মেহেফিল -এ- শায়র অনিকেত সুর  

বনলতা সেন ও একটি অপঠিত বার্তা।।

আমার কৈশোরক নিখিলে অগণ্য মেয়ের মুখ
‘বনলতা’ ভ্রমে চোখে বিঁধেছিল; তখন বুঝি নি
কোনও পুরুষের জীবনে শুধু একজন থাকে
এই স্বপ্নঘোর বিধুরতা এবং তার ক্ষণিক
আভাস পেতে বিচূর্ণ নৌকার হালভাঙা নাবিক
হতে হয়। চোখ বদলে গেলে ধরিত্রীরও রঙ
বদলায়। ‘ইউনুস নবী’র মত মাছের পেট
থেকে আস্ত বেরিয়ে দেখি, কেটেছে তিরিশ বছর।
‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ ব’লে একটি রমণী
কৌতুক আর বিস্ময় মেখে অপলক চেয়ে আছে।
‘এতদিন’, ‘এতদিন’… একটা আবর্তে ক্রমাগত
ঘুরপাক খেতে খেতে নিশ্চুপ তলিয়ে গেল আর
আমি স্থিতধী কামনায় ওই রমণীকে জড়িয়ে
ধরে তার গোলাপি ঠোঁটে আমার ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

কেঁপে উঠল বাতাস আর আমি দেখলাম দূরে
সমুদ্রের ওই পারে দিগন্তের সীমায় দাঁড়িয়ে
সেই রমণী; বাঁকা ঠোঁটে কৌতুক, অদ্ভুতুড়ে হাসি।
বিড়বিড়িয়ে কী যেন বলল সে, অতঃপর উধাও
হল চোখের নিমেষে। বনলতা, এই নাম আজো
অমেয় রহস্য হয়ে ঝুলে আছে বুকে, তবু আমি
তার চোখে চোখ রেখে অনিঃশেষ পথ হেঁটে যাব।

(এটি আসলে জীবনানন্দের বহুপঠিত ‘বনলতা সেন’ কবিতার একটি কাব্যভাষ্য নির্মাণের অক্ষম বিনীত প্রয়াস। আমি বলতে চেয়েছি, বনলতা কোনও নারী নয়; সে আমাদের ঈপ্সিত জীবনসুন্দরের অপর নাম। এই কাঙ্ক্ষিত সুন্দর একজন পুরুষের চোখে নারীর অবয়ব ও কোমলতায় ধৃত হয় কিংবা জেগে ওঠে। ক্ষণিকের জন্য, যেন বা আমাদের স্বপ্নঘোরে, সে আমাদের সুমুখে আসে। আর তক্ষুনি আমরা তাকে আমাদের ব্যাকুল দু’বাহুর ভেতর জড়িয়ে নিতে যাই। অথচ বারে বারে সে সরে যায় দিগন্তের অগম্য দিকে। তবু তাকে পাবার জন্য আমাদের দিগন্তযাত্রা কখনও থামে না …)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।