মেহেফিল -এ- কিসসা রানা হেনা

তেল

তেল। বহুকাল অতীত হয়েছে যখন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নামক এক গুণী মহাশয়ের রচিত ‘তৈল’ প্রবন্ধ পাঠে বড়ই তৃপ্ত হয়ে বলেছিলাম, আহা! কী চমৎকার রচনা। অদ্য আমার কোন এক আত্মীয়ের কথা মনে পড়াতে ‘তৈল’ প্রবন্ধটি সম্মুখে এসে হাজির হলো। তা এত কষ্ট করে যখন এসেই পড়েছে, তাকে নিয়ে দুটি না লিখলে বড়ই অপরাধ বোধে ভুগতে হতে পারে। অতএব, কাগজ-কলম নিয়ে বসলাম।
সেই কবে,ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বঙ্কিমবাবু মানুষের তৈল প্রদান নিয়ে বেশকিছু রচনা লিখে বসেছিলেন। আর শাস্ত্রী মহাশয়ের ‘তৈল’ প্রবন্ধ তো অগ্রদূত হয়ে আছে৷ শতাব্দীর প্রতিটি স্তরে মানুষ চমৎকার ভাবে তৈল প্রদানের শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছে। শুধু কি টিকিয়ে রেখেছে? বহু যত্নে, হৃষ্টপুষ্ট করে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে গেছে। চলুন তাদেরকে আজ শ্রদ্ধা ভরে একটু স্মরণ করি।
সেই যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের হাতে ‘তৈল’ প্রদান নামক হাতিয়ার দিয়ে গেল, আজ তার বহুল প্রয়োগ দেখে চক্ষু শীতল করতেই হবে। না করলে আপনি নিমকহারাম হতে বাধ্য এতে নিঃসন্দেহ থাকুন ।
শাস্ত্রী মহাশয় একটু রঙ্গ করেই বলেছিলেন তৈল প্রদানকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষা দানের ব্যাপারে ( তৈল প্রবন্ধে)। আজ তাঁর ইচ্ছে পূরণ হয়েছে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠতে গিয়েও থেমে যাই।
আমাদের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই এই শিক্ষার প্রচার ও প্রসার চলছে বেশ৷ তবে আপনি এটা ভাববেন না যে, আমাদের এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তৈল প্রদানের উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সন্মান প্রদান করা হয়। এটা করা হয় অপ্রাতিষ্ঠানিক ভাবে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকেই তা সুসম্পন্ন করা হয়। এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আপনি দেখতে না পেয়ে হতাশ হতে চাইলেও পারবেন না। কারন, যা দেখা যায় না তা নেই এমন ভাবা বড়ই বোকামি হবে বোধ করি। অনেক সময় যা দেখা যায় না তার প্রভাব অনেকাংশেই বেশি থাকে। তাই আপনার আশার আলো বেশ জ্বলজ্বল করছে দেখে আমি কিঞ্চিৎ নিশ্চিন্ত হলাম।
কী অদ্ভুতভাবে আমাদের সমাজের একটা মোটা অংশ আজ ‘তৈল প্রদান’ চর্চায় ব্যস্ত এবং তাতে তারা বেজায় খুশি। দেশের বড় বড় লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, চাকুরে, শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের সকলে স্তরে এদের দেখা মিলবে৷ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ ‘তৈল প্রদানকারী’ পণ্য উৎপাদন করা হয়, তা যদি কোনোভাবে ভক্ষণযোগ্য হতো–দেশের মহামারীতে তা বড়ই উপযোগ সৃষ্টি করতো বটে৷
এসবকিছু দেখে যদি আপনি একটু অখুশি হন, মনে মনে বলেন, ‘ছিঃ ছিঃ’, তাতে তাদের কিছুই এসে যাবে না। আর এই যে ‘কিছুই এসে যাবে না ‘ এটাই ওদের শক্তি। অবশেষে তারা গলা ছেড়ে গাইবে—
” তৈল শক্তি, তৈল বল –
আমরা তৈল দল “
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।