলছে, তুর নুনু গেছে, বউ পাবিনা। এসব আমি কিছুই মনে করিনি। রক্তচোষা জোঁকের স্বভাব। একদা যারা বেশ্যার দালালি করতে করতেই শ্রমিকের অর্থ শোষণ করে অনায়াসে সমাজপতি হয়ে গেছে। কোর্ট কাছারি থানা পুলিশের নির্লজ্জ্ব মুসাহিবী করছে, মাদক পাচার করে পবিত্র মসজিদের দানবীর পদ অলংকরণ করে, বাহাবা নিচ্ছে বেলজ্জার মতো। স্বশ্রুতে পানের পিক ঝুলছে, পাঞ্জাবি তে পানের পিক,অথচ ভাদ্র মাসে কুকুর কুকুরীর সংগমের দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।তাদের লালা ঝরে। সেসব আমাদের দু কর্ত্রীর ঘাড়ে বসে আছে।
এমনতরো অবস্থা দেখতে দেখতে তাদের  গৎবাঁধা জীবন কে  তুচ্ছ করে যারা পরীর মাঠে শুয়ে থাকে। বাদামতলায় পাতাদের হাসি দেখে। ফুলের মঞ্জুরণে মধুকরের উড়াউড়িতে ঘাসের ডগার শিশিরবিন্দুর ঝরেপড়ার সময় গুনে,কচুপাতা থেকে আবার কয় মিনিটে মাটিতে ঝরে পড়ার সময়ক্ষণ মাপে তাদের মাঝে আমিও একজন।
ধুরন্ধর আমলা ধূর্ত রাজনীতিক যারা প্রতিনিয়ত আলো আধারের গলিতে দেশ বিক্রির সুযোগ সুবিধা-কমিশন ভোগে ব্যস্ত।এইসব দেশপ্রেমিক সমাজসেবীর হাতে একটি প্রজাপতিও নিরাপদ নয়। তারা কখনো বুঝেনি প্রজাপতির রঙ ভিন্ন ভিন্ন  রূপ কেন? তারাই তো আবার  উত্তরমেঘ পূর্বমেঘ কে এক ঘাটে এনে বাঘ ও মহিষের জল খাওয়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। আমিও আমাদের এরকম কোন স্বপ্ন ছিলনা বিগত চল্লিশ  বছর। তারাও চায়না আগামী দু’শ  বছর আর কেউ স্বপ্ন দেখুক।  এমন জীবিত জড়দের দেশে ভাঁড় হওয়ার স্বপ্নও দেখিনি আমি,না অতীত,না বর্তমান না ভবিষ্যতের।
কবিতার পান্ডুলিপি জমতে জমতে হয়তো উইপোকাঁর দখলে গেছে সব। কর্পোরেট পত্রিকার গোষ্ঠীবদ্ধ সম্পাদকের স্তুতিবাক্য ছাপানো ছাড়া  অন্য কাজ জেনেও তারা করেনা তারা। এখানেও চরম মেধা নৈরাজ্যের কালাকাল। অথচ আমার সামনে ঝাউয়ের পাতারা গান গাইতে মাঝিকে পথ দেখায়।
এমন রহস্যের কাছে কান পেতে আমার  পার হয়ে যায় বেলা। গোরস্তানের ফসফরাসের ছুটোছুটিকে ক্ষনিক সাপের পা দেখার মতো চেয়ে থাকি ফসফরাসের দিকে । এটা কোন চলমান ফরমায়েসী মনস্তত্ত্বে  পড়েনা বলেই তাদের  দৃষ্টিতে বা চোখে অকর্মণ্য।
ওই সবুজাভ  বাদামী মাঠে মৃত্তিকার স্তনের  সাথে বুক লাগিয়ে কতকাল আমি ঘুমিয়ে থাকি। গোধুলির অস্তমিত তীর্যক সূর্যালোক আমাকে কানে কানে বলে বাড়ি যাও। তছনছ হয়ে যাচ্ছে তোমার বিছানা,অগোছালে বই খাতা কলম। তড়িৎ বেগে বাড়ি ফিরে দেখি তরুণির মতো  তরে তরে সাঁজগোঁজ আমার বইয়ের র‌্যাক। এতো দরদ এতো  মায়া হঠাৎ কোন আবেগি মানুষ, তার ভালবাসার উচ্ছ্বাস দিয়ে সাঁজালো, আমি এই অপার ভালোবাসা দেখে  আত্মচিৎকারে কেঁদে উঠেছিলাম।
ক্ষুধা ও অর্থের কাছে নত হতে হতে যাদের কাছে বই গুলো অর্থহীন। চুলার জ্বালানি। অথচ কে সে ভাবতে ভাবতে আমি বোবা বালকের মতো, ছল ছল চোখে খাঁচার পাখির মতো কেঁদেছিলাম।
এসব স্বপ্ন  গণ হাসপাতালে ফ্লোরে ঘুমুতে ঘুমুতে স্বপ্নের ভেতর কান্না করেছি। অত:পর আমিও সে পরীর মাঠে সবুজ বাদামে ঘাসে শুয়ে আছি।

