• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে যশোবন্ত বসু

প্রেম বারবার আসুক না সরবে

‘ কিং লিয়র ‘ নাটকের প্রথম দৃশ্যটি মনে আছে ?
বাদ্যি বাজিয়ে তিন মেয়ে,দুই জামাই আর সাঙ্গপাঙ্গসমেত বৃদ্ধ রাজা লিয়র দরবারে প্রবেশ করলেন। এখানেই এরপর তিনি তাঁর ইচ্ছাপত্র ঘোষণা করবেন।
রাজার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। রাজপাটও সামলেছেন বিস্তর। এবারে মৃত্যুর দিকে চলে যাওয়াটুকুই শুধু বাকি।
মরে যাবার আগে তাঁর সমস্ত সাম্রাজ্য তিনি তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে ভাগ করে দেবেন। রাজত্ব,শাসন ক্ষমতা সবকিছুই।  কিন্তু সেই ভাগের একমাত্র মাপকাঠি হবে ‘ ভালবাসা ‘। ‘ উজাড় করা ভালবাসা ‘।
যে-মেয়ে বাবাকে যত বেশি ভালবাসে, রাজ্যের ততখানি অংশ তার।
শুরু হল ভালবাসার সরব পরীক্ষা।
বড় মেয়ে গনেরিল বলল, বাবা, তোমাকেতো আমি এতটাই ভালবাসি যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কেউই দিতে পারবে না এই ভালবাসার দাম। আমার নিজের জীবন,সম্মান, স্বাস্থ্য,সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি ভালবাসি। এমনকি আমার শ্বাসপ্রশ্বাসের চেয়েও বেশি। মানে ঠিক বলে বোঝানো যাবে না তোমাকে কতখানি ভালবাসি বাবা !
Sir, I love you more than words can wield the matter ;
Dearer than eye-sight,space,and liberty ;
Beyond what can be valued,rich and rare ;
No less than life,with grace,health,beauty,honour ;
As much as child e’er loved,or father found ;
A love that makes breath poor,and speech unable ;
Beyond all manner of so much I love you.
মেয়ের কথা শুনে বাবা আহ্লাদে অস্থির। নিজের রাজ্যের মানচিত্র পেতে খরখর করে সীমানার দাগ টানতে লাগলেন।
এই এখান থেকে শুরু করে এই সব জঙ্গল,গাছপালা,নদীনালা,মাঠ,খেত খামারসহ এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল তোকে আর তোর বংশধরদের দিয়ে দিলাম বাছা !
এবার মেজ মেয়ে রেগান জানাল, বাবা, আমিওতো দিদির মতোই এক ধাতুতে গড়া। দিদিতো একেবারে আমার মনের কথাগুলোই বলল। তবে আমাকেও ওর সমান ভাগ দাও। দিদিতো তবু কম বলেছে। তোমার প্রতি আমার ভালবাসাটুকুই আমার জীবনের একমাত্র আনন্দ,  বাকি যা-কিছু আনন্দ, আমার শত্তুর ! নিজের সমস্ত বোধ,অনুভূতি দিয়ে একমাত্র আমিই তোমাকে প্রকৃত ভালবাসি।
রাজার আহ্লাদ দ্বিগুণ !
এই নে বাছা রেগান, গনেরিলের সমান অংশ তোকেও দিয়ে দিলাম। তারচেয়ে একরত্তিও কম নয়।
এবার, কর্ডেলিয়া, তুই বলতো মা, তুই কি তোর দিদিদের চেয়েও বেশি ভাগ পেতে চাস ?
তবে বল, কতটা ভালবাসিস আমাকে ?
ছোট মেয়ে কর্ডেলিয়া সমস্ত রাজদরবারকে চমকে দিয়ে বলে উঠল,
কিচ্ছু না বাবা। আমি মনে আর মুখে এক। একজন মেয়ের তার বাবাকে যতটা ভালবাসা উচিত,আমি ঠিক ততটাই ভালবাসি বাবা। তারচেয়ে বেশিও নয়,কমও নয়।
Nothing, my lord.
My heart into my mouth : I love your majesty
According to my bond ; no more,no less.
রাজা লিয়র রেগে আগুন !  কী বলছিস কি কর্ডেলিয়া ? যা বলছিস ভেবে বল, শুধরে নে, নিজের ক্ষতি করিস না !
কর্ডেলিয়া খুব শান্ত স্বরে জানাল,
বাবা,তুমি আমাকে পৃথিবীতে এনেছ,পালন করেছ,ভালবেসেছ,তার প্রতিদানে আমি তোমার প্রতি মেয়ের উপযুক্ত কর্তব্যই করেছি। তোমাকে সম্মান করেছি, তোমার কথা শুনেছি আর ভালবেসেছি।
দিদিদের মতো আমি তোমাকে আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালবাসতে পারব না বাবা।  কারণ আমার ভালবাসা আর আদরযত্নের অর্ধেক রাখা থাকবে আমার ভাবী স্বামীর জন্যে। আমি নিশ্চয়ই আমার দিদিদের মতো এমন বিয়ে করব না যাতে ভালবাসার সবটুকু বাবাকেই দিতে হয় ।
CORDELIA : Good my lord ;
You have begot me,bred me,loved me ;
I return those duties back as are right fit,
Obey you,love you and most honour you,
Why have my susters’ husbands,if they say,
They love you all ?
Haply,when I shall wed,
That lord whose hand must take my plight shall carry
Half my love with him,half my care and duty.
Sure,I shall never marry like my sisters,
To love my father all.
লিয়র : এই তোর মনের কথা ?
কর্ডেলিয়া : হ্যাঁ বাবা ।
KING LEAR : But goes thy heart like this ?
CORDELIA : Ay, good my lord .
KING LEAR : So young and so untender ?
CORDELIA : So young, my lord, and true.
লিয়র : দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে,
একটা কানাকড়িও তুই পাবি না !
KING LEAR : Here I disclaim all my parental care,
Propinquity and property of blood,
As a stranger to my heart and me,
Hold thee, from this, for ever.
রেগে আগুন রাজা তাঁর ছোট মেয়ে কর্ডেলিয়াকে নির্বাসন দিয়ে  নিজের রাজ্য বাকি দুই মেয়ের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিলেন।
৪১৪ বছর আগে শেক্সপিয়র এই নাটকটি লিখেছিলেন।
হালের ভারতবর্ষে এইরকম উগ্র ভালবাসার পরীক্ষাটা কি খুব অচেনা লাগছে ?
তফাত শুধু একটাই,  ” কেন তুই তোর দিদিদের মতোই বাবাকে এত বেশি বেশি করে ভালবাসিস না ? ” বলে কেউই কর্ডেলিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে দেয় নি বা ফাটকে পোরে নি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।