• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে বাসু মুখার্জি

হেঁচকির কিসসা

গোপালের পাশে যিনি বসে আছেন তিনি অপূর্ব সুন্দরী। যিনি এই মহিলাকে বানিয়েছেন তিনি বানানোর সময় নির্ঘাত দারুণ মুডে ছিলেন, তাই একদম নিখুঁত করে বানিয়েছেন।  এমন এক সুন্দরীর সঙ্গে লোকাল ট্রেনে পাশাপাশি বসে এতখানি পাড়ি! গোপালের মনে খুশির বিস্ফোরণ ঘটল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হেঁচকি।
গোপালের লাস্ট তিনদিন ধরে নাগাড়ে হেঁচকি উঠছে। এ ওর এক অদ্ভুত রোগ। উঠতে শুরু করলে চট করে থামে না।\
সুন্দরী মেয়েরা খুব রাগী হয়। ইনিও তার ব্যতিক্রম নয়। গোপালের প্রতি তিরিশ সেকেন্ডে একবার করে হেঁচকি উঠছে।হেঁচকির কারণে সারা শরীর নড়ে উঠছে ফলত উনিও সামান্য করে ধাক্কা খাচ্ছেন। এবং তারপর এমনভাবে তাকাচ্ছেন গোপালের দিকে,যেভাবে মানুষ একজন ধর্ষককে দেখে।
সুন্দরী আর থাকতে না পেরে গোপালকে বললেন, “আপনি জল খাচ্ছেন না কেন? অসভ্যের মতো হেঁচকি তুলে যাচ্ছেন?”
গোপাল অবাক হল। সভ্য মানুষ হেঁচকি তোলে না?
বলল, “এটা আমার রোগ। যখন শুরু হয় অনেকদিন চলে। ডাক্তারও দেখিয়েছি। কিছু লাভ হয়নি।”
প্রচন্ড রকমের ভুরু কুঁচকে সুন্দরী বললেন, “তাহলে বন্ধ হয় কী ভাবে?”
— “একটা ভয়ংকর কিছু ঘটনা ঘটলে থেমে যায়।”
সুন্দরী বলল, “আপনি ফাজলামি মারার জায়গা পাননি? আমাকে টিউবলাইট ভেবেছেন?”
গোপাল মনে মনে বলল,আপনি টিউবলাইট নয় আপনি এলইডি লাইট, হ্যালোজেন লাইট।
মুখে বলল, “আমি মিথ্যে বলিনি। বিশ্বাস করা না করা আপনার হাতে। লাস্টবার পনেরো দিন হেঁচকি তোলার পর চোখের সামনে একটা অ্যাক্সিডেন্ট দেখে ঠিক হয়েছিল।”
— “অ্যাক্সিডেন্টে কেউ মারা গেছিল?”
— “না মারা যায়নি ভাগ্য ভাল ছিল তাই। দুটো ট্রাকের মধ্যে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। আমি বাসে ছিলাম। আমাদের বাসটাকে একটা ট্রাক ওভারটেক করছিল আর  উল্টোদিক থেকে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মেরেছিল। প্রচন্ড আওয়াজ হয়েছিল। আর আমার হেঁচকি ওঠাও বন্ধ হয়ে গেছিল।”
.লোকাল ট্রেনে বিস্তর ভিড়। তিনজনের সীটে চারজন করে বসার নিয়ম। ফলে গোপালের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। একবার ভাবল উঠে যায় কিন্তু এত ভিড়, দাঁড়ানোরও জায়গা নেই।
সুন্দরী হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, “আপনারা দেখুন এই ছেলেটা তখন থেকে আমাকে ডিস্টার্ব করছে। সমানে ধাক্কা মেরে যাচ্ছে।”
ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের, বসে থাকাদের ওপর এমনিতেই মারাত্মক রাগ থাকে। তার ওপর এইরকম একজন অপরূপ সুন্দরীকে বিরক্ত করা? ধাক্কা মারা? সে তো একরকম শ্লীলতাহানি!
সবাই গোপালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। “শালা লোচ্চা, লাফাঙ্গা, মেরে হাত ভেঙ্গে লুলো করে দেব।” ইত্যাদি নানান খিস্তিতে ট্রেনের কামরা মুখরিত হয়ে উঠল।
গোপাল বিশাল হকচকিয়ে গেল। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। ওর বাথরুম পেয়ে গেল। বলার চেষ্টা করল যে ও কিছু করেনি। যা একটু আধটু ধাক্কা লেগেছে তা হেঁচকির জন্য।
কিন্তু কে শোনে সে সব কথা।  দু- চারটা থাপ্পড় পড়ে গেল তার সঙ্গে গালাগালি তো আছেই।
হায়রে, আজই গোপালের মনে হচ্ছে শেষদিন! কাল সমস্ত কাগজে খবর বেরবে “লোকাল ট্রেনে শ্লীলতাহানি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ে যুবকের মৃত্যু।”
হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে সুন্দরী চেঁচিয়ে উঠলেন, “থামুন থামুন। মারবেন না। সরে যান সবাই।”
মারমুখী জনতা অবাক হয়ে সরে গেল। কেউ কেউ বলল, “এইভাবেই ক্রিমিনালরা প্রশ্রয় পায়।” “ছেড়ে দেওয়া কোন মতেই উচিত হবে না।”
গোপালের মুখ দিয়ে কোনও কথা বেরচ্ছে না। সুন্দরী বললেন,  “নাহ্ হেঁচকি থেমে গেছে।”
গোপালও সবিস্ময়ে লক্ষ করল, হেঁচকি আর উঠছে না।
সুন্দরী বললেন, “ওই হেঁচকির একঘেয়ে আওয়াজটা আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না, মাথা ধরে যাচ্ছিল। আপনি বললেন ভয়ংকর কিছু ঘটলে বন্ধ হয় তাই বাধ্য হয়ে এটা করতে হল। কিছু মনে করবেন না।”
সুন্দরীর কথা মারমুখী যাত্রীরাও শুনল। তারা হাসতে শুরু করল।
গোপালের রাগা উচিত না আনন্দ করা উচিত, বুঝতে না পেরে থাপ্পড় খেয়ে টনটন করা গালে হাত বুলাতে লাগল..
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।