পুঁজির নিপীড়ন সময়ে তারা আজকাল লাবণ্যকে ভিত্তি করে অন্য অনেকের মতোই সময়ের ভেলা ভাসাতে পারতো। আরোপিত আলোক জ্বেলে জলে ও স্থলে । আমিও বা কেমন পুরুষ আস্ত একটি ডিমের ঝুলের তরকারিতে মরু মানুষের মতোন গাপুসগুপুস গলাদকরণ করছি। মার্কসের লাল চোখ  স্বশ্রুমন্ডিত অবয়বে হেসে বলছে  তুই ডাস ক্যাপিটাল পড়েছিস?
আমি এর কোন মহাত্ম্য বুঁঝেনি, পাইনি এমন কোন অর্থ। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ জীবিত জড়দের কাছে কি প্রতিক্রিয়ায় খেলা করে। জড়বস্তুর সাথে নদী-মিনের কার্যকরণ সূত্রটি কী? তবুও আমার বাদামী জলের সবুজ কলমী লতার ফুলে টুনটুনি পাখি ছুটোছুটি করে। বড়ই গাছের শাখায় কাকের কানেকানে কাক কথা বলে। ঈষাণের ছাতিম গাছের শাখায় ময়নার বাসার কারিগরী প্রশিক্ষণের ভেদ দক্ষতা এখনো কেউ অর্জন করেনি। নৃতাত্ত্বিক ভূ-বিজ্ঞানীরা মায়া শিল্পের রসায়ন এখনো আবিস্কৃত হয়নি। তবে কি তারা অতি মানব ছিল?তাদের সাথে ঈশ্বরের একটা শ্লৈল্পিক মানবিক গুণের সম্পর্ক ছিল হয়তো। অথবা সে সময়ের ঈশ্বর ছিলেন। যৌন শিল্পের অপার আনন্দকে ক্ষুধার তাড়নায় তাড়িত করে রক্তাক্ত করেনি। এখনো পরীর মাঠে নারীর যৌনাঙ্গ দখলের কূপ্রবৃত্তি কে রোধ করতে আধুনিক তালা আবিষ্কারের মেলা বসে। এখানে ও যৌনতা কে পুজি করে পয়সা হাতিয়ে নেয়ার পায়তার।

অস্ট্রো-এশীয় লিমুর প্রাণীর লোমশ অনার্য পুরুষেরা মায়াদের নীল রক্ত  ধারা মিশরের নীল নদের জলে ভেসে গেছে বহুকাল আগে। তবুও আমি আমাদের পরীর মাঠে হেমন্ত উৎসবে কাঠ বাদাম গাছের শাখায় শাখায় লিমুরের ছুটাছুটি দেখি।
আমি কী সেই লিমুরের অনার্য জাত। তবুও বউয়ের বুকে ওম নিতে নিতে বিষাদের শব্দরা পান্ডুলিপিতে জমা হয় কুয়াশার আলোকরশ্নির শিল্প রূপে। যা এখনো আঁকা হয়নি। আমার বাদামী পরীরা এসো চলো যাই  ঘরে । আমার বইগুলো এখনো সাজানো রয়েছে তোমাদের জন্যে।
বাইবেল কোরআনের পাশাপাশি ডারউইনের জাতি প্রজাতির একটি ছবি চক চক করছে। ডারউইন কানে কানে বলছে, তোমার বাদামি মাঠের প্রজাপতিরা যাতে আরো ক’টা দিন থাকে তার ব্যবস্থা করুন।

আমার বাদামী পরিরা এসো  আমি তোমাদের ফেলে চলে যাবো।  পরীরা তোমাদের সোনালি ডানায় ভর করে নিয়ে যাও  আমায় লুসাই চূড়ায়….
শোধন

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।